চলতি রবি মৌসুমে খুলনাঞ্চলের প্রায় ৭শ বিঘা ঘেরের পতিত নরম মাটির জমিতে কৃষি গবেষনা ইনিষ্টিটিউট সরেজমিন গবেষনা বিভাগ খুলনা পাইলট উৎপাদন প্রকল্পের আওতায় লবন সহনশীল বারি ১৯ জাতের সরিষা আবাদ সম্প্রসারন করা হয়েছে। বিদেশ থেকে ভোজ্য তেল আমদানী নির্ভরতা কমাতে কৃষি মন্ত্রনালয় ব্যাপক কর্মসুচি গ্রহন করে। তারই থারাবাহিকতায় বাংলাদেশ কৃষি গবেষনা ইনিষ্টিটিউট সরেজমিন গবেষনা বিভাগ দৌলতপুর খুলনার পাইলট প্রদর্শনী প্লটের পাশাপাশী ঘেরের কুষকদের প্রশিক্ষন,বিনা মুল্যে সার,বিজ ও জমি তৈরিতে আর্থিক সহায়তায় দিয়ে উপকুলের লবনাক্ত এলাকায় বারি ১৯ জাতের সরিষার আবাদ সম্প্রসারন করছে।
সরেজমিন গবেষনা বিভাগ খুলনা পাইলট উৎপাদন কর্মসূচির ২৩-২৪ অর্থ বছরে পার্টনার প্রকল্প থেকে বারি সরিশা ১৪,বারি সরিষা ১৭,সরিষা ১৮, সরিষা ১৯ জাতের প্রায় ৭শ বিঘা ঘেরের পতিত জমিতে চাষ করা হয়। এই সরিষার আবাদ সম্প্রসারন করা হয়েছে খুলনা,বাগেরহাট ও সাতক্ষীরা জেলার লবণাক্ত ঘেরে। বারি ১৯জাতের সরিষা ভালো ফলন এবং লবন সহনশীল জাত। এই জাতের সরিষার উৎপাদন বিঘা প্রতি ৮থেকে ৯মন । বেশি ফলনের আশায় ব্য্পক হারে বারি ১৯ জাতের সরিষার অবাদ করছে স্থানীয় কৃষকরা। প্রথমবার এই নতুন জাত পেয়ে কৃষক ধারনা করছে প্রায় ৮ থেকে ৯ মন ফলন হতে পারে। বিনা চাষে শুধু কাদা-কাদা নরম জমিতে সার বীজ ও শ্রমিক বাবদ বিঘা প্রতি খরচ ৪হাজার টাকা। আর প্রতিবিঘায় সরিষার উৎপান ৮মন হিসেবে প্রতি মন সরিষা ৩হাজার টাকা বিক্রি করলে বিঘাপ্রতি কৃষকের আয় খরচবাদে প্রায় বিশ হাজার টাকা। এই সময় বোরো ধান চাষ করলে বিঘা প্রতি একজন কৃষক চার থেকে পাঁচ হাজার টাকার বেশী লাভবান হননা তাই চলতি রবি মৌসুমে ঘেরের কৃষকরা লবন সহনশীল বারি ১৯ জাতের সরিষা আবাদে ঝুকে পড়ছেন।
সরেজমিন গবেষনা বিভাগ খুলনা সুত্র জানায়,পাইলট উৎপাদন কর্মসূচির আওতায় ২০২৩-২০২৪ অর্থ বছরে পার্টনার প্রকল্প থেকে বারি সরিষা-১৮, বারি সরিষা-১৯ জাতের ৭০০ বিঘা জমিতে চাষ হয়। যা খুলনা, বাগেরহাট ও সাতক্ষীরা জেলা বাস্তবায়িত হয়েছে। এর মধ্যে স্বল্প জীবনকাল বারি সরিষা-১৪ ও ১৭ এবং দীর্ঘ জীবনকাল জাত বারি সরিষা – ১৮-১৯। সরিষার জাত গুলোর মধ্যে বারি সরিষা – ১৯ একটি লবন সহনশীল জাত। যার জীবনকাল ১০৫দিন তবে সরিষার ফলন বিঘা প্রতি প্রায় ৯ মণ। রবি মৌসুমে দক্ষিনাঞ্চলের ঘের গুলোতে পানি স্থায়িত্ব পায় এবং বোরো ধানের চাষ করে। সরজমিন বিভাগ চলতি বছর সাতক্ষীরা জেলার দেবহাটায় কৃষক নাজমুল শাহাদাত ১০ বিঘা ঘেরে প্রথম বারের মত বারি সরিষা – ১৯ চাষ হয়। সরজমিন গবেষণা বিভাগ থেকে পার্টনার প্রকল্পের মাধ্যমে সার ও বীজ দেওয়া হয়। প্রথমবার এই নতুন জাত পেয়ে কৃষক ধারনা করছে প্রায় ৮ মন ফলন হতে পারে। বিনা চাষে শুধু কাদা-কাদা নরম জমিতে সার বীজ ও শ্রশিক বাবদ খরচ কম হওয়ায় তাদের ঘেরে বারি ১৯ জাতের সরিষা আবাদ করছেন। কৃষক নাজমুল শাহাদাতে ঘেরে সরিষার আবাদ দেখে আশপাশের কৃষকরা তার কাছে বীজ চাচ্ছে। তারা আগামীতে তাদের ঘেরে রবি মৌসুমে লাভজনক বারি ১৯ জাতের সরিষা আবাদ করবেন। দক্ষিনাঞ্চলের ঘের গুলোতে সরিষার বাম্পার ফলন আশা করছেন কৃষকরা।
দেবহাটার কৃষক নাজমুল শাহাদাত বলেন,অল্প খরচ ও স্বল্প সময়ে সরিষার ফলন ঘরে তোলা যায়। ঝড়-বৃষ্টি না হওয়ার চলতি মৌসুমে সরিষার ফলনও হয়েছে বেশ। সরিষার বর্তমান বাজারদর পায় মণ প্রায় ৩ হাজার টাকা। আরো বলেন রোদে শুকিয়ে গুদামজাত করে পরে বিক্রি করতে পারলে সরিষার বাজার দর আরো বেশি পাওয়া যাবে বলে জানান তিনি।
বাংলাদেশ কৃষি গবেষনা ইনিষ্টিটিউট সরেজমিন গবেষনা বিভাগ দৌলতপুর খুলনার প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা কৃষিবিদ ড. হারুনুর রশিদ বলেন, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কৃষির ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন। তিনি কৃষিবিদ ও কৃষি বিজ্ঞানীদের বিভিন্ন তেল জাতীয় ফসলগুলো গবেষণার মাধ্যমে ফিরিয়ে আনার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। স্বল্প সময়ের মধ্যে কৃষককে একের অধিক ফসল ফলানোর জন্য নানাভাবে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। তাছাড়া আমাদের মাঠ পর্যায়ের অফিসারগণ সার্বক্ষণিক মাঠে কৃষকের সাথে কাজ করছেন। যাতে কৃষকের কোন প্রকার সমস্যার সৃষ্টি না হয়। তিনি জানান, সরিষা চাষের প্রতি কৃষকদের উৎসাহিত করার জন্য বছরের প্রথমেই কর্মপরিকল্পনা তৈরি করা হয়েছিল।
এ বিষয়ে কৃষকদের প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন তারা। আবহাওয়া ভাল থাকার কারনে সরিষা ক্ষেত খুব ভালো দেখা যাচ্ছে ফলে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব হবে বলেও তিনি জানান। ভালো দাম পেলে কৃষকেরা ভবিষ্যতে সরিষা চাষের প্রতি আরো আগ্রহী হবেন। তিনি আরো বলেন,আমরা অল্প জমি ব্যাবহার করে কিভাবে এ অঞ্চলের কৃষকরা অধিক ফলন এবং লাভবান হবেন সেই দিক লক্ষ রেখে গবেষনা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি। আমাদের গবেষনার সফলতা কৃষকদের মাঝে ছড়িয়ে দিতে তাদেরকে সংশ্লিষ্ঠ ফসল উৎপাদনের প্রশিক্ষনের পাশাপশী সার,বীজ দিয়ে সহায়তা প্রদান করি। কৃষকরা যাতে তাদের উৎপাদিত ফসলের ন্যায্য মুল্যে পায় সেই ব্যাপারে আমরা মনিটরিং করে থাকি।