খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা ডিসিপ্লিনের মোহাম্মদ মোবারক হোসেন নোমান (‘১৮ ব্যাচ), ইতিহাস ও সভ্যতা ডিসিপ্লিনের ইমামুল ইসলাম (‘১৭ ব্যাচ) এবং শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে সংহতি প্রকাশকারী তিনজন শিক্ষকের বহিস্কার আদেশ প্রত্যাহারের দাবিতে মানববন্ধন সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার (২১ জানুয়ারি) বেলা সাড়ে ১১টায় নগরীর শিববাড়ী মোড়ে খুলনার সচেতন নাগরিক ও সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীবৃন্দ এ মানববন্ধন ও সমাবেশের আয়োজক।
মানববন্ধনে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য কর্তৃক নিয়োগ বাণিজ্য, স্বজনপ্রীতি, দুর্নীতি শিক্ষক ও শিক্ষার্থী বহিস্কারসহ বিভিন্ন অনিয়ম ও নৈরাজ্যের প্রতিবাদ জানিয়েছেন বক্তারা।
বিশিষ্ট নাগরিক নেতা ডাঃ শেখ বাহারুল আলমের সভাপতিত্বে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সাধন মন্ডলের পরিচালনায় মানববন্ধনে সংহতি জানিয়ে বক্তৃতা করেন-বাম গণতান্ত্রিক জোট ও গণসংহতি আন্দোলন খুলনা জেলা সমন্বয়ক মুনীর চৌধুরী সোহেল, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) কেন্দ্রীয় সদস্য এসএ রশীদ, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল বাসদ খুলনা জেলা সমন্বয়ক জনার্দন দত্ত নান্টু, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, খুলনা মহানগর সভাপতি শেখ মফিদুল ইসলাম, সিপিবি মহানগর সভাপতি এইচএম শাহাদাৎ, ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগ খুলনা জেলা সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য মোস্তফা খালিদ খসরু, সাংবাদিক মহেন্দ্রনাথ সেন, শাহীন জামাল পন, ক্ষুধামুক্ত আন্দোলন খুলনা’র সংগঠক অধ্যাপক আহসান হাবিব, উদীচী দৌলতপুর সভাপতি মাহবুবুর রহমান মোহন, মাতঙ্গী নাট্য দলের নূসরাত জাহান, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট, খুলনা জেলা সভাপতি সনজিত মন্ডল, ছাত্র ইউনিয়ন খুলনা জেলা সাধারণ সম্পাদক সৌমিত্র সৌরভ, ছাত্র ফেডারেশন খুলনা মহানগর আহ্বায়ক আল আমিন শেখ, গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিল কেন্দ্রীয় সদস্য পলাশ পাল, বিপ্লবী ছাত্র-যুব আন্দোলন নেতা সুমাইয়া রহমান, যুব অধিকার পরিষদ নেতা মোঃ সোলায়মান, ছাত্র অধিকার পরিষদ নেতা ফরহাদ হাসান, বিএল কলেজ শিক্ষার্থী আসিফ আকাশ।
এছাড়াও সংহতি জানিয়েছেÑসম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, খুলনা ফ্রেন্ডস সোসাইটি, বাংলাদেশ প্রগতি লেখক সংঘ, শ্রমিক-কৃষক-ছাত্র-জনতা ঐক্য পরিষদ, খুলনা রাইটার্স ক্লাব, কবিতালাপ, কাকতাড়ুয়া সাহিত্য পত্রিকাসহ বিভিন্ন সংগঠন।
আরও বক্তৃতা করেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এশা, মামুন, সোনা মিয়া, হাসান আল সাহাব, মোজাহিদ, ইয়াসিন, আশিক, নিখিলেশ, শর্মিষ্ঠা, অরুণ আবীর, বারিদা, সূর্য, মাহাবিব, পল্লব, চন্দন, মাসুদ, রনি, কানিজ ফাতেমা ও ওমর ফারুক প্রমুখ।
এছাড়া বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে খুবি’র শিক্ষার্থীদের ন্যায্য দাবির প্রতি সমর্থন জানিয়ে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে শিক্ষার্থীরা।
অন্যদিকে, আমৃত্যু অনশনরত দুই শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। আজ (২১ জানুয়ারি) দুপুরে স্যালাইন দেয়া হয়েছে নোমানকে।
গত রবিবার (১৭ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে আমরণ কর্মসূচিতে বসে বহিস্কৃত দুই শিক্ষার্থী। ওইদিন ২৪ঘন্টার আল্টিমেটাম শেষ হওয়ার পর বহিস্কার আদেশ প্রত্যাহারের দাবিতে খুবি প্রশাসনকে ফের ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দেয় সাধারণ শিক্ষার্থীরা। সেই থেকে আমৃত্যু অনশনে বহিস্কৃত দুই শিক্ষার্থী। আজ দুপুরে অসুস্থ হয়ে পড়েছে বাংলা ডিসিপ্লিনের মোহাম্মদ মোবারক হোসেন নোমান। এরআগে অসদাচরণের অভিযোগে বহিষ্কারের প্রতিবাদে গত ১৬ জানুয়ারি দুপুরে খুলনা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেছিল শিক্ষার্থীরা।
মানববন্ধন চলাকালেখুবি রসায়ন ডিসিপ্লিনের ১১ ব্যাচের শিক্ষার্থী আশিক রহমান বলেন, অনেকদিন ধরেই এমন পরিস্থিতি চলে আসছে, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কথা বলতে পারে না। তাদের বাক স্বাধীনতা রুদ্ধ করে রাখা হয়েছে। কোন আন্দোলন, প্রতিবাদ করলেই তাদের উপর দমন নিপীড়ন চালানো হয়। এমন অবস্থায় খুলনার সকল সচেতন নাগরিক এবং ছাত্র সমাজকে আমাদের পাশে থাকার আহ্বান জানাই। আর শিক্ষকদের প্রতি অনুরোধ জানাই অনতিবিলম্বে বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করে দুই শিক্ষার্থীকে ক্লাসে যাওয়ার সুযোগ দেওয়া হোক এবং শিক্ষকদের স্ব স্ব পদে বহাল রাখা হোক।
বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন এর আল আমিন বলেন, আমরা জানি যে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজনীতি নাই কিন্তু এখানে অপরাজনীতি রয়েছে। শিক্ষার্থী এবং শিক্ষক বহিষ্কারের মতো এমন ন্যাক্কারজনক ঘটনার প্রতিবাদ জানাই।
অধ্যাপক হাবিবুর রহমান হাবিব বলেন, প্রতিটি গণতান্ত্রিক দাবিতে ছাত্ররা এগিয়ে এসেছে এবং আসবে। ভিসিসহ প্রশাসন কে বলতে চাই, ছাত্ররা প্রতিটি বিষয়ে কথা বলবে, কিন্তু তাদের বক্তব্য যদি ভিসির বিরুদ্ধে যায় তার মানে এমন না তিনি বহিষ্কার করবেন। এই নীল নকশা আমরা বাস্তবায়িত হতে দেবো না। শুধু আমরা নয়, পুরো খুলনাবাসী সম্মিলিতভাবে এর প্রতিরোধ গড়ে তুলবে।
বিএমএ খুলনার সভাপতি ডাঃ বাহারুল আলম বলেন, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় এ অঞ্চলের মানুষের অনেকদিনের আন্দোলনের ফসল। সেই বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন অরাজকতা চলতে দেয়া যায় না। ঘটনা ঘটেছে ২০২০ সালের জানুয়ারিতে, তার শাস্তি কেন হবে ২০২১ সালের জানুয়ারিতে!! আমরা ছাত্রদের পাঁচ দফা দাবি বিশ্লেষণ করেছি। তারাতো অন্যায় কিছু দাবি করেনি। আর অন্যায় দাবি করলেও আপনারা তাদের নিয়ে বসেন, আলাপ আলোচনা করেন, তার জন্য তো এতো বড় শাস্তি দিতে পারেন না! আমরা এই সমাবেশের মাধ্যমে শিক্ষামন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। আশা করছি তার হস্তক্ষেপে দ্রুতই এর সুরহা হবে।