চ্যানেল খুলনা ডেস্কঃকোভিড-১৯ বা করোনা সংক্রমণে বেশিরভাগ মানুষই মারাত্মক পরিণতিতে ভুগছেন না। এটা আমাদের জন্য স্বস্তির খবর। কিন্তু কিছু মানুষদের এই সংক্রমণে মারাত্মক পরিণতি অথবা মৃত্যুর উর্ধ্বমুখী ঝুঁকি রয়েছে।
উচ্চ ঝুঁকির গ্রুপের মধ্যে বয়স্ক মানুষ, হার্টের রোগী, ফুসফুসের রোগী, ডায়াবেটিসের রোগী, লিভারের রোগী, কিডনির রোগী, উচ্চ রক্তচাপের রোগী ও দুর্বল ইমিউন সিস্টেমের মানুষ অন্তর্ভুক্ত। এই গ্রুপে সিএলএল রোগীকেও যুক্ত করতে পারেন। সিএলএল’র পূর্ণরূপ হলো ক্রনিক লিম্ফোসাইটিক লিউকেমিয়া। বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, ক্রনিক লিম্ফোসাইটিক লিউকেমিয়া থাকলে করোনা সংক্রমণে মারাত্মক জটিলতার বাড়তি ঝুঁকি রয়েছে। কিন্তু কেন? এখানে এর উত্তর ও সিএলএল রোগীদের করণীয় সম্পর্কে উল্লেখ করা হলো।
সিএলএল হচ্ছে একটি ক্যানসার যা লিম্ফোসাইট নামক শ্বেত রক্তকণিকাকে আক্রান্ত করে। এসব কোষ সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়তে সহায়তা করে। এগুলো হচ্ছে ইমিউন সিস্টেম বা শরীরের প্রাকৃতিক রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
সিএলএল হলে লিম্ফোসাইট সঠিকভাবে কাজ করতে পারে না। এর ফলে ইমিউন সিস্টেম দুর্বল হয়ে পড়ে ও শরীর সংক্রমণকে পরাজিত করতে ব্যর্থ হয়। সিএলএলের চিকিৎসায়ও ইমিউন সিস্টেম শক্তি হারিয়ে থাকে ও সংক্রমণ জনিত জটিলতার ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়। কোনো সিএলএল রোগী করোনায় আক্রান্ত হলে তিনি মারাত্মক পরিণতির সম্মুখীন হওয়ার বর্ধিত ঝুঁকি রয়েছে।
ইমিউন সিস্টেম ও কোভিড-১৯
চিকিৎসকেরা সিএলএল রোগীর ব্লাড কাউন্ট দেখবেন, বিশেষ করে এই ক্যানসারের চিকিৎসা চললে। ইমিউন সিস্টেম কেমন কাজ করছে তার ধারণা পাওয়ার জন্য এটা করা হয়। চিকিৎসকেরা সিএলএল রোগীদেরকে সংক্রমণের ঝুঁকি কমানোর উপায় ও সম্ভাব্য উপসর্গ সম্পর্কে অবহিত করবেন। করোনাভাইরাস মহামারির সময় এটা বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। প্রয়োজনে ইমিউন সিস্টেমের কার্যক্ষমতা বাড়াতে রোগীদেরকে চিকিৎসা দেয়া হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, আইভি ইনফিউশনের মাধ্যমে শরীরে ল্যাবে তৈরিকৃত অ্যান্টিবডি সরবরাহ করা যেতে পারে। এতে সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়তে ইমিউন সিস্টেমের ক্ষমতা বাড়বে।
কোভিড-১৯ এর ঝুঁকি কমাতে যা করবেন
শুধু সিএলএল রোগী নয়, সকলের জন্য সুখবর হচ্ছে- করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কমাতে কার্যকর উপায় রয়েছে। করোনাভাইরাস প্রধানত ছড়ায় ব্যক্তি থেকে ব্যক্তি, তাই সংক্রমণের ঝুঁকি কমাতে এই পদক্ষেপগুলো অনুসরণ করতে পারেন:
* ২০ সেকেন্ড সময় নিয়ে হাত পরিষ্কার করুন। সাবান ও পানি অথবা ন্যূনতম ৬০ শতাংশ অ্যালকোহলের হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করুন।
* আধোয়া হাতে চোখ, নাক ও মুখ স্পর্শ থেকে বিরত থাকুন।
* লোকজন থেকে ন্যূনতম ৬ ফুট দূরত্বে থাকুন। যতটা সম্ভব ঘরে অবস্থান করুন। অসুস্থ ব্যক্তির সাহচর্য এড়িয়ে চলুন।
* জনসমাগমাস্থলে গেলে নাক-মুখ ঢেকে যান অথবা ফেস মাস্ক ব্যবহার করুন।
* কাশি বা হাঁচি দেয়ার সময় টিস্যু ব্যবহার করুন।
* ঘনঘন হাতের সংস্পর্শে আসা জিনিস পরিষ্কার ও জীবাণুমুক্ত করুন।
কোভিড-১৯ এর লক্ষণ
করোনা সংক্রমণে সবচয়ে প্রচলিত উপসর্গ হচ্ছে:
* জ্বর
* কাশি
* শ্বাসকষ্ট
* শীত শীত অনুভূতি
* পেশি ব্যথা
* মাথাব্যথা
* গলাব্যথা
* স্বাদ বা ঘ্রাণ নেয়ার ক্ষমতা হারানো।
অধিকাংশ করোনা সংক্রমণের উপসর্গ মৃদু প্রকৃতির। এক্ষেত্রে ঘরে অবস্থান করে উপসর্গ ভিত্তিক চিকিৎসা নিতে পারেন। কিন্তু কিছু উপসর্গে জরুরি মেডিক্যাল সেবার খোঁজ করতে হবে, যেমন-
* শ্বাসকষ্ট বেড়ে যাওয়া
* বুকের ব্যথা বা চাপ বেড়ে যাওয়া
* বিভ্রান্তি অথবা সজাগ থাকতে সমস্যা
* ঠোঁট বা মুখমণ্ডলে নীল আভা।