বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডে মৃত্যুদণ্ড মাথায় নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে পালিয়ে থাকা এক খুনি রাশেদ চৌধুরীকে ফেরত পাঠাতে সে দেশের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চিঠি দিয়েছেন। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে শুভেচ্ছা বার্তা পাঠিয়েছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। প্রধানমন্ত্রী ধন্যবাদ জানিয়ে পাঠানো ফিরতি চিঠিতে রাশেদ চৌধুরীকে ফেরত পাঠানোর বিষয়টি আবারো উল্লেখ করেন।
শুক্রবার (৭ আগস্ট) গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে থাকা রাশেদ চৌধুরী এবং কানাডায় থাকা নূর চৌধুরীকে যাতে দেশে আনতে পারি, সেজন্য যা যা করা প্রয়োজন, স্বয়ং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী চিঠি লিখেছেন, ট্রাম্পকেও চিঠি লিখেছেন। আমরা আশা করতেছি যে আমরা সাসসেফুল হব।
তবে কানাডা থেকে মৃত্যুদণ্ডের আসামিদের ফেরত আনা যে কঠিন, সে কথাও বলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
গত এপ্রিলে বঙ্গবন্ধুর খুনি আবদুল মাজেদের ফাঁসি কার্যকর করার প্রসঙ্গ টেনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতার ঘাতকদের মধ্যে এখনো ৫ জন জীবিত রয়েছে। প্রত্যাশা ছিল, মুজিববর্ষে দুজনকে দেশে এনে বিচারের মুখোমুখি করা যাবে। আল্লাহ মেহেরবান, একজনকে আমরা পেরেছি। আর আরেকজনকে আনা যাবে বলে আশা করছি।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বঙ্গবন্ধু জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে গত এপ্রিল মাসে একটি শুভেচ্ছাবার্তা পাঠান যেখানে তিনি লিখেছেন যে এ ধরনের নেতা পৃথিবীতে খুব কম দেখা যায় এবং এরপরে প্রধানমন্ত্রী ফিরতি চিঠি পাঠান। পরবর্তীকালে জুন মাসের ১৭ তারিখ যুক্তরাষ্ট্রের এটর্নি জেনারেল রাশেদ চৌধুরীর রাজনৈতিক আশ্রয় আবেদন মঞ্জুর সংক্রান্ত কাগজপত্র চেয়ে পাঠায় ওই সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার জন্য।
১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট তৎকালীন রাষ্ট্রপতি ও বাঙালির স্বাধীনতা আন্দোলনের নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে পরিবারের অধিকাংশ সদস্যসহ হত্যা করা হয়। সে সময় দেশের বাইরে থাকায় প্রাণে বেঁচে যান বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা।
সামরিক শাসক জিয়াউর রহমানের আমলে ইনডেমনিটি অধ্যাদেশের মধ্য দিয়ে এই হত্যাকাণ্ডের বিচারের পথ বন্ধ করে দেওয়া হয়, যাতে বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনিরা ছাড়া পেয়ে যায়। ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় যাওয়ার পর বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারের পথ খোলে। তখন বিচার শুরু হলেও বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় যাওয়ার পর বিচারের গতি শ্লথ হয়ে যায়।
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ পুনরায় ক্ষমতায় যাওয়ার পর বিচার শেষে ২০১০ সালে পাঁচ খুনির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। সর্বশেষ গত এপ্রিলে পলাতক আবদুল মাজেদ ধরা পড়লে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে তার বিচারের রায় কার্যকর করা হয়। তবে দণ্ডিত পাঁচ খুনি এখনও বিভিন্ন দেশে পালিয়ে আছেন, তাদের মধ্যে রাশেদ চৌধুরীকে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য বহু বছর ধরেই যুক্তরাষ্ট্র সরকারের কাছে দাবি জানিয়ে আসছে বাংলাদেশ।
মার্কিন সাময়িকী পলিটিকো গত মাসে এক প্রতিবেদনে জানায়, রাশেদ চৌধুরীকে রাজনৈতিক আশ্রয় দেওয়ার সিদ্ধান্ত পর্যালোচনার উদ্যোগ নিয়েছে মার্কিন বিচার বিভাগ। এর চূড়ান্ত ফলাফল হিসেবে রাশেদ চৌধুরী যুক্তরাষ্ট্রে তার রাজনৈতিক আশ্রয় হারাতে পারেন এবং তাকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হতে পারে।