হাসপাতালে সকাল ৯টা থেকে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত ঔষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও মানছে না কেউ। রোগীরা বের হলেই ব্যবস্থাপত্র নিয়ে চলে টানাহেঁচড়া। এতে বিব্রতকর অবস্থায় পড়ছেন রোগীরা।
সরেজমিন বুধবার সকাল ১১ ঘটিকায় খুলনা জেনারেল হাসপাতালে দেখা যায়, চিকিৎসকের কক্ষ ও টিকিট কাউন্টারের সামনে ঔষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের ভিড় লেগেই আছে।
এর বাইরেও প্রতিনিয়তই চোখে পড়ে এসব প্রতিনিধিদের নানান দৃশ্য। সরকারি এ হাসপাতালটিতে রোগীরা ডাক্তারের কক্ষ থেকে বের হওয়া মাত্রই বিভিন্ন ঔষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিরা তাদের পথে দাঁড় করিয়ে ব্যবস্থাপত্র টেনে নিয়ে সেটির ছবি তুলে রাখেন।
দেখা যায় বিভিন্ন ঔষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিরা জরুরি বিভাগের চিকিৎসকের কক্ষের সামনে ১০-১২ জন প্রতিনিধি ভিড় করে আছেন। সেই ভিড়ে ঠেলে চিকিৎসকের কক্ষে ঢুকতে হচ্ছে রোগীদের। এভাবেই প্রতিদিন সরকারি এ হাসপাতালটিতে বিভিন্ন ঔষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের দৌরাত্ম্য বেড়েই চলছে। ফলে প্রতিনিয়ত দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন রোগীরা।
শুধু তাই না কোম্পানির দেওয়া চাহিদা পূরণ করতে নিজেরাই টিকিট কাউন্টার থেকে নানা নামে একজন প্রতিনিধি ৫/৬ টি টিকিট সংগ্রহ করে তৈরি করছে প্রেসক্রিপশন, সিস্টাররাও তাদের কাছে নির্দ্বিধায় টিকিট বিক্রি করছেন। মনে হচ্ছে বন্ধুত্বের বন্ধন গড়ে তুলেছেন তারা। টিকিট সংগ্রহ করে তাতে নিজেরা লিখছেন তার কোম্পানির ঔষধের নাম, দূর থেকে দেখলে মনে হবে এ যেন সরকারি কোন বড় মাপের ডাক্তার।
ঔষধ কোম্পানির প্রতিনিধি কয়েকজনের সঙ্গে কথা হলে তারা বলেন, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আমাদের ডাক্তারের সঙ্গে ভিজিট করার অনুমতি দিয়েছেন। তাই আমরা ডাক্তার ভিজিটে আসি। এর বাইরে কিছুই বলতে পারবো না। নিজেদের তৈরি প্রেসক্রিপশন এর কথা জানতে চাইলে তারা বলে আমাদের কোম্পানিতে প্রতিদিন ২৫ থেকে ৩০ টি প্রেসক্রিপশন প্রদর্শন করতে হয়, তাই যখন আমাদের এই প্রেসক্রিপশন সংগ্রহ করা সম্ভব না হয় তখন এই বিকল্প পন্থা অবলম্বন করতে হয়। আর এই প্রেসক্রিপশনের টিকিট পেতে সিস্টাররা আমাদের সহযোগিতা করে।
হাসপাতালে ভর্তি এক রোগীর স্বজন বলেন, এই সকল প্রতিনিধিগণ প্রতিদিন সকাল থেকেই তারা সেখানকার বিভিন্ন ওয়ার্ডে অবাধ বিচরণ করতে থাকেন।
এ ব্যাপারে খুলনার সিভিল সার্জন ডা. সুজাত আহমেদ বলেন,হাসপাতাল চলাকালীন তাদের ভেতরে আসার নিয়ম নেই, পাশাপাশি তিনি বিষয়টি নিয়ে জেনারেল হাসপাতালের আরএমও’র সংঙ্গে আলোচনা করতে বলেন।
বিষয়টি নিয়ে জেনারেল হাসপাতালের আরএমও ডা. মুরাদ এর সাথে কথা হলে তিনি জানান, সপ্তাহে দুদিন ভিজিটে আসতে পারবেন তারা সেটিও নির্ধারিত সময়ে। হাসপাতাল চলাকালীন তাদের ভেতরে আসার কোন নিয়ম নেই, তিনি আরও বলেন এই সকল প্রতিনিধিদের কারণে আমরা নিজেরাও অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছি, এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে স্থানীয় থানায় অবহিত করা আছে,তবে আগামীতে আমাদের পক্ষ থেকে আরো কঠোর পদক্ষেপ নেয়া হবে।