সব কিছু
facebook channelkhulna.tv
খুলনা সোমবার , ১০ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ২৫শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
খুলনায় ভুয়া চিকিৎসকদের দৌরাত্ম্য থামছে না; অপচিকিৎসায় ভোগান্তিতে রোগীরা | চ্যানেল খুলনা

খুলনায় ভুয়া চিকিৎসকদের দৌরাত্ম্য থামছে না; অপচিকিৎসায় ভোগান্তিতে রোগীরা

চিকিৎসার নামে খুলনা জেলা ও মহানগরীতে চলছে প্রতারণা। আর্তমানবতার সেবার বদলে যেভাবেই অনৈতিকভাবে অর্থ আদায় এ পেশার সুনামকে জিম্মি করে ফেলা হয়েছে। পাশাপাশি ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে ওঠা কথিত চিকিৎসক হাসপাতাল বা ক্লিনিকগুলোতে এখন ভুয়া ডিগ্রিধারী ডাক্তারের ছড়াছড়ি। নানা নামের বাহারি ডিগ্রি ব্যবহার করে চকচকে সাইনবোর্ড সেঁটে নিরীহ ও সাধারণ রোগীদের প্রতারিত করে আসছে তারা। ফলে জনস্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রে এক চরম অরাজকতা বিরাজ করছে।

প্রতিনিয়তই খুলনা ও আশপাশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ভুয়া ডাক্তারের ভুল চিকিৎসার খবর মিলছে। সাড়া খুলনায় এই অবস্থা এখন উদ্বেগজনক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। নগরীর বেশ কিছু স্থানে চিকিৎসা সেবার নামে চলছে রমরমা ব্যবসা। অলিগলিতে ব্যাঙের ছাতার মত গজিয়ে ওঠা এসকল কথিত চিকিৎসকের কারনে নানা ভোগান্তিতে পড়ছেন রোগীরা। কোনো ধরনের মেডিকেল শিক্ষা অথবা ডিগ্রী ছাড়াই চিকিৎসকের লেবেল লাগিয়ে নিয়মিত রোগী দেখছেন তারা। ভুয়া ডিগ্রি ব্যবহার করে বছরের পর বছর রোগী দেখছেন, হাতিয়ে নিচ্ছেন মোটা অঙ্কের ফি। এসব ভুয়া ডাক্তার-দালালদের দৌরাত্ম্য, ভুল চিকিৎসা, অবহেলা আর চিকিৎসা-বাণিজ্যের নির্মমতায় একের পর এক রোগী মারা যাচ্ছেন।

অনুসন্ধানে জানা যায়, খুলনার নিউ মার্কেট সংলগ্ন আলোর গলির পাশে একজন কথিত চিকিৎসক নিয়মিত রোগী দেখেন। বিকাল থেকেই রোগীর সিরিয়াল লেগে থাকে তার চেম্বারে। স্থানীয়ভাবে বেশ খ্যাতি কুড়িয়েছেন ইফতেখার আহমেদ নামক এই কথিত চিকিৎসক। ১ বছরের শিশু থেকে বৃদ্ধ,চিকিৎসা নিলে ভালো হবে যে কোনো রোগ। রোগীদের এমনটি প্রত্যাশা দেন এই কথিত চিকিৎসক। তবে,কথায় আছে অল্প বিদ্যা ভয়ংকর। এই কথার জ্বলন্ত উদাহরন যেন তার অপচিকিৎসার স্বীকার কয়েকজন রোগী। নগরীর মোল্লাবাড়ির মোড় থেকে রুপা আক্তার নামক এক রোগী জানান,দীর্ঘদিন গলা-ফোলাসহ গাইনী বিষয়ক রোগে আক্রান্ত হয়ে ডাক্তার সাহেবের কাছে যাই। কিন্তু তার দেওয়া ঔষধ খেয়ে আরো অসুস্থ হয়ে পড়েছি।

এছাড়া শিববাড়ি ইব্রাহিম মিয়া সড়কের এক কাপড় ব্যাবসায়ী বলেন, আমার ২ বছরের মেয়ে ঠান্ডাজনিত রোগে ভুগছে। স্থানীয় চিকিৎসক হিসেবে তার নিকট চিকিৎসা নেওয়ার পর বাচ্চার পেট ফুলে ওঠে। পরে শিশু হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়। শুধু অপচিকিৎসার চর্চা নয়, এই কথিত চিকিৎসকের বিরুদ্ধে রয়েছে বিক্রয় নিষিদ্ধ “ফিজিশিয়ান স্যাম্পল”এর ঔষধ বিক্রির অভিযোগ। রেজিষ্টার্ড চিকিৎসকের পরীক্ষামূলক প্রয়োগের বিক্রয় নিষিদ্ধ এই ঔষধ রোগীর নিকট বিক্রি করছেন এম আর পি মূল্যে।

রাহেলা বেগম নামক এক রোগী বলেন, আমরা তো বুঝিনা,কোনটা স্যাম্পল আর কোনটা স্যাম্পল ছাড়া ঔষধ। ইফতেখার ডাক্তার যা দেয়,তাই কিনে খাই। এছাড়া নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক রোগী বলেন, ভিটামিনের পটে “বিক্রয় জন্য নহে” লেখা থাকলেও তিনি আসল মূল্যে দাম নেন।

উল্লেখ্য, নিজেকে চিকিৎসক দাবী করা ইফতেখার আহমেদ দীর্ঘদিন খুলনা গণপূর্ত’র ইলেকট্রনিক এন্ড ম্যাকানিকাল (ই এম) শাখার প্রধান সহকারী হিসেবে কর্মরত ছিলেন। সম্প্রতি তিনি অবসর জনিত ছুটি এলপিআর আছেন। গণপূর্তে কর্মরত থাকাকালীন সময়ে তিনি বিভিন্ন মেডিকেল কোর্সসহ সাময়িক শিক্ষায় অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। একটি সরকারি কার্যালয়ে গুরুত্বপূর্ণ শাখায় কর্মরত থাকাকালীন সময়ে সংশ্লিষ্ট কার্যালয়ের বিষয় বহির্ভূত কোনো শিক্ষার্জন করার কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে রয়েছে সংশয়।

বিষয়টি নিয়ে গণপূর্তের একজন কর্মকর্তার নিকট জানতে চাইলে বলেন, চাকরিতে কর্মরত অবস্থায় জেনারেল প্রাকটিশনার এর শিক্ষা অর্জনের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ’র অনুমতি নেওয়া প্রয়োজন। তবে তিনি জেনারেল প্রাকটিশনারের শিক্ষা অর্জনে কোন অনুমতি বা শিক্ষা বর্ষের মেয়াদকালীন কোন ছুটি গ্রহন করেনি । সেক্ষেত্রে তার জেনারেল প্রাকটিশনার সার্টিফিকেট দিয়ে কোনরুপ চিকিৎসা সেবা দেয়া অবৈধ ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুদকের এক কর্মকর্তা জানান, নিজ কর্মস্থলের উচ্চতর বেতন স্কেল বা প্রমোশনের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ’র অনুমতি ব্যাতিত কোন শিক্ষা সার্টিফিকেট গ্রহনযোগ্য নয় । তবে তিনি যে জেনারেল প্রাকটিশনার এর শিক্ষা অর্জন করছেন সেটা যথাযথ কর্তৃপক্ষকে অবহিত না করে তার ঐ শিক্ষা বর্ষের বিষয়ে সরকারের আর্থিক ক্ষতির বিষয়ে অভিযোগ পেলে তদন্ত পূর্বক ব্যাবস্থা গ্রহন করা হবে ।

কথিত চিকিৎসক ইফতেখার আহমেদ বলেন, আমার প্রেসক্রিপশন করার অনুমতি আছে। এতদিন যেহেতু কোনো ঝামেলা হয়নি, সেক্ষেত্রে আমি নিয়মিত রোগী দেখি। তবে স্যাম্পলের বিষয়ে বলেন, এগুলো কোম্পানী থেকে দিয়ে যায়। তাই আমি রোগীদের কাছে বিক্রি করি । স্যাম্পল বিক্রি নিশিদ্ধ যেনেও কেনো স্যাম্পল বিক্রি করেন এমন প্রশ্নে তিনি নিরব থাকেন । ভুয়া চিকিৎসক ইফতেখার আহমেদের অনুমোদন না থাকলেও তিনি এন্টিবাইটিক, হাইএন্টিবাইটিক, শিশুদের সাদা কাগজে প্রেসক্রিপশন দিয়ে থাকেন । এছাড়াও তিনি পট ঔষদ,ফ্রি স্যাম্ফল দেদার্সে বিক্রি করছেন যা দন্ডনীয় অপরাধ ।

খুলনা জেলা ও মহানগরীর বেশ কয়েকটি স্থানে যত্রতত্র গড়ে উঠেছে দন্ত চিকিৎসকের চেম্বার। কিছুদিন দাতের চিকিৎসকদের সহকারী হিসেবে কাজ করে পরবর্তীতে নিজেই হয়ে যাচ্ছেন ডাক্তার। আর নব চিকিৎসকেরাই নগরীর অলিগলিতে চেম্বার খুলে বসেছেন । নামমাত্র যন্ত্রপাতি আর একটি ফ্লাট ভাড়া নিয়ে শুরু করে দিচ্ছে প্রতারণা ব্যবসা। আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর চোঁখ ফাঁকি দিয়ে চালিয়ে যাচ্ছেন ভুয়া চিকিৎসা ব্যবসা।

খুলনা রুপসার জে পি ডি ডেন্টাল কেয়ার’র চিকিৎসক লিটন বৈরাগী’র বিরুদ্ধে অপচিকিৎসার অভিযোগ অহরহ। কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার্জন ছাড়াই দাতের চিকিৎসা করছেন তিনি। দন্ত চিকিৎসার বিধান অনুযায়ী, বি ডি এস ব্যতিত কোনো ব্যক্তি প্রেসক্রিপশন কিংবা রোগীর চিকিৎসা করতে করতে পারবে না। নিয়ম না থাকলেও রোগীর ব্যবস্থাপত্রে নিজেকে নামের পূর্বে ডাক্তার” শব্দ ব্যবহার করছেন।

র‍্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিভিন্ন ইউনিটের উদ্যোগে পরিচালিত ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে অর্ধশতাধিক ভুয়া ডাক্তারকে আটক এবং তাদের জেল-জরিমানা করা হয়। গত বছর রুপসা বাজারের মাদারীপুর মেডিকেল হলের মালিক র‍্যাবের হাতে আটক হয়। আটকের ১০ দিন পরে বের হয়ে পূর্বের ন্যায় আবারো রোগী দেখেন তিনি। ডুমুরিয়া বাজারে অভিযান পরিচালনা করে ভূয়া চিকিৎসক তন্ময় অধিকারী নামে এক ব্যক্তিকে আটক করে। পরে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে তাকে ১ মাসের সশ্রম কারাদন্ড প্রদান করা হয়। জেল থেকে বেড়িয়ে আবার শুরু করেন ভুয়া চিকিৎসকের ব্যাবসা।

শুধু ভুয়া চিকিৎসক ইফতেখার আহমেদেই নয় খুলনার বটিয়াঘাটা, লবনচরা, হরিনটানা, দিঘলিয়া, দৌলতপুর, খালিশপুর, ফুলবাড়িগেটসহ প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোর অধিকাংশ রোগী ভুয়া চিকিৎসক দ্বারা অপচিকিৎসার স্বীকার হয়ে জীবন মৃত্যুর সাথে লড়াই করছে ।

এ বিষয়ে খুলনা জেলার সিভিল সার্জন ডাঃ সুজাত আহমেদ বলেন, একজন গ্রাম্য চিকিৎসক হলে তিনি সেবা দিতে পারবেন। সাদা কাগজে প্রেসক্রিপশন করা এবং নামের আগে ডাক্তার লেখার কোনো ইখতিয়ার নেই । আমরা এসকল ভুয়া চিকিৎসকদের চিহৃিত করে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যাবস্থা গ্রহন করবো।

উল্লেখ্য, ২০১৮ সালের জুলাই মাসে খুলনা মহানগরীর বিভিন্ন ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ফার্মেসিতে তৎকালীন র‍্যাব-৬, খুলনার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এইচ এম আনোয়ার পাশা এবং তৎকালীন খুলনার সিভিল সার্জনের প্রতিনিধি সিনিয়র মেডিকেল অফিসার ডাঃ মোঃ মাসুদ সাত্তারের সমন্বয়ে মোবাইল কোর্টের অভিযান পরিচালিত হয়। এ সময় এমবিবিএস ও বিশেষজ্ঞ ডাক্তার পরিচয়ে রোগী দেখার সময় সাতজনকে হাতেনাতে আটক করে তৎক্ষণাৎ জরিমানা ছাড়া কারাদন্ড প্রদান করে খুলনা কারাগারে পাঠানো হয়। দন্ডিত ভুয়া এমবিবিএস ডাক্তাররা ওই সময়ে স্বীকার করেন, ঢাকা, চট্টগ্রাম ও খুলনাসহ সারা দেশে তাদের মতো আড়াই শতাধিক ভুয়া এমবিবিএস ডাক্তার রয়েছেন। তারা প্রায়ই স্থান পরিবর্তন করেন এবং কৌশলে সহজ-সরল মানুষকে ফাঁকি দিয়ে চিকিৎসা ব্যবসা চালিয়ে আসছেন।

https://channelkhulna.tv/

আইন ও অপরাধ আরও সংবাদ

তালায় কপোতাক্ষ নদ থেকে বৃদ্ধার লাশ উদ্ধার!

নিশ্চিত মৃত্যু যেনেও ১০ হাজার টাকার বিনিময়ে বায়ুপথে ইয়াবা বহন আটক এক

ফকিরহাট স্ত্রী হত্যার অভিযোগ, স্বামী পলাতক

ফকিরহাটে মাদক কারবারীকে কারাদন্ড ও জরিমানা

আয়নাঘরের সঙ্গে আমার কোনো সম্পর্ক ছিল না: জিয়াউল আহসান

চোরাই গরু বহনকারী পিকআপসহ আটক ৩

চ্যানেল খুলনা মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন  
DMCA.com Protection Status
সম্পাদক: মো. হাসানুর রহমান তানজির
It’s An Sister Concern of Channel Khulna Media
© ২০১৮ - ২০২৪ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত | চ্যানেল খুলনা.বাংলা, channelkhulna.com.bd
যোগাযোগঃ কেডিএ এপ্রোচ রোড (টেক্সটাইল মিল মোড়), নিউ মার্কেট, খুলনা।
প্রধান কার্যালয়ঃ ৫২/১, রোড- ২১৭, খালিশপুর, খুলনা।
ফোন- 09696-408030, 01704-408030, ই-মেইল: channelkhulnatv@gmail.com
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য অধিদফতরে অনলাইন নিউজ পোর্টাল নিবন্ধনের জন্য আবেদিত।