শেখ মাহতাব হোসেন :: আগামী ১০ জুলাই খুলনারডুমুরিয়া সহ সারাদেশে পালিত হতে যাচ্ছে মুসলিম উম্মেহার বৃহত্তর ধর্মীয় উৎসব ঈদুল আযহা বা কোরবানীর ঈদ। মহান শ্রষ্টার সান্নিধ্যে আর হুকুম পালনে মুসলমানেরা পশু কোরবানীর মাধ্যমে আত্মত্যাগে বলিয়ান হয়ে পালন করবে পবিত্র এই উৎসব।
ইতিমধ্যেই শহরজুড়ে বইতে শুরু করেছে ঈদ উৎসবের আমেজ। আসন্ন ঈদুল আযহাকে সামনে রেখে খুলনার বিভিন্ন অঞ্চলে শুরু হয়েছে পশু বিক্রিয়ের জন্য হাট প্রস্তুতির কাজ। বিশেষ খুলনার জোড়াগেট এলাকায় বৃহত্তর কোরবানী পশু বিক্রির হাট আগামী ২ জুলাই হতে শুরু হতে যাচ্ছে, শুরু হতে যাচ্ছে ফুলবাড়ীগেট বালুর মাঠে পশুর হাট। তাছাড়া খুলনার শহরের বাইরে প্রত্যন্ত অঞ্চল ডুমুরিয়ার খর্নিয়া,আঠারো মাইল, চুকনগর, নোয়াপাড়া, জিয়ালা, বর্ণী, আন্দুলিয়া, জামিরা, ফুলতলা, আড়ংঘাটা , দিঘলিয়া উপজেলাসহ বিভিন্ন এলাকায় ইতিমধ্যেই কোরবানী পশু কেনাবেচা শুরু হয়ে গিয়েছে।
তবে এবার ঈদে কোরবানী পশুর হাটে ক্রেতাদের ছোট ও মাঝারী সাইজের গরুর প্রতি বেশি ঝোঁক দেখা যাচ্ছে। কারণ খামারিরা দ্রুত বর্ধণশীল বিদেশী জাতের বড় আকারের হাইব্রীড গরুর লালন পালন বেশি করছে, অতি বর্ধনশীল হওয়ার গরু আকার বড় হওয়ার দরুন দাম বেশি পাওয়ার আশায় অনেক খামারিরা দেশি হতে বিদেশী গরু পালনে বেশি আগ্রহ দেখায়। অপরদিকে ক্রেতাগন তাদের পশু কেনার বাজেট আর ছোট ও মাঝারী সাইজের গরুর প্রতি বেশি আগ্রহ থাকার কারণে বড় গরু প্রতি বেশি আগ্রহ নেই বললেই চলে।
ডুমুরিয়া অঞ্চলের একাধিক গরু মালিক বা খামারির সাথে কথা বলে জানা যায়, কয়েক বছর ধরে ভারতীয় গরুর আমদানি বন্ধ থাকায় দেশি গরুর চাহিদা বহুগুনে বৃদ্ধি পেয়েছে, তাছাড়া সরকারি ভাবে গ্রাম পর্যায়ে পশুপালনে সরকার বহুমুখি উদ্যোগ ও সুযোগ সুবিধা দিয়েছে খামারি বা কৃষকদের, তাই অনেকেই এখন পশুপালনে বেশি আগ্রহী, বিশেষ করে গরু লালন-পালনে। বর্তমানে দেশি গরুর উপর ক্রেতাদের আগ্রহ বেশি, তবে ছোট এবং মাঝারী সাইজের প্রতি।
খামারি রবিউল ইসলাম জানান, এগিয়ে আসছে ঈদ। ঈদকে সামনে রেখে প্রতিদিনই বাড়ীতে খুলনার বিভিন্ন এলাকাসহ বাইরের এলাকা হতে পশু ক্রয়ের জন্য ক্রেতারা আসছে। ইতিমধ্যে শুরু হয়ে গিয়েছে দাম দরের হাকডাক। তবে ক্রেতারা অনেক কম দাম বলছে। বর্তমানে গো-খাদ্যের দাম অনেক বেশি। বিশেষ করে খড়, কুড়া, খৈ, ভূষি ইত্যাদির।
সরেজমিনে, ৩০ জুন (বৃহস্পতিবার) ডুমুরিয়ার শাহপুর পশুর হাটে গিয়ে দেখা যায়, হাটে পিওর দেশি, ক্রস, জার্সি, শাহীওয়ালসহ দেশি বিদেশী গরুর সররবাহ। একই সাথে সরবরাহ ছিল ছাগলেরও। সমগ্র হাট ঘুরে ক্রেতা-বিক্রেতাদের সাথে বলে জানা যায় হাটে এবার বড় গরুর চেয়ে ছোট ও মাঝারী গরুর চাহিদা বেশি।
বিক্রেতা রহিম জানান, আমার বাড়ী আন্দুলিয়ায়। আমি ৩টা মাঝারী সাইজের দেশি গরু নিয়ে হাটে এসেছি। অনেক ক্রেতাই আসছেন, দেখছেন পছন্দ হচ্ছে, প্রায় নিয়েই নেবে, তারপর আর দেওয়া হচ্ছে না। কারণ দাম কম বলছে এমন দাম বলছে প্রতি
কেজি মাংসের দাম পড়ছে সাড়ে ৬ শত টাকা মতো কেজি, কিন্তু কোরবানীর পশুর বাড়তি খাওয়া আর যত্ম নিতে হয়। এমনিতেই খাবারের দাম বিশেষ করে কুড়া, খৈ, ভূষি, খড় ইত্যাদির দাম আকাশ ছোয়া। তারপর যে দাম বলছে গরুর পিছনে খরচের আসল টাকা তো উঠবেই না, বরং কষ্টই বৃথা যাবে।
ক্রেতা সিদ্দিকি মোড়ল জানান, দেশে সম্প্রতি আবার করোনার বৃদ্ধি পাওয়া শুরু করেছে। জানিনা দেশের কি পরিস্থিতি দাড়ায়। তাই আগে ভাগেই এলাম কোরবানীর পশু কেনার জন্য। আমার দরকার ৮৫ হতে ৯০ কেজি মধ্যে একট গরুর। বর্তমানে বাজারে এক কেজি গরুর দাম ৬শত ৫০ টাকা, সেই হিসাবে আমার হিসাবে গরুর দাম আসে ৫৫ হাজার টাকা। হ্যা কোরবানীর গরু দাম বাজারের গরুর দাম সমান হবে না, তবে একেবারে ডাকাতিতো আর করা যাবে না। ৫৫ হাটার টাকার গরু চাওয়া হচ্ছে প্রায় ৬৫ হতে ৬৮ হাজার টাকা। তাকে কেজি পড়ে প্রায় ৭৫ হতে ৮০ টাকার মতো। তারপর আবার হাসিল খরচ, ঈদের আগ পর্যন্ত পরিচর্চা। সবমিলিয়ে হাটে ছোট এবং মাঝারী গরুর চাহিদা বেশি, তবে খাবার আর অন্যান্য অজুহাত দেখিয়ে দাম বাড়তি যাচ্ছে ব্যবসায়ীরা।
অপর ক্রেতা হাফিজুল ইসলাম জানান, কোরবানীর পশু কেনা দায় । কারন নিজে একটা গরু কোরবানী দেওয়া সম্ভব হয় না। ভাগে দিতে হয়। ভাগে দিতে গেলে এক লাখের নিচে গরু কেনা যায়। গত এক লাখে যে গরু কিনেছি, এবার শাহপুর হাটে তা চাইছে এক লাখ ৪০ হাজার টাকার মতো। কারণ অধিকাংশ গরুই ব্যাপারীর। তারা গ্রাম হতে কিছুটা লাগে কিনে এনে এখন আমাদের গলায় ছুরি ধরেছে।
কাউন্সিলর মোহাম্মদ আলী বলেন, গো-খাবারের দাম একটু উর্ধ্বমুখি। আর আামদের দেশে ব্যবসার কোনো নীতি নেই, লাভটাই আসল। খাবারের দাম দেখিয়ে ব্যবসায়ীরা একটু দাম বেশি যাচ্ছে। যেহেতু পুরা শহরে এখনো হাট জমে উঠেনি। বিভিন্ন এলাকা হতে শহরে গরু এখনো পুরাদমে আমদানি শুরুই হয়নি। তাছাড়া সিলেট ও সুনামগজ্ঞ অঞ্চলে বন্যায় অবস্থা সুচনীয়। আমার ধারণা ওই সমস্ত অঞ্চলের পশু বিভিন্ন জেলা প্রবেশ করলে পাশাপাশি প্রত্যন্ত অঞ্চলের গরু শহর মুখি হলে দাম অনেকটাই হ্রাস পাবে। আমার ইচ্ছা মাঝারী আকারের একটা পশু অর্থ্যাৎ গরু কোরবানী দেওয়ার। কোরবানী তো কোরবানী, তা ছোট, বড় বা মাঝারী, নিয়তটাই সব।