চ্যানেল খুলনা ডেস্কঃঅভয়নগর উপজেলার শুভরাড়া ইউনিয়নের খানজাহান আলী নূরানী হাফেজী মাদ্রাসা। এই মাদ্রাসারই শিক্ষক মো. ইমামুল হক(হুজুর)। মাদ্রাসায় লেখাপড়া না করিয়ে শিশু শিক্ষার্থীদের দিয়ে গ্রামে গঞ্জে করানো হয় চাল কালেকশন। দিনভর চাল কালেকশন করে শিক্ষার্থীরা যে যার মত বাড়ি চলে যায়। বাড়ির খেয়ে বনের মোষ তাড়ানোর মতো তারা মাদ্রাসায় পড়তে এসে শিক্ষকের নির্দেশে চাল ও টাকা কালেকশন করে। এই মাদ্রাসারই ১০ বছর বয়সের শিশু ছাত্র মো. রমজান মোল্যা শিক্ষকের হাতে নির্মম নির্যাতনের শিকার হয়ে হাসপাতালের শয্যায় কাতরাচ্ছে।
টানা রোদে দিনভর কালেকশন করে ক্ষুধার্ত ও ক্লান্ত রমজান কালেকশনের টাকা থেকে ১০ টাকার খাবার কিনে খাওয়ার অপরাধে ওই মাদ্রাসার শিক্ষক নামধারী পাষা- ইমামুল তাকে বেধড়ক পিটিয়ে জখম করেছে। স্থানীয়রা এহেন ন্যাক্কারজনক ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে প্রশ্ন তুলেছেন“ উনি (শিক্ষক ইমামুল) শিক্ষক নাকি অমানুষ?”। ঘটনাটি ঘটেছে সোমবার দুপুরে খানজাহান আলী নূরানী হাফেজী মাদ্রাসায়।
বাশুয়াড়ী গ্রামের ভ্যানচালক মো. আজানুর মোল্যার ছেলে আহত রমজান মোল্যা। আহত রমজান মোল্যা কাঁদতে কাঁদতে বলেন, হুজুর ইমামুলের নির্দেশে গ্রামে চাল কালেকশনে আমিসহ মাদ্রাসার ৩জন ছাত্র বের হই। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত কালেকশন করে ভীষন খিদা লাগে। ক্ষুধার্ত হওয়ায় কালেকশনের টাকা থেকে দশ টাকার খাবার কিনে খাই। এজন্যে হুজুর আমাকে দাঁতন গাছ দিয়ে খুব মারতে থাকে। হুজুরের পা ধরে ক্ষমা চাওয়ার পরও আমাকে মারতে থাকে। এরপর হুজুর আমাকে মেরে একটি ঘরে আটকিয়ে রেখে আমার বাড়িতে অন্য ছাত্রদের দিয়ে খবর পাঠায়।
বড়ি থেকে লোক এসে আমাকে উদ্ধার করে। হুজুর প্রতি দিন ছাত্রদের চাল কালেকশনে পাঠায় কেউ যেতে না চাইলে তাকে খুব মারপিট করে। মাদ্রাসায় আমাদের খেতে দেয় না। বাড়ি থেকে খেয়ে মাদ্রাসায় থেকে সব ছাত্ররা লেখাপড়া করে। প্রতিমাসে বেতন ১শ’২০টাকা করে দিতে হয়। ৩/৪ মাস আগে একবার আমাকেসহ আরো তিনজনকে খুব মেরেছিলো কালেকশন নিয়ে। মাদ্রাসায় যাওয়া ছেড়ে দিয়েছিলাম। পরে বাড়ি এসে অভিভাবকদের বলে আবার মাদ্রাসায় নিয়ে গেছে। হুজুরের বাড়ির সব ধরনরে কাজ করাই মাদ্রাসার ছাত্রদের দিয়ে।
মাদ্রাসায় মোট ছাত্র আছে ২৮ জন। আহত রমজান মোল্যার ভ্যানচালক পিতা আজানুর মোল্যা বলেন, আমার ছেলে হুজুরের কালেকশনের টাকা দিয়ে খাবার খাইছে। নিষ্ঠুরভাবে না মেরে আমাকে বললে আমি টাকা দিয়ে দিতাম। আমি এই অমানবিক, নির্মম-নিষ্ঠুর নির্যাতনের দৃষ্টান্তমুলক বিচার চাই। অভয়নগর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. এস এম মাহামুদুর রহমান রিজভী বলেন,
মাদ্রাসা ছাত্র রমজান মোল্যার কোমর ও নিতম্ব থেকে দুই পায়ে বেধড়ক পিটিয়ে জখম করা হয়েছে। ওই স্থানে একাধিক জখমের চিহ্ন রয়েছে। তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ভর্তি করা হয়েছে। সে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রয়েছে। খানজাহান আলী নূরানী হাফেজী মাদ্রাসার শিক্ষক মোঃ ইমামুলের ব্যবহারিত ০১৯৪৮-৯২২৪২৭ নম্বরে একাধিক বার চেষ্টা করা হলেও ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়। জানতে চাইলে অভয়নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি তদন্ত) মো. রোকিবুজ্জামান বলেন, মাদ্রাসা ছাত্রকে মারপিটের ঘটনায় একটি অভিযোগ পেয়েছি। শুনেছি ছাত্রটি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করে অবশ্যই আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।