চ্যানেল খুলনা ডেস্কঃ করোনাভাইরাসের চিকিৎসায় ব্রিটিশ বিজ্ঞানীদের তৈরি নতুন একটি ওষুধের পরীক্ষামূলক প্রয়োগ শুরু করেছে। যুক্তরাজ্যের ল্যান্ডের ইউনিভার্সিটি হসপিটাল সাউথাম্পটনে ৭৫ জন স্বেচ্ছাসেবীর উপর এর পরীক্ষা চালানো হচ্ছে। ওষুধটি তৈরি করেছে ব্রিটিশ বায়োটেক প্রতিষ্ঠান সিনাইরগেন। ভাইরাল সংক্রমণের শিকার হলে তার বিরুদ্ধে মানব দেহে ‘ইন্টারফেরন বেটা’ নামের একধরণের প্রোটিন তৈরি হয়। সিনাইরগেন ওই প্রোটিন ব্যবহার করে ওষুধটি তৈরি করেছে। আগামী জুনের শেষের দিকে এর পরীক্ষার ফলাফল পাওয়া যাবে বলে প্রত্যাশা করছেন গবেষকরা। এ খবর দিয়েছে বিবিসি।
এখন পর্যন্ত বিশ্বজুড়ে সরকারি হিসাবে, করোনাভাইরাসের ছোবলে প্রাণ গেছে অন্তত ২ লাখ ৪৭ হাজার ৯৭১ জনের।
প্রকৃত সংখ্যা আরও অনেক বেশি বলে আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের। আক্রান্ত হয়েছেন ৩৫ লাখের বেশি। এর মধ্যে সুস্থ হয়ে উঠেছেন ১১ লাখ ৩৩ হাজার মানুষ। প্রতিদিন হাজারে হাজারে বাড়ছে মৃত ও আক্রান্তের সংখ্যা। কিছু দেশে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে এসেছে, অন্যদিকে কিছু দেশে সংক্রমণ সবে বিকশিত হতে শুরু করেছে। এখনো পর্যন্ত করোনার কোনো স্বীকৃত কার্যকরী চিকিৎসা, টিকা বা ওষুধ নেই। বিশ্বজুড়ে শতাধিক বিজ্ঞানীর দল টিকা ও ওষুধ তৈরির চেষ্টা করছেন। কিছু সম্ভাব্য টিকার মানব দেহে পরীক্ষাও শুরু হয়েছে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন আগামী বছরের মাঝামাঝি সময়ের আগে কোনো টিকা বাণিজ্যিক উৎপাদনের জন্য প্রস্তুত হওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ।
সিনাইরগেনের নির্বাহী পরিচালক রিচার্ড মার্সডেন বলেন, ইন্টারফেরন বেটা হচ্ছে যেকোনো ভাইরাসের বিরুদ্ধে আমাদের শরীরের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার শুরুর সারির অংশ। তিনি বলেন, করোনা ভাইরাস আমাদের দেহের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে এড়ানোর জন্য এই প্রোটিনটির উৎপাদন বিঘ্নিত করে।
মার্ডসেন বলেন, সিনাইরগেনের ওষুধটি করোনা ভাইরাস আমাদের দেহের যে অংশে অবস্থান করে ঠিক সেখানে এই ইন্টারফেরন বেটা পৌঁছে দেয়। বিজ্ঞানীর প্রত্যাশা, দেহের ভাইরাস আক্রান্ত অংশে এই প্রোটিন সরাসরি সরবরাহ করায় দুর্বল রোগীদের দেহে শক্তিশালী ভাইরাস-বিরোধী ব্যবস্থা তৈরি হবে। ইতিমধ্যে সিনাইরগেনের ওষুধটি এজমা ও অন্যান্য জটিল ফুসফুস-সংক্রান্ত রোগে আক্রান্ত রোগীদের দেহে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা শক্তিশালী করতে কার্যকরী প্রমাণিত হয়েছে। তবী কভিড-১৯ সারাতে এর কার্যকারিতা কঠোর ক্লিনিক্যাল পরীক্ষার আগে নিশ্চিত হওয়া যাবে না।
সিনাইরগেনের ওষুধটির পরীক্ষা করোনার সম্ভাব্য টিক বা ওষুধ খুঁজতে বৃটিশ সরকারের নেয়া এক কর্মসূচির অংশ। করোনার চিকিৎসায় নতুন ওষুধ তৈরির গতি বৃদ্ধির জন্য দ্য একর্ড প্রোগ্রাম হিসেবে পরিচিত ওই কর্মসূচি চালু করা হয়েছে। কর্মসূচিটির আওতায়, সিনাইরগেনের ওষুধটির পাশাপাশি আরো ৬টি ওষুধ নিয়ে পরীক্ষা চালানো হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, গত ডিসেম্বরে চীনের উহানে করোনাভাইরাসের উৎপত্তি হয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) এ রোগকে কোভিড-১৯ নামকরণ করে গত ১১ ফেব্রুয়ারি এবং কোভিড-১৯ মহামারি হিসেবে ঘোষণা দেয় ১১ মার্চ।
এখন পর্যন্ত বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাসে দুই লাখ ৫২ হাজার ৪০৭ জন মানুষের মৃত্যু হয়েছে। মোট আক্রান্ত হয়েছেন ৩৬ লাখ ৪৬ হাজার ১৩৮ জন। এর মধ্যে সুস্থ হয়ে উঠেছেন ১১ লাখ ৯৭ হাজার ৭৪৯ জন। বিশ্বের করোনাভাইরাসের পরিসংখ্যান জানার ওয়েবসাইট ওয়াল্ডোমিটার এসব তথ্য জানায়।