নগরীর খালিশপুর হাউজিং বাজারে কলেজ ছাত্রীকে যৌন হয়রানি ও মারধরের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় একই পরিবারের তিনজনসহ চারজন আহত হয়েছে।
শুক্রবার (১১ ফেব্রুয়ারি) দুপুর ২টার দিকে হাউজিং বাজার বক্কারের বস্তিতে এ ঘটনা ঘটে। আহতদের খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
পুলিশ অভিযুক্ত সোহেল (২০) কে গ্রেফতার করেছে।
আহতরা হলেন শহিদুল ইসলাম (৪০), স্ত্রী আলেয়া বেগম(৩২), মেয়ে ও কলেজ ছাত্রী তানিয়া সেতু(১৯) এবং হামলাকারীর মা নাজমা বেগম(৩৫)।
আহত আলেয়া বেগম জানান, তার মেয়ে তানিয়া সেতু নৌবাহিনী কলেজে লেখা পড়া করেন। সে এবার এইচএসসি ফল প্রার্থী। তার মেয়ে এলাকার মাদক ব্যবসায়ী সোহেল প্রায় উত্যক্ত করে আসছে। গত বছর নভেম্বর মাসে এমনই ঘটনা ঘটলে স্থানীয় কাউন্সিলর পারভীন আক্তারের নিকট অভিযোগ দিলেও ছেলেটি উৎপাত অব্যাহত রাখে। এতে করে মেয়েটি অনেকটা ঘর বন্দি হয়ে পড়ে।
ছেলেটি ইতোমধ্যে পাঁচটি বিয়ে করলেও একটি বউও তার সংসারে নেই। সে এলাকায় ঘুরে বেড়ায় আর মেয়েটিকে উত্যক্ত করে। তারই ধারাবাহিকতায় তিনি শুক্রবার দুপুরে ভিতর ঘরে খাবার দিচ্ছেন তার স্বামীকে। সামনের ঘরে মেয়ে সেতুকে একা পেয়ে লম্পট সোহেল যৌন হয়রানির উদ্দেশ্যে তাকে ঝাপটে ধরে। ভিকটিম সেতুর চিৎকারে ঘরের সবাই এগিয়ে আসলে পাশেই থাকা সোহেলকে উদ্ধার করতে তার মা-বাবা ও ভাই এগিয়ে আসে। তার আগেই সেতুর জামা টেনে ছিড়ে ফেলে লম্পট সোহেল এবং শরীরের স্পর্শকাতর স্থানে হাত দেয়।
তারা ভিকটিম সেতুর মা আলেয়া, বাবা শহিদুলকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে সোহেলকে উদ্ধার করে নিয়ে আসে। এ সময় তারা ঘরের আসবাবপত্র ভাংচুর করে ও নগদ ৭০ হাজার টাকা লুট করে নিয়ে যায়। তাদের ডাক চিৎকার শুনে প্রতিবেশীরা ছুটে আসলে হামলাকারীরা পালিয়ে যায়।
এ সময় ৯৯৯ নাম্বারে কল করলে খালিশপুর থানার এসআই মোস্তফার নেতৃত্বে একদল পুলিশ ঘটনাস্থলে আসেন। তারা পরিস্থিতি শান্ত করেন।
একই সময় তারা লম্পট সোহেলকে গ্রেফতার করেন বলে প্রতিবেশী জসিম জানান। তিনি জানান, এ পরিবারের অত্যাচারে এই পরিবারটিসহ এলাকাবাসী অতিষ্ঠ। পরিবারের নাজমা বেগম সুদের ব্যবসায়ী। সুদের টাকায় সে এলাকার কাউকে মানুষ মনে করে না।
এসব অভিযোগ অস্বীকার করে প্রতিপক্ষ নাজমা বেগম বলেন, শহিদুল একজন চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী। ইতোমধ্যে সে মাদকসহ পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়। দু’জনের ঘর পাশাপাশি হওয়ায় শহিদুল তার মাদক ঘরের পিছনে রাখে। যেখানে নাজমা সবজি চাষ করেছেন। ওইখানে মাদক লুকিয়ে রাখার ব্যাপারে নাজমা একাধিকবার শহিদুলকে বললেও কর্ণপাত করেননি। তারই ধারাবাহিকতায় শুক্রবার বড় এক পোটলা মাদক সবজি বাগানে মাদক রাখার প্রতিবাদ করায় সে তাদের ওপর চড়াও হয়। এভাবে উভয় পক্ষের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছে। তিনিও এ ঘটনায় আহত হয়েছেন। তবে ধারালো অস্ত্র দিয়ে শহিদুল নিজেই নিজের হাত কেটেছে এবং মেয়েটি তার জামা নিজেই ছিড়েছে বলে নাজমার দাবি।
খালিশপুর থানার এসআই গোলাম মোস্তফা জানান, মারামারির খবর শুনে হাউজিং বাজারে যাওয়া হয়। সেখান থেকে সোহেল নামের এক যুবককে গ্রেফতার করে থানায় রাখা হয়েছে। ঘটনা নিয়ে পরস্পর বিরোধী বক্তব্য রয়েছে।
শহিদুল বলছে, তার মেয়ে সেতুকে যৌন হয়রানির জের ধরে হামলার ঘটনা ঘটেছে। আর নাজমার পক্ষে বলা হয়েছে, শহিদুল মাদক ব্যবসায়ী। মাদক রাখাকে কেন্দ্র করে এ সংঘর্ষ হয়েছে। তবে রাত সাড়ে ৯টা পর্যন্ত কোন পক্ষই লিখিত অভিযোগ করেনি।