৭৫’র ১৫ ই আগস্ট স্বপরিবারে বঙ্গবন্ধুর নির্মম হত্যাকাণ্ডের পর সারাদেশের ন্যায় খুলনার অবস্থা থমথমে, রাজনীতি নিষিদ্ধ। বঙ্গবন্ধুর একমাত্র ছোট ভাই শহীদ শেখ আবু নাসের এর খুলনার বাড়ি সিলগালা করা। রাত হলেই আওয়ামী লীগ নেতাদের বাড়ির দরজায় আর্মি, পুলিশের নক। চারিদিকে যেন এক বিভীষিকাময় অবস্থা। অত্যাচার, নির্যাতনে নেতৃত্বশূন্য আওয়ামী লীগ যেন দিশেহারা। জেনারেল জিয়া, জেনারেল এরশাদের বিপদজনক আল্ট্রাভায়োলেট রশ্মির যখন একমাত্র টার্গেট আওয়ামী লীগ, এমনি দুঃসময়ে খুলনার আওয়ামী লীগ পরিবারকে রক্ষায় খুলনার আকাশে ওজোনস্তর হিসেবে আবির্ভূত হন ২২-২৩ বছরের সুদর্শন, সাহসী যুবক এস এম মোস্তফা রশিদী সুজা। তরুণ সুজার উপস্থিতি যেন তখন আওয়ামী লীগের জন্য “স্বস্তি”। এস এম মোস্তফা রশিদী সুজার জন্ম ১৯৫৩ সালের ২ মার্চ বাগেরহাট সদর উপজেলার রাখালগাছী ইউনিয়নের সুগন্ধী গ্রামে। শেখ মোকবুল আহমেদ এবং রশিদা খানম দম্পতির ৪ পুত্র ও ৪ কন্যা সন্তানের মধ্যে সুজা ছিলেন দ্বিতীয়। পিতা শেখ মোকবুল আহমেদ ছিলেন উচ্চ শিক্ষিত মানুষ। দলের রাজনীতির সাথে সরাসরি জড়িত না থাকলেও বঙ্গবন্ধুর আদর্শ মনেপ্রাণে ধারণ করতেন। ছোটবেলা থেকে ডানপিটে সুজা ক্রীড়াঙ্গনের সাথে যুক্ত ছিলেন। ৬০’র দশকের শেষ ভাগে ছাত্র ইউনিয়নের একজন সক্রিয় কর্মী হিসাবে রাজনীতিতে উত্থান হলেও স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে বঙ্গবন্ধুর আদর্শের রাজনীতিতে জড়ান সুজা। ২৬ শে মার্চ মুক্তিযুদ্ধ শুরুর পূর্বে ১৯৭১ সালের প্রথমদিকে সরকারবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে জড়িত থাকায় গ্রেফতার হয়ে দীর্ঘদিন জেল খাটেন। মুক্তিযুদ্ধে চূড়ান্ত বিজয়ের একদিন পূর্বে মুক্তিযোদ্ধারা জেলের তালা ভেঙ্গে তাকে মুক্ত করে আনেন।
১৯৭৩ সালে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে খুলনা সদর (বর্তমান খুলনা-২) আসনের আওয়ামী লীগ প্রার্থী এম এ বারীর আহবানে সাড়া দিয়ে তিনি বঙ্গবন্ধুর আদর্শের রাজনীতিতে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে পড়েন। ক্রীড়াঙ্গনে একই সাথে যুক্ত থাকা বঙ্গবন্ধুর ভাগ্নে ইলিয়াস আহমেদ চৌধুরী তার আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে যুক্ত হওয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। খুলনা জেলা যুবলীগের প্রথম আহবায়ক সাবেক জনপ্রিয় ছাত্রলীগ নেতা ও মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক জাহিদুর রহমান জাহিদের সাথে প্রথমে যুবলীগের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হন। ৭৩’র নির্বাচনে এম এ বারীর বিজয়ে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধুর ভাগ্নে ইলিয়াস আহমেদ চৌধুরী এবং এস এম মোস্তফা রশিদী সুজা “খুলনা কিকার্স ক্লাব” প্রতিষ্ঠা করেন। পরবর্তীতে বঙ্গবন্ধুর জ্যেষ্ঠ পুত্র বিশিষ্ট ক্রীড়া সংগঠক শেখ কামাল এর আহবানে সাড়া দিয়ে ১৯৭৪ সালের ১৫ ই জানুয়ারী ক্লাবটির নাম পরিবর্তন করে “খুলনা আবাহনী ক্রীড়াচক্র” করেন ক্লাবটির দুই প্রতিষ্ঠাতা। আবাহনী ক্লাব প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনার সূত্র ধরে শেখ কামালের সাথে তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি হয়। প্রতিষ্ঠাকালীন তিনি এই ক্রীড়াচক্রের সাধারণ সম্পাদক এবং বঙ্গবন্ধুর ভাগ্নে ইলিয়াস আহমেদ চৌধুরী সভাপতি ছিলেন। ইলিয়াস চৌধুরীর মৃত্যুর পর তিনি সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। সাংস্কৃতিক অঙ্গনেও তার পদচারণা ছিল। আমৃত্যু তিনি খুলনা নাট্য নিকেতনের সভাপতি ছিলেন।
১৯৭৭ সালে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসাবে খুলনা পৌরসভা নির্বাচনে তৎকালীন লিয়াকত নগর ইউনিয়ন থেকে প্রথম কমিশনার নির্বাচিত হয়েছিলেন। সে সময় তিনি লিয়াকত নগর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদকও ছিলেন। ১৯৭৮ সালে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সম্মেলনের পর আওয়ামী লীগ (মালেক) এবং আওয়ামী লীগ (মিজান) দুটি বলয়ের সৃষ্টি হয়। মূল অংশের প্রতিনিধিত্ব ছিল মালেক-রাজ্জাক গ্রুপের। সে সময় তরুণ সুজা কে মিজান গ্রুপের পক্ষ থেকে খুলনা শহর আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক করা হলে তিনি জানতে পারার পর ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেন এবং দলের মূল বলয় মালেক-রাজ্জাক গ্রুপের সাথেই নিজেকে সম্পৃক্ত রাখেন এবং শহর আওয়ামী লীগের সদস্য মনোনীত হন। পরবর্তীতে আন্দোলন সংগ্রামে রাজপথে তার সাহসী ভূমিকা এবং সাংগঠনিক দক্ষতার কারনে
তিনি শহর আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ নেতায় পরিনত হন। সামরিক স্বৈরশাসক জিয়া, এরশাদের আমলে যখন রাজনীতি নিষিদ্ধ, প্রকাশ্যে কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচী পালন করা যেত না, তখন মোস্তফা রশিদী সুজা আবাহনী ক্লাবে বসে আওয়ামী লীগকে সুসংগঠিত করতে কাজ করেছেন। আওয়ামী লীগের অনেক কর্মকাণ্ড আবাহনী ক্লাবে বসে গোপনে সম্পাদন করতেন তিনি। ১৯৮৫ সালে অনুষ্ঠিত খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগের প্রথম সম্মেলনে মোস্তফা রশিদী সুজা শক্তিশালী সাধারন সম্পাদক প্রার্থী ছিলেন। তবে অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক সমীকরণের কারনে তখন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা এ্যাডঃ মঞ্জুরুল ইমামকে সভাপতি এবং তালুকদার আব্দুল খালেক কে সাধারণ সম্পাদক করেন। মোস্তফা রশিদী সুজা কে করা হয় সিনিয়র সহসভাপতি। ১৯৮৬ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলের অনেক সিনিয়র নেতাদের টপকে তিনি খুলনা-২ সদর আসন থেকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসাবে মনোনয়ন পান।
তার ভাই মোর্তজা রশিদী দারা ছিলেন ৮০’র দশকে খুলনা জেলা ছাত্রলীগের তুখোড় নেতা। ১৯৮০-‘৮১ জেলা ছাত্রলীগের সদস্য, ‘৮২ সালে সাংগঠনিক সম্পাদক, ১৯৮৩-‘৮৫ পর্যন্ত জেলা ছাত্রলীগের সাধারন সম্পাদক এবং ১৯৮৫-‘৯০ পর্যন্ত জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন দারা। সাবেক ডাকসু ভিপি সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমেদ এবং আব্দুর রহমান নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য এবং হাবীবুর রহমান হাবিব- অসীম কুমার উকিল নেতৃত্বাধীন কমিটির অন্যতম সহসভাপতি ছিলেন তিনি। ১৯৮৬-‘৮৭ ছাত্রসংসদ নির্বাচনে সুন্দরবন কলেজ ছাত্রসংসদের নির্বাচিত জনপ্রিয় ভিপি ছিলেন। আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার অত্যন্ত স্নেহভাজন দারা জেনারেল জিয়া, জেনারেল এরশাদের অবৈধ সামরিক শাসনবিরোধী ছাত্রআন্দোলনে খুলনার রাজপথের নেতৃত্বদানকারী দুয়েকজন শীর্ষ ছাত্রনেতার মধ্যে ছিলেন প্রথম সারিতে। আরেক ভাই মোজাফফর রশিদী রেজা ১৯৯২ – ২০০২ সাল পর্যন্ত ৩০ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন। ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের অন্যতম সদস্য রেজা বর্তমানে ওয়ার্ড কাউন্সিলর হিসেবে সুনামের সাথে কাজ করছেন।
৯০’র ডিসেম্বরে এরশাদ সরকারের পতনের পর ১৯৯১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মোস্তফা রশিদী সুজা খুলনা-৪ আসন থেকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসাবে প্রথমবারের মত সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। পরের বছর ১৯৯২ সালে জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে খুলনা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। নির্বাচিত হয়েই জেলা আওয়ামী লীগকে অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে সুসংগঠিত করেন। মোস্তফা রশিদী সুজা ছিলেন নেতাদের নেতা। তাকে নির্দ্বিধায় নেতা গড়ার কারিগর বলা যায়। তার হাত ধরে খুলনা জেলা এবং বিভিন্ন উপজেলায় অসংখ্য নেতা তৈরি হয়েছে, যারা সততা ও সুনামের সাথে দল ও সহযোগী সংগঠনের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব এবং জাতীয় সংসদের সদস্য সহ উপজেলা চেয়ারম্যান, পৌর মেয়র এবং বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। শেখ হাসিনার দুঃসময়ের সাহসী যোদ্ধা সুজা খুলনার আনাচে কানাচে মুজিব আদর্শকে শক্তিশালী ভিত্তির উপর দাঁড় করাতে সক্ষম হন। তিনি ছিলেন খুলনা জেলা আওয়ামী লীগের ইতিহাসের সবচেয়ে সফল এবং দীর্ঘমেয়াদী সাধারন সম্পাদক। ১৯৯৬ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি পুনরায় আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসাবে খুলনা-৪ আসন থেকে এমপি নির্বাচিত হন। তিনি শুধু নন, খুলনার ৬ টি আসনের মধ্যে ৫ টিতেই আওয়ামী লীগ প্রার্থী বিজয়ী হন। আওয়ামীলীগ সরকার গঠন করলে বঙ্গবন্ধু কন্যা তাকে প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদায় সরকার দলীয় হুইপের দায়িত্ব দেন। হুইপ থাকাকালে অবহেলিত রুপসা, তেরখাদা এবং দিঘলিয়া অঞ্চলের রাস্তাঘাট, ব্রিজ, কালভার্ট, মসজিদ, মাদ্রাসা এবং স্কুল,কলেজের ব্যাপক উন্নয়ন করেন। এ কারনে ঐ অঞ্চলের মানুষ তাকে এখনো তাদের উন্নযনের রূপকার হিসাবে মনে করেন। তার প্রতিষ্ঠিত বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে দিঘলিয়া এস এম মোস্তফা রশিদী সুজা মহিলা কলেজ, এস এম মোস্তফা রশিদী সুজা জামে মসজিদ, তেরখাদার চিত্রা মহিলা ডিগ্রি কলেজ, এস এম মোস্তফা রশিদী সুজা দাখিল মাদ্রাসা এবং রূপসা মহিলা কলেজ অন্যতম। কর্মিবান্ধব একজন দক্ষ সংগঠক ছিলেন সুজা। কোনো কর্মি তার সাথে একবার কথা বললেই তার প্রতি আকৃষ্ট হতেন। অসাধারণ সাংগঠনিক দক্ষতার অধিকারী সুজা ছিলেন একজন কর্মি অন্তঃপ্রাণ নেতা। দলের কর্মি এবং সাধারন মানুষের বিপদে-আপদে এবং প্রয়োজনে তাদের পাশে থাকতেন সবসময়।
২০০১ সালের ১ লা অক্টোবরের নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াত জোট রাষ্ট্রক্ষমতায় অধীন হলে সারাদেশে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের উপর অত্যাচার, নির্যাতনের স্টীম রোলার চালানো হয়। এর ধারাবাহিকতায় ২০০২ সালের শেষদিকে “অপারেশন ক্লিন হার্ট” নামক অভিযান পরিচালনা করে সরকার। শত শত আওয়ামী লীগ নেতাকর্মিকে নির্বিচারে হত্যা করা হয়। সে সময় দুই সহোদর সহ এস এম মোস্তফা রশিদী সুজা কে গ্রেফতার করে নির্মম, নিষ্ঠুর ও অমানবিক নির্যাতন চালানো হয়েছিল। ড্রিল মেশিন দিয়ে তার পা ছিদ্র করা হয়েছিল। ২০০৭ সালে ১/১১ সরকার ক্ষমতা গ্রহনের পর জননেতা মোস্তফা রশিদী সুজার পরিবারের উপর পুনরায় নির্যাতনের খড়গ নেমে আসে। মিথ্যা, ভিত্তিহীন দুর্নীতির মামলার আসামী করা হয় তাকে। দেশকে বিরাজনীতিকরনের অংশ হিসেবে দেশের প্রথম সারির ৫০ জন রাজনীতিবিদকে শীর্ষ দূর্নীতিবাজ হিসেবে আখ্যা দিয়ে প্রথম যে তালিকা সে সময় প্রকাশিত হয়েছিল সেখানে মোস্তফা রশিদী সুজার নাম ছিল। ফলে তিনি প্রবাস জীবনে যেতে বাধ্য হন। এ কারনে ২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি প্রার্থী হতে পারেননি। ২০০৮ সালের ডিসেম্বরের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসীন হওয়ার পর তিনি দেশে ফিরে আসেন এবং আদালতের মুখোমুখি হন। আদালতের মাধ্যমেই মামলার নিষ্পত্তি হয়। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারীর নির্বাচনে তিনি পুনরায় আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে জনগণের ভোটে এমপি নির্বাচিত হন। ২০১৭ সালে তিনি অসুস্থ হলে সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে শারীরিক পরীক্ষা নিরীক্ষার পর রিপোর্টে তার দুইটি কিডনী অকেজো হওয়ার খবর প্রকাশিত হয়।
জেলা আওয়ামী লীগের অসংখ্য নেতাকর্মী তখন নেতার জীবন বাঁচাতে কিডনী দান করতে ইচ্ছা প্রকাশ করেন যা ছিল দেশের ইতিহাসে একটি নজিরবিহীন ঘটনা। নেতার প্রতি কর্মিদের এই ভালোবাসা প্রমাণ করে নেতা হিসেবে তিনি কতটা জনপ্রিয় ছিলেন। তার কিডনী প্রতিস্থাপনের প্রয়োজন হলে খুলনা জেলা শ্রমিকলীগের সহ-সভাপতি ও শ্রীফলতলা ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য আলম হাওলাদার তার একটি কিডনী দান করেন। সিঙ্গাপুরের ঐ হাসপাতালে সফল অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে কিডনী প্রতিস্থাপন করা হয়।
কিডনী প্রতিস্থাপনের পর তিনি কিছুটা সুস্থ হয়ে ২০১৮ সালের ৭ এপ্রিল দেশে ফেরেন। ৭ই এপ্রিল শহীদ হাদিস পার্কের বিশাল সমাবেশে তিনি কিডনী দাতা, বঙ্গবন্ধুর ভ্রাতুষ্পুত্র শেখ হেলাল উদ্দিন এমপি এবং খুলনাবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। সেদিন হাদিস পার্ক ও পাশ্ববর্তী এলাকা জনসমূদ্রে পরিনত হয়েছিল। হাদিস পার্ক অভিমুখী শতশত মিছিলের লাখো মানুষের শ্লোগানে মুখরিত হয়েছিল আশপাশের পুরো এলাকা। লাখো মানুষের ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে তাদের মাঝে তিনি ফিরেছিলেন কৃতজ্ঞতা প্রকাশের জন্য। সেদিনের সেই সমাবেশে আমার উপস্থিত থাকার সৌভাগ্য হয়েছিল। নেতার সুস্থ হয়ে ফিরে আসার খবরে মানুষের মধ্যে সেদিন বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস দেখেছিলাম। তবে সেদিনের সেই উচ্ছ্বাস বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। কারন মাত্র ৩ মাস ২০ দিনের মাথায় জীবনাবসান ঘটে তাদের প্রিয় নেতার।
আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধু হত্যা পরবর্তী অবৈধ সামরিক শাসকদের বিরুদ্ধে মুজিববাদ প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে খুলনার রাজপথে অগ্রনী ভূমিকা পালন করেছেন মোস্তফা রশিদী সুজা এবং তার পরিবারের সদস্যরা। ৭৫’র ১৫ ই আগস্ট পরবর্তী চরম দুঃসময়ে অনেকে জেল, জুলুম, অত্যাচার, নির্যাতন, হামলা, মামলার ভয়ে অথবা সুযোগ-সুবিধার লোভে বিএনপি কিংবা জাতীয় পার্টিতে যোগ দেন। তবে সুজার পরিবার মুজিববাদে ছিলেন অটল, অবিচল। বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক সুজা আজ আমাদের মাঝে নেই। বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের অধিকারী এই রাজনীতিকের কর্মময় জীবনের পরিসমাপ্তি ঘটে ২০১৮ সালের ২৭ জুলাই। হাজারো ভক্ত অনুসারীকে শোক সাগরে ভাসিয়ে না ফেরার দেশে চলে গেছেন। তবে রেখে গেছেন দেশপ্রেমিক আদর্শিক মুজিববাদী বিশুদ্ধ রক্তের উত্তরসুরীকে। তার পু্ত্র এস এম খালেদীন রশিদী সুকর্ন এবং তিন ভাইসহ পরিবারের সদস্যরা তার দেখানো পথে শত বাঁধা বিপত্তি মোকাবিলা করে মুজিব আদর্শের ঝান্ডা ধরে রেখেছেন। সুকর্ন বর্তমানে খুলনা জেলা পরিষদের নির্বাচিত সদস্য এবং খুলনা জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। সমগ্র খুলনা জেলায় বিশেষ করে খুলনা-৪ সংসদীয় আসনের ছাত্র ও যুব সমাজের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয় তিনি। অনেকেই তাকে আগামি দিনের সম্ভাবনাময়ী পরিচ্ছন্ন নেতৃত্ব হিসেবে বিবেচনা করেন।
আজ ২৭ জুলাই, ২০২২ -মোস্তফা রশিদী সুজার চতুর্থ মৃত্যুবার্ষিকী। মৃত্যুর চার বছরেও তিনি হাজারো নেতাকর্মী এবং সাধারন মানুষের অন্তরে বেঁচে আছেন। সময়ের বিবর্তনে তার এবং তার পরিবারের অবদান আমরা হয়তো একদিন ভুলে যাব। কারন আওয়ামী লীগের এখন সুদিন। বঙ্গবন্ধুর নাম কিংবা জয় বাংলা শ্লোগান উচ্চারণ নিষিদ্ধের সেই দুঃসময় মনে করার সময় কোথায় নেতাদের! আপাতত রাজনীতির আলট্রা ভায়োলেট রশ্মিকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখা আওয়ামী লীগ ওজোনস্তর সম্পর্কে উদাসীন হলেও দুঃসময় এলে তাদের ভাবতেই হবে সুজার অনুপস্থিতিতে ৭৫ পরবর্তী আল্ট্রাভায়োলেট রশ্মির সেই উত্তাপ কি তারা আবার অনুভবের শঙ্কায় থাকবে নাকি তার মত নতুন কোনো ওজোনস্তরের সন্ধান পাবে?
মৃত্যুবার্ষিকীতে বিনম্র শ্রদ্ধা ভাইজান। লাখো খুলনাবাসীর দোয়ায় নিশ্চয়ই ওপারে ভালো আছেন।
লেখকঃ মোঃ নজরুল ইসলাম, কলামিস্ট এবং তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক, ১৬ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ, বয়রা, খুলনা মহানগর।