চ্যানেল খুলনা ডেস্কঃ করোনাভাইরাসের কারণে ইউএইতে বাংলাদেশি যাত্রী প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা থাকায় কেবল ঢাকা-দুবাই রুটে ট্রানজিট যাত্রী পরিবহন করবে এমিরেটস এয়ারলাইন্স। কোভিড-১৯ মহামারির কারণে দুই মাসেরও বেশি সময় ধরে আকাশপথে যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বিশ্বব্যাপী নজিরবিহীন ক্ষতি গুনতে হচ্ছে বিমান চলাচল শিল্পকে। আন্তর্জাতিক বিমান পরিবহন সংস্থার (আইএটিএ) এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, করোনাভাইরাস মহামারির জন্য ঘোষিত ঐতিহাসিক এ স্থবিরতার সময়ে ২০২০ সালে বিশ্বব্যাপী ৮,৪৩০ কোটি ডলার ক্ষতির সম্মুখীন হবে বিমান পরিবহন শিল্প।
কিছু কিছু এয়ারলাইন্স মহামারি চলাকালীন আটকা পড়া যাত্রী এবং চিকিৎসা সরঞ্জাম বহন করার জন্য বিশেষ ফ্লাইট পরিচালনা করলেও পুরো খাতটি দুই মাস ধরে পিছিয়ে পড়তে বাধ্য হয়েছে।
যাই হোক, দীর্ঘ দিনের পিছিয়ে পড়ার পর, বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) আগামী ২১ জুন থেকে সংযুক্ত আরব আমিরাতের (ইউএই) উড়োজাহাজ পরিবহন সংস্থা এমিরেটস এয়ারলাইন্সকে ঢাকা থেকে ফ্লাইট পরিচালনায় অনুমতি দিয়েছে।
বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মফিদুর রহমান বলেন, আগামী ২১ জুন থেকে দুবাই-ঢাকা রুটে প্রাথমিকভাবে সপ্তাহে ৩টি ফ্লাইট শুরু করবে তারা। ঢাকা থেকে ফ্লাইট পরিচালনার জন্য আরও দুটি এয়ারলাইন্স আবেদন করেছে বলেও জানান তিনি।
তিনি বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে ইউএইতে বাংলাদেশি যাত্রী প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা থাকায় কেবল ঢাকা-দুবাই রুটে ট্রানজিট যাত্রী পরিবহন করবে এমিরেটস এয়ারলাইন্স। তবে তাদের দেশের (ইউএইতে) নাগরিক আসা যাওয়া করতে পারবে।
এ মুহূর্তে দোহা ও ইউএইতে কোনো বাংলাদেশি নাগরিক ঢুকতে না পারলেও ট্রানজিট ফ্লাইটে অন্য যেকোনো দেশে বাংলাদেশি নাগরিক যেতে পারবেন, বলেন তিনি।
তিনি বলেন, “আমাদের দেশের নাগরিক যেন ইউএইতে ঢুকতে পারে সে বিষয়ে তাদের এভিয়েশন কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন এবং দোহাতেও যাতে বাংলাদেশি নাগরিক ঢুকতে পারে সে বিষয়ে চিঠি দিয়েছি।”
এদিকে, ১৬ জুন থেকে বাংলাদেশ থেকে আন্তর্জাতিক রুটে ফ্লাইট পরিচালনা করছে কাতার এয়ারওয়েজ। মঙ্গলবার কাতার এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইট ঢাকা থেকে দোহাতে এবং দোহা থেকে একটি ফ্লাইট হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসেছে।
“বাংলাদেশে জুলাই থেকে ফ্লাইট চালু করতে চেয়ে টার্কিস এয়ারলাইন্স আবেদন করেছে। তাদের আবেদনের প্রেক্ষিতে জুলাই মাসে যাতে তারা ফ্লাইট চালাতে পারে আমরা সে অনুমতি দেব,” বলেন বেবিচক চেয়ারম্যান।
চেয়ারম্যান আরও বলেন, “এয়ার এরাবিয়াও বাংলাদেশে ফ্লাইট চালু করতে চায়। এ বিষয়ে তাদের সাথেও আলোচনা চলছে। আমরা খুব শিগগিরই অনুমতি দেব।”
তিনি বলেন, “স্বাস্থ্যবিধি মেনে ১৬ জুন থেকে সীমিত আকারে আন্তর্জাতিক রুটে ফ্লাইট শুরু হয়েছে। এখন যেসব বিমান সংস্থা বাংলাদেশে ফ্লাইট চালাতে আবেদন করবে আমরা সেটি বিবেচনা করব। বেবিচক সূত্রে জানা গেছে, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্রতি শনিবার, সোমবার ও বৃহস্পতিবার একটি করে ফ্লাইট পরিচালনা করবে এমিরেটস এয়ারলাইন্স। ওই তিন দিন দুবাই থেকে ঢাকার উদ্দেশে আসবে ইকে৫৮৪ ফ্লাইট এবং ঢাকা থেকে দুবাইয়ের উদ্দেশে যাবে ইকে৫৮৫ ফ্লাইট।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং সিইও মোকাব্বির হোসেন বলেন, প্রতি সপ্তাহে এক দিন (রবিরার) ঢাকা-লন্ডন-ঢাকা রুটে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট পরিচালনা করা হবে। সে অনুযায়ী আগামী ২১ জুন বিমানের ফ্লাইট যাবে লন্ডনে। তিনি বলেন, “আন্তর্জাতিক রুটে যেখানে আমাদের বিমান যেত সেসব রুটে অনুমতি নিয়ে ফ্লাইট চালাতে প্রস্তুত রয়েছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স।
উল্লেখ্য, গত ১১ জুন বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছিল ১৬ জুন থেকে ঢাকা-লন্ডন-ঢাকা রুটে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স এবং কাতার এয়ারওয়েজ শুধু ট্রানজিট ফ্লাইট চালানোর অনুমতি পেয়েছে।
এর আগে গত ১ জুন বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে এবং স্বাস্থ্য নির্দেশিকা অনুসরণ করে অভ্যন্তরীণ রুটে ফ্লাইট পরিচালনার অনুমতি দেয়।
বিশ্বজুড়ে বিশাল লোকসান গুনছে এয়ারলাইন্সগুলো
গত ৯ জুন আইএটিএ বৈশ্বিক বিমান পরিবহন শিল্পের জন্য একটি আর্থিক আউটলুক প্রকাশ করেছে, যেখানে দেখা যাচ্ছে ২০২০ সালে বিমান পরিবহন সংস্থাগুলো প্রায় ৮,৪৩০ কোটি ডলার ক্ষতির সম্মুখীন হবে।
আইএটিএ বলছে, ২০১৯ সালে করা ৮৩,৮০০ কোটি ডলার আয় প্রায় অর্ধেক কমে ৪১,৯০০ কোটি ডলারে নেমে আসবে।
২০২১ সালে লোকসানের পরিমাণ কমে ১,৫৮০ কোটি ডলারে দাঁড়াবে এবং আয় বেড়ে ৫৯,৮০০ কোটি ডলার হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
আইএটিএ তাদের প্রতিবেদনে বলেছে, আর্থিকভাবে ২০২০ সালটি বিমান শিল্পের ইতিহাসে সবচেয়ে খারাপ বছর হিসেবে বিবেচিত হবে।
এ শিল্পটি এ বছর প্রতিদিন গড়ে ২৩ কোটি ডলার ক্ষতির সম্মুখীন হবে। যা বছর শেষে মোট ৮,৪৩০ কোটি ডলার ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াবে বলে জানিয়েছে আইএটিএ।
আইএটিএর মহাপরিচালক এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আলেকজান্দ্রি দে জুনিয়াক বলেন, এ বছর আনুমানিক ২২০ কোটি যাত্রীর চলাচলে যাত্রী প্রতি ৩৭ দশমিক ৫৪ ডলারের ক্ষতির সম্মুখীন হবে বিমান সংস্থাগুলো।