খুলনার ময়ূর নদীতে সেতু নির্মানে প্রায় সাত কোটি টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে সরকারের। সড়ক ও জনপথের (সওজ) ত্রুটিপূর্ণ নকশা এবং সরকারের অন্যান্য দপ্তরের সাথে সামঞ্জস্যহীন সিদ্ধান্তে এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। বাংলাদেশ অভ্যন্তরিন নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ ইতিমধ্যে এটি ভেঙে নতুন সেতু নির্মানের পরামর্শ দিয়েছে। তবে সওজ কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে কোন মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।
সড়ক ও জনপথ সূত্র জানিয়েছে, খুলনার ময়ূর নদীতে ব্রিটিশ আমলে তৈরি করা গল্লামারি সেতুটি চলাচলের অনুপোযোগী হয়ে পড়লে খুলনা সওজ বিভাগ এখানে নতুন সেতু নির্মানের উদ্যোগ নেয়। ২০১৩ সালে ৬ কোটি ৯০ লাখ টাকা ব্যয়ে এ সেতুন নির্মান কাজ শুরু করে সরকারি এ সংস্থাটি। ২০১৫ সাল থেকে সেতুটি চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। তবে সেতু নির্মানে পানি উন্নয়ন বোর্ড, বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষ এবং সিটি কর্পোরেশন কোন দপ্তরের সাথেই সমন্বয় করেনি। সংস্থাটি নিজেদের মত করে সেতু নির্মানের ফলে নানা জটিলতা দেখা দেয়। নতুন সেতুর কারনে নদীতে নৌযান চলাচল স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে গেছে। বর্তমানে নদীর পানি থেকে মাত্র ৩ ফুট উচ্চতায় নির্মাণ করা হয়েছে সেতুর গার্ডার। বর্ষাকাল বা অন্যান্য সময়ে পানির উচ্চতা বেড়ে গেলে গার্ডারের অর্থাৎ ব্রীজের নিচের ফাঁকা অংশটুকু সম্পূর্ণ পানিতে ভরাট হয়ে ব্রীজটি একটি বাধে পরিণত হয়।
সম্প্রতি জাতীয় নদী কমিশন এই সেতু নির্মানে ত্রুটির দিকগুলো তুলে ধরে সওজ বিভাগের কাছে আপত্তি জানায়। আপত্তির প্রেক্ষিতে সওজ বিভাগ সেখানে ব্রীজ নির্মানে বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষের নিকট নেভিগেশন ক্লিয়ারেন্স এবং উলম্ব ও আনুভুমিক দুরত্বের বিষয়ে জানতে চায়। এর প্রেক্ষিতে স্থানীয় ত্রি-বিভাগীয় কমিটির কর্মকর্তাগণ ১৩ আগস্ট ব্রিজটির নির্মানস্থল পরিদর্শন করেন। পরিদর্শন শেষে তারা সড়ক বিভাগকে একটি প্রতিবেদন দাখিল করেন। সেখানে তারা উল্লেখ করেন, ময়ূর নদীটি রূপসা নদীর বটিয়াঘাটা জলমা ইউনিয়ন নামক স্থান থেকে উৎপত্তি হয়ে গল্লামারি নামক স্থান দিয়ে একই জেলার রায়েরমহলের মধ্য দিয়ে কৈয়া খালের সাথে মিলিত হয়েছে। নদীর দক্ষিন দিকে রূপসা নদী এবং উত্তর পশ্চিম দিকে কৈয়া খাল। ময়ূর নদীর উপর বর্তমানে গল্লামারি নামক স্থানে পাশাপাশি দুটি ব্রিজ রয়েছে। কিন্তু উভয় ব্রীজের উলম্ব উচ্চতা অত্যন্ত কম হওয়ায় সকল ধরনের নৌযান চলাচলে বাধাগ্রস্থ হচ্ছে। যার কারনে নদী কমিশন আপত্তি জানিয়েছে। বিধায় খুলনার সড়ক ও জনপথ বিভাগ ময়ূর নদের উপর নির্মিত ব্রীজ দুটি ভেঙে চার লেন বিশিষ্ট একটি নতুন ব্রীজ নির্মানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। ময়ূর নদীর পানির উচ্চতা কোথাও কম কোথাও বেশি বিদ্যমান রয়েছে। উভয় তীরে যেসব অবৈধ স্থাপনা গড়ে উঠেছে তা খুলনা সিটি কর্পোরেশন উচ্ছেদ কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। উচ্ছেদ অভিযান এবং গভিরতা খনন করা হলে ময়ূর নদী দিয়ে বটিয়াঘাটা হতে শহরের মধ্য দিয়ে কৈয়া বাজার পর্যন্ত নৌযান চলাচলের সম্ভাবনা রয়েছে। ফলে নদী পথে মালামাল পরিবহনে সুবিধা হবে এবং ব্যবসা বাণিজ্যের প্রসার ঘটবে। ব্রীজটি চার লেনে নির্মান করা হলে সাতক্ষীরাসহ অন্যান্য স্থানে যোগাযোগ বৃদ্ধি পাবে। এছাড়াও উক্ত স্থানটি যানজট মুক্ত হবে। তাই বর্তমান প্রেক্ষাপটে সড়কের উন্নয়নকল্পে ব্রীজটি নির্মান কল্পে বাংলাদেশ গেজেট অনুসারে নদীটি তৃতীয় শ্রেণিভুক্ত করে পানির সর্বোচ্চ উপ-বিভাগ হতে ব্রীজ নির্মানের উল্লম্ব উচ্চতা নুন্যতম ছাড় ৭ দশমিক ২ মিটার এবং আনুভূমিক দুরত্ব ৩০ দশমিক ৪৮ মিটার ছাড়পত্রের বিষয়ে স্থানীয় কমিটির সদস্যসরা সুপারিশ করেছেন।
এদিকে এত টাকা ব্যয়ে নির্মানের মাত্র ৫ বছরের মাথায় সেটি ভেঙে ফেলে নতুন সেতু নির্মান অর্থের অপচয় ছাড়া আর কিছু নয় বলে মন্তব্য করেছেন সংশ্লিষ্টরা। সওজ বিভাগের অপরিকল্পিত উন্নয়নে সরকারের এত টাকা লোকসান হচ্ছে বলে দাবি করেছেন তারা।
বিআইডব্লিউটিএ’র নৌ-সংরক্ষন ও পরিচালন বিভাগের যুগ্ম পরিচালক মোঃ আশরাফ হোসেন বলেন, সেতুটি যখন নির্মান হয় তখন সওজ বিভাগ বিআইডব্লিউটিএ থেকে কোন ছাড়পত্র নেয়নি। নিলে আর এমন জটিলতা হতো না এবং আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়তো না সরকার।
এ ব্রীজের বিষয়ে খুলনা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক বলেন, এ ব্রীজটি সড়ক ও জনপথের অদুরদর্শিতার ফল। ময়ুর নদী আটকে ব্রীজ নির্মান করা হয়েছে। এত নিচু কোন ব্রীজ হতে পারে না। এখানে অর্থের অপচয় ছাড়া আর কিছু হয়নি। সিটি কর্পোরেশনের সাথে সমন্বয় করে করলে এমন হতো না। তিনি বলেন, নকশায় সামান্য পরিবর্তন আনলে নতুন করে আর ব্রীজটি নির্মাণ করা লাগতো না। অপরিকল্পিত এমন কাজের মাধ্যমে সরকারি অর্থ অপচয়ের সাথে যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান তিনি।
এ বিষয়ে সওজ খুলনার অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী জর্জিস হোসাইন বলেন, আমি নতুন যোগদান করেছি, ওই ব্রীজ নির্মানের বিষয়ে আমি কিছু জানিনা। ওই সময় যারা ছিল তারাই বলতে পারবে।