চ্যানেল খুলনা ডেস্কঃকারাবন্দি বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য বিষয়ক প্রতিবেদন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতাল থেকে সুপ্রিম কোর্টে পৌঁছেছে। এই প্রতিবেদনের ভিত্তিতেই খালেদা জিয়ার জামিন আবেদনের বিষয়ে আদালতের আদেশ হবে। এ দিকে, বিএসএমএমইউ কর্তৃপক্ষের আদালতে পাঠানো প্রতিবেদন নিয়ে সন্দেহ পোষণ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
বিএসএমএমইউ কর্তৃপক্ষ চিকিৎসকদের দেওয়া প্রতিবেদন আদালতে পাঠিয়েছে কি না, সে বিষয়ে ঘোর সন্দেহ প্রকাশ করেন মির্জা ফখরুল। দুটি মামলায় (জিয়া এতিমখানা ট্রাস্ট ও জিয়া দাতব্য ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলা) দণ্ড মাথায় নিয়ে কারাবন্দি সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া গত এপ্রিল থেকে বিএসএমএমইউ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
বিএনপিপন্থি আইনজীবীদের আশা বিভিন্ন মামলায় জামিন হওয়ার পর জিয়া দাতব্য ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলাটিতে জামিন হলেই বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির পথ খুলে যাবে। এর আগে, চলতি মাসের গত ৫ ডিসেম্বর জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের ছয় বিচারপতির বেঞ্চে এই আবেদনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বিএসএমএমইউ কর্তৃপক্ষ চিকিৎসা প্রতিবেদন দিতে না পারায় বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের এজলাসে বিক্ষোভ, চিৎকার ও হট্টগোল শুরু করেন। যার কারণে সে দিন আপিল বিভাগের নিয়মিত কার্যক্রম ব্যাহত হয়। পরে হট্টগোলের মধ্যেই তাদের (বিএসএমএমইউ কর্তৃপক্ষকে) আরও ছয় দিন সময় দিয়ে ১২ ডিসেম্বর আদেশ দেওয়ার দিন ঠিক করেন আদালত।
জানা গেছে, আদালতের বেঁধে দেওয়া নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বুধবার (১১ ডিসেম্বর) বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) উপাচার্যের প্রতিনিধিদের সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলের কার্যালয়ে ঢুকতে দেখা গেছে। এদের মধ্যে একজনের হাতে বিএসএমএমইউয়ের লোগো সম্বলিত খাকি রঙের ফাইল দেখা যায়।
তবে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনের পক্ষ থেকে এ বিষয় নিয়ে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে কেউ রাজি হননি। সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল আলী আকবর বলেন, এ বিষয়ে আমি কোনো কথা বলতে চাই না। তিনি সুপ্রিম কোর্টের মুখপাত্রের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন।
সুপ্রিম কোর্টের মুখপাত্র সাইফুর রহমান ফোনে বলেন, আমি এই মুহূর্তে একটা মিটিংয়ে আছি। এ বিষয়টি সম্পর্কে এখনো কিছু জানি না। সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বৃহস্পতিবারের (১২ ডিসেম্বর) কার্য তালিকায় ১২ নম্বর ক্রমিকে আছে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার জামিন আবেদনটি।
এ দিকে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক কনক কান্তি বড়ুয়া জানান, বুধবার বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে আমরা খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য বিষয়ক প্রতিবেদন আদালতে পাঠিয়ে দিয়েছি। তিনি আরও জানান, খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় গঠিত অধ্যাপক জিলন মিঞা সরকারের নেতৃত্বে সাত সদস্যের মেডিকেল বোর্ড এই প্রতিবেদন জমা দিয়েছে।
অন্যদিকে, বিএসএমএমইউ কর্তৃপক্ষ থেকে বেগম খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যগত প্রতিবেদনের ফাইল সুপ্রিম কোর্টে যাওয়ার আগে রাজধানীর গুলশানের লেইক শোর হোটেলে এক গোলটেবিল বৈঠকে নিজের সন্দেহের কথা জানান বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল।
ফখরুল বলেন, ‘আমরা যতটুকু জানতে পেরেছি, মেডিকেল বোর্ড যে রিপোর্ট দিয়েছিলেন, সেই রিপোর্টটিকে সরিয়ে অন্য কোনো রিপোর্ট দেওয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
এ সময় খালেদা জিয়ার সর্বশেষ স্বাস্থ্যের অবস্থা নিয়ে ডাক্তারদের একটি প্রতিবেদন পড়ে শোনান মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, গত ৩০ নভেম্বর চিকিৎসকরা এই প্রতিবেদনটি দিয়েছিল।
উল্লেখ্য, বেগম খালেদা জিয়ার জামিন আবেদনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেওয়ার আগে গত ২৮ নভেম্বর তার সর্বশেষ শারীরিক অবস্থা জানতে চেয়ে মেডিকেল বোর্ডের প্রতিবেদন চায় সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।