খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট) এর ইলেক্ট্রিক্যাল এন্ড ইলেক্ট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) বিভাগের প্রফেসর ড. মোঃ সেলিম হোসেন গত ৩০/১১/২০২১ইং তারিখ রোজ মঙ্গলবার অকাল মৃত্যুবরণ করেন। তিনি ঐ দিন প্রথমার্ধের অফিস শেষে বাসায় যাওয়ার পর ওয়াশরুমে অসুস্থ হয়ে পড়লে তার পরিবার তাকে অত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারে মুমূর্ষু অবস্থায় নিয়ে আসেন। সংবাদ পাওয়া মাত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. কাজী সাজ্জাদ হোসেন মেডিকেল সেন্টারে তৎক্ষনাৎ উপস্থিত হন। মেডিকেল সেন্টারে তার প্রাথমিক পরীক্ষা নিরীক্ষা করার পর চিকিৎসকগণের পরামর্শ অনুযায়ী তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য মেডিকেল সেন্টারে একজন চিকিৎসকসহ এ্যাম্বুলেন্স যোগে দ্রুত খুলনা সিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং পরবর্তীতে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। এরপর সেখানকার কর্তব্যরত চিকিৎসকগণ তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
সন্ধ্যায় কুয়েট কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ প্রাঙ্গনে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী ও শিক্ষার্থীসহ ভাইস-চ্যান্সেলর তার নামাজে জানাজায় অংশগ্রহণ করেন। জানাজা শেষে তাকে দাফনের জন্য তার পরিবার কুষ্টিয়ার নিজ বাড়িতে নিয়ে যায়। অপরপক্ষে তার মৃত্যুর পর বিষয়টির সাথে বিশ্ববিদ্যালয়ের কতিপয় শিক্ষার্থীর জড়িত থাকার অভিযোগ উত্থাপিত হলে তাৎক্ষণিক সিসিটিভি ফুটেজ পর্যবেক্ষণ করা হয় এবং লক্ষ্য করা যায় যে, তিনি প্রথমার্ধের অফিস শেষে বাসায় ফেরার পথে কতিপয় শিক্ষার্থী তাকে রাস্তায় বাধা প্রদান করে এবং তাকে তার বিভাগীয় দাপ্তরিক কক্ষে ফিরে যেতে এবং সেখানে আনুমানিক ৪০ মিনিট অবস্থান করতে বাধ্য করে। তার এই মৃত্যুর বিষয়টি সুষ্ঠু তদন্তের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ০৩ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয় এবং কমিটিকে যথাশীঘ্র এ বিষয়ে তদন্ত করত: একটি রিপোর্ট ভাইস-চ্যান্সেলর মহোদয়ের নিকট দাখিল করার জন্য অনুরোধ করা হয়। গঠিত তদন্ত কমিটির সভাপতি ও সদস্য-সচিব অব্যাহতি চেয়ে ০১/১২/২০২১ইং তারিখে আবেদন করেন। একই দিন অর্থাৎ গত ০১/১২/২০২১ইং তারিখে প্রফেসর ড. মোঃ সেলিম হোসেন এর মৃত্যুর বিষয়টিকে আলোচ্যসূচি করে অত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি এক জরুরী সভার আহবান করে। উক্ত জরুরী সভার সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে শিক্ষক সমিতি এ মৃত্যুকে অস্বাভাবিক মৃত্যু হিসেবে দাবি করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নিকট ০৭ টি দাবি যথা সংশ্লিষ্ট শিক্ষার্থীদের সাময়িক বহিস্কারসহ ক্যাম্পাস থেকে বিতাড়িতকরণ, প্রতিবাদ সমাবেশ, তদন্তের মাধ্যমে স্থায়ীভাবে বহিস্কার না করা পর্যন্ত সকল একাডেমিক কার্যক্রম বর্জন, ক্ষতিপূরণ প্রদান, উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বরাবর স্মারকলিপি প্রদান, আইনী বিচারিক প্রক্রিয়া শুরু ও ছাত্র রাজনীতিমুক্ত ক্যাম্পাস নিশ্চিত করার দাবি পেশ করে। এছাড়াও ইইই বিভাগের শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে অনুরূপ দাবি পেশ করা হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ে উদ্ভুত পরিস্থিতিতে পরবর্তী করণীয় নির্ধারণের জন্য গত ০২/১২/২০২১ইং ও ০৩/১২/২০২১ইং তারিখদ্বয়ে সিন্ডিকেটের ৭৬তম (জরুরী) সভা অনুষ্ঠিত হয়। সিন্ডিকেট সভার সিদ্ধান্ত (২) অনুযায়ী প্রফেসর ড. মোঃ সেলিম হোসেন এর অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য ও বিশ্ববিদ্যালয়ে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার আশংকায় ০৩/১২/২০২১ইং হতে ১৩/১২/২০২১ইং তারিখ পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা এবং ০৩/১২/২০২১ইং তারিখ বিকাল ৪:০০ ঘটিকার মধ্যে আবাসিক ছাত্র-ছাত্রীদের হলসমূহ ত্যাগ করার নির্দেশ প্রদান করা হয়। সিন্ডিকেট সভার সিদ্ধান্ত (৩) অনুযায়ী প্রফেসর ড. মোঃ সেলিম হোসেন এর অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে জড়িত অপরাধীদের সনাক্তকরণসহ সংশ্লিষ্ট আনুষঙ্গিক বিষয়াদি পর্যালোচনা করত: সুপারিশসহ রিপোর্ট প্রদান করার জন্য অত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক এবং জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের উর্দ্ধতন কর্মকর্তাবৃন্দের সমন্বয়ে ০৫ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তদন্ত কমিটিকে ১০ (দশ) দিনের মধ্যে উল্লিখিত বিষয়ে তদন্ত করত: সুপারিশসহ একটি পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট ভাইস-চ্যান্সেলর মহোদয়ের নিকট দাখিল করার জন্য অনুরোধ করা হয়। সিন্ডিকেট সভার সিদ্ধান্ত (৪) অনুযায়ী প্রফেসর ড. মোঃ সেলিম হোসেন এর অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনায় কতিপয় শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে প্রাথমিকভাবে বিষয়টির সত্যতা প্রতীয়মান হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শৃংখলা ও আচরণ বিধির আলোকে ৯ জন শিক্ষার্থীকে বিশ্ববিদ্যালয় হতে সাময়িকভাবে বহিস্কার করা হয়। পরবর্তীতে ১২/১২/২০২১ইং তারিখে অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেটের ৭৭তম (জরুরী) সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক বিশ^বিদ্যালয়ে যে কোন ধরণের অপ্রীতিকর ঘটনা ও অস্থিতিশীল পরিস্থিতি এড়ানো এবং ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের লক্ষ্যে অত্র বিশ^বিদ্যালয়ের সকল একাডেমিক কার্যক্রম এবং হলসমূহ বন্ধের সময়সীমা আগামী ২৩/১২/২০২১ইং তারিখ পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়েছে।
খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলির মধ্যে অন্যতম। বর্তমান সরকার ২০০৯ সাল হতে অদ্যাবধি খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়-কে একটি আধুনিক ও যুগোপযোগী এবং বিশ্বমানের সুবিধা সম্বলিত প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে গড়ে তুলতে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামোগত উন্নয়নে সার্বিক সহযোগিতা করে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে (০৫ ডিসেম্বর, ২০২১) বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি) এর বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি’র মূল্যায়ন প্রতিবেদনে দেশের ৪৬ টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে কুয়েট তৃতীয় (০৩) স্থান অধিকার করেছে। মানসম্পন্ন শিক্ষা ও গবেষণায় নেতৃত্ব দিয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এঁর সোনার বাংলা বিনির্মাণে কুয়েট অগ্রণী ভূমিকা রাখবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন এ বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. কাজী সাজ্জাদ হোসেন।