যৌতুকের দাবিতে স্ত্রীকে মারধরের অভিযোগে গ্রেফতার আশরাফুল ইসলাম আলম ওরফে হিরো আলমকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। বৃহস্পতিবার দুপুরে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা বগুড়া সদর থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) আব্দুর রহিম হিরো আলমকে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (সদর) আদালতে হাজির করেন। শুনানি শেষে বিচারক শাহরিয়ার তারিক তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
এর আগে বুধবার দুপুরে হিরো আলমের শ্বশুর সাইফুল ইসলাম খোকন বাদী হয়ে তার বিরুদ্ধে সদর থানায় মামলা করেন। ওই মামলায় রাত সাড়ে ১০টার দিকে বগুড়া সদর থানা পুলিশ হিরো আলমকে গ্রেফতার করে।
মামলায় বাদী সাইফুল ইসলাম উল্লেখ করেন, তার মেয়ে সাদিয়া বেগম সুমিকে (২৮) ১১ বছর আগে বগুড়া সদরের এরুলিয়া পলিবাড়ী গ্রামের আব্দুর রাজ্জাকের পালিত ছেলে আশরাফুল ইসলাম আলম ওরফে হিরো আলমের সঙ্গে বিয়ে দেন। তাদের সংসারে দুই মেয়ে ও এক ছেলে রয়েছে। বিয়ের পর থেকেই হিরো আলম তার স্ত্রীর কাছে দুই লাখ টাকা যৌতুক দাবি করে আসছিলেন। মেয়ের সুখের কথা বিবেচনা করে গত বছরের ২৫ ডিসেম্বর হিরো আলমকে তিনি এক লাখ টাকা দেন। আরও এক লাখ টাকার জন্য হিরো আলম তার স্ত্রীকে প্রায়ই মারধর ও নির্যাতন করতেন। গত ৫ মার্চ (সোমবার) হিরো আলম যৌতুকের দাবিতে স্ত্রী সুমি বেগমকে বেদম মারধর করেন। পরে তাকে চিকিৎসার জন্য বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
বগুড়া সদর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এসএম বদিউজ্জামান জানান, বৃহস্পতিবার হিরো আলমকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
আদালতে হিরো আলমের পক্ষে আইনজীবী ছিলেন অ্যাডভোকেট এস এম মাসুদার রহমান স্বপন। তিনি জানান, নিম্ন আদালত ওই মামলায় হিরো আলমের জামিন না দেয়ায় উচ্চ আদালতে জামিনের আবেদন করা হবে।
বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন হিরো আলমের স্ত্রী সাদিয়া বেগম সুমি জানান, দুই মাস পর গত সোমবার রাতে হিরো আলম বগুড়া শহরতলীর এরুলিয়া গ্রামে তার বাড়িতে আসেন। বাসায় ফেরার পর থেকে বিছানায় শুয়ে একটানা তিন ঘণ্টা মোবাইলে ঢাকার এক নারীর সঙ্গে কথা বলেন হিরো আলম। এর প্রতিবাদ করলে রাতেই তাকে বেধম মারধর করা হয়।
তিনি অভিযোগ করেন, হিরো আলম ঢাকায় দ্বিতীয় বিয়ে করেছেন। এ কারণে বগুড়ায় থাকা স্ত্রী-সন্তানের কোনো খবর রাখেন না এবং সংসার খরচ দেন না। এর প্রতিবাদ করায় এর আগেও তাকে শারীরিক নির্যাতন করেছেন হিরো আলম।
হিরো আলমের শ্বশুর সাইফুল ইসলাম জানান, মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর তার মেয়েকে আবারো নির্যাতন করছে খবর পেয়ে মেয়ের বাড়িতে যান তিনি। সেখানে গিয়ে মেয়েকে উদ্ধার করে রাতেই হাসপাতালে ভর্তি করেন। মারধরে তার মেয়ে সুমির মাথার পেছনে রক্তাক্ত জখম হয়েছে। এ কারণে তিনি যৌতুক ও নারী নির্যাতন আইনে থানায় মামলা দায়ের করেছেন।
এদিকে মঙ্গলবার রাতে হিরো আলম তাকে মারধর করার অভিযোগ এনে শ্বশুর ও স্ত্রীসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ দায়ের করেছিলেন। প্রাথমিক তদন্তেই ওই অভিযোগের সত্যতা পায়নি পুলিশ।
সদর থানার ওসি বদিউজ্জামান জানান, নিজে বাঁচতে সম্পূর্ণ মনগড়া এবং ভুয়া অভিযোগ করেছিলেন হিরো আলম। এ কারণে তার অভিযোগটি মামলা হিসেবে রেকর্ড করা হয়নি।