এফ এস ইসলাম
চিকিৎসা একটি মানবিক পেশা। এই পেশার গুরুত্ব লিখলে যেমন সমাপ্তি টানা যাবে না তেমনি অসংগতির কথা লিখলেও শেষ হবে না। মানুষ বিপদে পড়লে সাধারণত পুলিশ, আইনজীবী এবং ডাক্তারের কাছেই যায়। কিন্তু এই তিনটি পেশা যখন অসাধু ব্যক্তিদের নিয়ন্ত্রণে চলে যায় তখনই সমাজ ও রাষ্ট্রের সন্তানতুল্য নাগরিকদের ভোগান্তী বেড়ে যায়। বাবা-মায়েরা সন্তানকে ডাক্তার কিংবা ইঞ্জিনিয়ার বানানোর স্বপ্নে যতটা বিভোর থাকেন তার ছিটেফোটাও যদি সত্যিকারের ভালো মানুষ বানানোর জন্য চেষ্টা করতেন তাহলে সমাজ ও রাষ্ট্রে অবিচারের রাজত্ব চলতো না। একজন ডাক্তার সমাজের হাজারো মানুষের অসুখ সরানোর জাদুকর। রোগী আর ডাক্তার যখন মুখোমুখি দাঁড়িয়ে যায় তখন হেরে যায় মানবতা, হেরে যায় জীবনের আলো। কাউকে পরাজিত করা অনেক সহজ কিন্তু জয় করা খুব কঠিন। সেবার ব্রত নিয়ে নিজের জীবনকে উৎসর্গ করা খুবই কঠিন কাজ। এটা সবাই পারে না। দুঃখজন হলেও এটা সত্যি যে, প্রতিনিয়ত মানুষ ভুল চিকিৎসার শিকার হচ্ছেন সাধারন মানুষ। ডাক্তারের ভুল হবে না এমন গ্যারান্টি কেউ দিতে পারবে না। তবে ডাক্তারের ইচ্ছাকৃত বা অবহেলায় যদি কোন রুগি মৃত্যু বরন করে সেটা অপরাধ ।
দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে একশ্রেণির চিকিৎসকদের মধ্যে সেবার মনোভাব শূন্যের কোঠায় এসে দাড়িয়েছে । এ সব ডাক্তার রোগীর জীবন বাঁচানোর চেয়ে নিজেদের পকেট ভারি করার কাজে সদা ব্যস্ত থাকেন । অথচ চিকিৎসা একটি স্পর্শকাতর বিষয়, সামান্য অবহেলা কিংবা ভুলের কারণে যে কারো জীবনের আলো নিভে যেতে পারে। এমনই একটি সুন্দর আলো এবং অনাগত ভবিস্যৎ নিভিয়ে দিলেন খুলনা জেলার দাকোপ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এর গাইনী ডাক্তার সন্তোষ মজুমদার । তার অবহেলা এবং চিকিৎসা পদ্ধতির ভুল চিকিৎসায় এক নারীর মা হওয়ার স্বপ্নের জীবন প্রদিপ নিভে গেল । সামান্য অবহেলা ও ভুল চিকিৎসার কারণে যদি কারো মৃত্যু হয় সেটা শুধু অপরাধই নয় স্রেফ হত্যাকান্ড। এমনই এক হত্যাকান্ডের স্বীকার হয়েছেন খুলনার দাকোপ উপজেলার তানিয়া খাতুন (৩৫) নামের এক প্রসূতি মায়ের । তানিয়ার মৃত্যু হয়েছে ঐ হাসপাতালের ডাক্তার সন্তোষ মজুমদার ও নার্সদের অবহেলার কারণে এমনটাই অভিযোগ তানিয়ার পরিবারের।
জানা যায়, প্রসূতি তানিয়াকে ৫ জুলাই বিকাল ৪টায় বাচ্চা প্রসবের জন্য দাকোপ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। এ সময় গাইনি ডাক্তার সন্তোষ মজুমদার প্রতি শুক্রবার বাজুয়াতে রোগী দেখতে যান, তিনি তখন হাসপাতালে উপস্থিত ছিলেন না। মোবাইল ফোনে তার কথামতো রোগী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ভর্তি করানোর পর ডাক্তার এসে তানিয়ার পরিবারকে জানান রুগির নরমাল ডেলিভারি হবে। সেই ভাবে রাত কেটে যায়। রাতে প্রসুতি রোগী তানিয়া যন্ত্রণায় ছটফট করতে থাকে । তানিয়ার এ অবস্থা দেখে ডাক্তার ও নার্সদের ডাকা হলেও তাদের পাওয়া যায়নি। কিছুক্ষন পর নার্সরা এসে জানায় রোগীর নরমাল ডেলিভারি হবে কোনো সমস্যা নেই। শনিবার সকালে রোগীর প্রচণ্ড ব্যথা উঠলে ডাক্তার সন্তোষ মজুমদার দ্রুত রোগীকে ওটিতে নিতে বলেন এবং প্রসুতির সিজার করেন। সিজারে অনেক সময়ক্ষেপন হওয়ায় রোগীর পরিবার চিন্তিত হয়ে পড়েন। সিজারের মাধ্যমে সন্তান প্রসবের পর রোগীর অবস্থা অবনতি ঘটে । আর এ অবনতি হলে ডাক্তার সন্তোষ মজুমদার রোগী তানিয়াকে জরুরি খুলনাতে নেয়ার কথা বলেন। সকাল ১০টার দিকে তানিয়াকে খুলনার গাজী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে এলে কর্তব্যরত ডাক্তার তানিয়াকে মৃত ঘোষণা করেন। তানিয়ার এ মৃত্যু স্বাভাবিক মৃত্যু নয় এটা ডাক্তার সন্তোষ মজুমদারের হত্যাকান্ড । নিহত তানিয়ার পরিবারের দাবী শুধুমাত্র অবহেলা এবং ভুল চিকিৎসায় তার মৃত্যু হয়েছে । চিকিৎসক সন্তোষ মজুমদারের অনভিজ্ঞতা ও অবহেলা এবং হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের গাফিলতি ও দায়িত্বহীনতার কারণে রোগীদের ক্ষতি ও মৃত্যুর ঘটনা মামুলি বিষয়ে পরিণত হয়েছে। তবে চিকিৎসকের অবহেলা কিংবা ভুল চিকিৎসায় রোগীর ক্ষতি বা মৃত্যু হলে দায় সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক বা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকেই নিতে হবে। কিন্তু দুভার্গ্যজনক হলেও সত্য যে, আমাদের দেশে এ দায় নেয়ার নজির নেই। তবে তানিয়ার মৃত্যুকে মৃত্যু নয় ডাক্তার সন্তোষ মজুমদারের একটি হত্যাকান্ড । এই হত্যার দায় চিকিৎসক সন্তোষ মজুমদাকেই নিতে হবে।