চ্যানেল খুলনা ডেস্কঃ বাজারে অনেক ধরণের বীজ কিনতে পাওয়া যায়। বেশি দাম দিয়ে বীজ কিনলেও অনেক বীজের মান ভাল না। গাছ যদিও হয় কিন্তু তার ফলন ভাল হয় না। একটু বুঝে বীজ না কিনতে পারলে সময় এবং শ্রম দুটোই বিফলে যায়। আমরা গরীব মানুষ। অল্প পুঁজি নিয়ে ক্ষেতে খামার করি। একেতো কৃষি ফসলের দাম পড়ে যায় তারওপর ভাল বীজ না হলে, একেবারে মাঠে মারা। আমরা যদি আমাদের বীজ আমরা উৎপদন করি। তাহলে সেই বীজ ঠিকঠাক রাখতে হলে পাঠাতে হয় যশোরে। সেখানে বীজ সংরক্ষণাগার রয়েছে। কিন্তু খুলনা জেলায় এভাবে আর কোন বীজ সংরক্ষনের জায়গা নেই। কিন্তু এবছরই ডুমুরিয়ার উপজেলায় সংরক্ষনের জায়গা তৈরি হয়েছে। আমরা আমাদের নিজেদের উৎপাদিত ফসল থেকে পরবর্তী বছরের জন্য বীজ সংরক্ষন করছি। বীজ কেনার খরচ কমে গেলো, বীজের মানও ভাল হচ্ছে, কোন টেনশন নেই। বলছিলেন, ডুমুরিয়া উপজেলা টিপনা এলাকার কৃষক মো. হানিফ মোড়ল।
খুলনা শহর থেকে খুলনা-সাতক্ষীরা সড়ক ধরে প্রায় ২২ কিলোমিটার পরে টিপনা গ্রাম। পীচঢালা পথ রেখে বাঁদিকে শেখ পাড়া। গ্রামের মেঠো পথ। পথের দুপাশে ছোট ছোট পুকুর। যেখানে প্যাক প্যাক ডাক পেড়ে চরে বেড়াচ্ছে পাতি হাস। পুকুর পাড়ের মাচায় লাউ, ঝিঙে, ধুন্দল ঝুলছে। তিন’শ গজ পর চোখে পড়ে পাকা কনক্রিটের চাতাল লাগোয়া একতলা বিল্ডিং। চাতালে বীজ প্রক্রিয়ার কাজ করছে ৫জন শ্রমিক। যার মধ্যে দুজন নারী।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানাগেছে, উপজেলার খর্নিয়া ইউনিয়নের টিপনা গ্রামের শেখ মঞ্জুর রহমান নামের একজন ক্ষুদ্র উদ্যোগতা বীজ প্রসেসিং সেন্টার তৈরি করেছেন। যেখানে বীজ শুকানোর চাতাল, সংরক্ষীত বীজ, চালনি, গ্রেডিং মেশিন, কুলিং ফ্যান, ওয়েট মেশিন, বীজলট, বীজ সংরক্ষণ র্যাক, ময়েশ্চার মিটার, পেট্রিডিশে জার্মিনেশন টেস্ট, ওয়েট মেশিন, বীজপাত্র সেলাই মেশিন থেকে শুরু করে বীজ সংরক্ষণের সকল সরঞ্জাম রয়েছে।
ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা শেখ মঞ্জুর রহমান জানান, আগে সকল ধরণের বীজ সংরক্ষন করতে গেলে যশোরে যেতে হতো। যাতায়াত খরচ, সময়, সবমিলিয়ে আগ্রহ কমে যেত। আমি নিজে একজন কৃষক। কৃষকের কষ্ট বুঝি। বাজারে আমি বীজের ব্যবসা করি। বীজ কেনা নিয়ে কৃষকের যে, দ্বিধা-দ্বন্দ। গতবার এই বীজ ভাল হয়নি। কোন বীজ কিনবো। কোনটা ভাল। নানা প্রশ্ন। বাধ্য হয়ে অনেক কৃষক একসাথে হয়ে নিজেদের ধানের বীজ সংরক্ষনের জন্য যশোরে যায়। আমি নিজেও সেখানে বীজ রাখতাম। পরে স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শে আমি বীজ সংরক্ষনের কাজ শুরু করি। ২০ শতাংশ জমিতে প্রায় ১৪লাখ টাকা খরচ করে নির্মাণ করেছি শেখ এগ্রো এন্ড বীজ প্রসেসিং সেন্টার। প্রথম বছর আমার লক্ষ্য ছিল ২০টন বীজ সংরক্ষনের। ইতিমধ্যে ১৫টন বীজ আমি সংরক্ষন করেছি। আমার সেন্টারে এখন প্রতিদিন ৫জনের কর্মসংস্থান হয়েছে। ভাল সাড়াও পাচ্ছি। আরও কিছু কাজ বাকি রয়েছে।
উপজেলা চেয়ারম্যান উপজেলা পরিষদ এজাজ আহমেদ জানান, ডুমুরিয়ায় বীজ সংরক্ষণে উদ্যোক্তা তৈরি হয়েছে। শুনলে ভালই লাগে। আমি দেখেছি, অনেক ভাল করেছে। আগামীতে খুলনা বিভাগে দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে এ বীজ প্রসেসিং সেন্টার। এখন থেকে কৃষক নিজেই তার পরবর্তী বছরের বীজ উৎপাদন করে স্বল্পমূল্যে এখানে সংরক্ষন করতে পারবে। ডুমুরিয়া উপজেলা কৃষিতে আরোও সমৃদ্ধ হবে। এধরণের উদ্যোক্তা তৈরিতে আমাদের সহযোগিতা সবসময় থাকবে। এ সেন্টারে যাওয়ার পথে কাদা হয়, ফলে কৃষক ভাইয়েরা সহজে সেখানে যেতে পারে। আমি খুব শিঘ্রই এ রস্তা সংস্কারের ব্যবস্থা করবো।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্র্তা মো. মোছাদ্দেক হোসেন জানান, মঞ্জুর লেখাপড়া জানা একজন কৃষক। তাকে আমরা উদ্বুদ্ধ করেছি এ কাজে। খুলনায় এ ধরণের কোন উদ্যোগ আগে কেউ গ্রহন করেনি। তাকে সার্বক্ষনিক আমরা সহযোগিতা করছি। এ সেন্টারের কাজ সম্পূর্ণ হলে, খুলনা বিভাগে কৃষি খাতে আমুল পরিবর্তন আসবে। স্থানীয় কৃষকেরা বেশ আগ্রহ দেখাচ্ছে। অনেকেই এখনই এ সেন্টারে বীজ সংরক্ষন করছে।