চ্যানেল খুলনা ডেস্কঃঅবৈধভাবে বিপুল সম্পদের মালিক, সরকারি-বেসরকারি কাজে টেন্ডারবাজি, ভূমিদস্যুতা, জুয়া-মদের আসর নিয়ন্ত্রণ ও মাদকের ব্যবসার সাথে সম্পৃক্ততার অভিযোগে খুলনায় গোয়েন্দা নজরদারিতে রয়েছেন অর্ধশতাধিক ব্যক্তি। এদের মধ্যে রাজনৈতিক, ব্যবসায়ী, ঠিকাদার, সরকারি চাকুরিজীবী, মাদক ব্যবসায়ী ও অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীসহ নানা পেশার ব্যক্তিরা রয়েছেন। তবে তাদের বিরুদ্ধে কি ধরনের আইনী ব্যবস্থায় নেয়া হবে তা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সুনির্দিষ্টভাবে জানা যায়নি। একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার তালিকায় এ সকল ব্যক্তিদের নাম রয়েছে। সম্প্রতি সময়ে রাজধানী ঢাকায় ক্যাসিনোসহ বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বাড়িতে র্যাবের অভিযানে বিপুল পরিমাণ অবৈধ অর্থ ও মাদক জব্দের পরপরই খুলনায় এ নজরদারি আরও বাড়ানো হয়েছে বলে জানা গেছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, মহানগরসহ খুলনা জেলার প্রায় ৫০জন ব্যক্তি গোয়েন্দা সংস্থার এ তালিকায় রয়েছেন। এদের মধ্যে কেউ কেউ রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে নানা উপায়ে অবৈধ সম্পদের পাহাড় গড়েছেন। কেউবা সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ঠিকাদারি কাজে টেন্ডারবাজি ও ভূমিদস্যুতার মাধ্যমে গত কয়েক বছরের শত কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। জুয়া ও মদের আসর নিয়ন্ত্রণসহ অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের লালন পালনের অভিযোগও রয়েছে অনেকের বিরুদ্ধে। সর্বোপরি মাদক ব্যবসার সাথে সম্পৃক্ততা ও শেল্টারদাতা হিসেবেও অনেকে এ তালিকায় রয়েছেন। এছাড়া সরকারি চাকুরিজীবীদের মধ্যেও রয়েছে কয়েকজনের নাম।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার সূত্রে জানা গেছে, মহানগরীর ৮টি থানা এলাকায় প্রায় ৩৫ জনের নামে অবৈধভাবে বিপুল সম্পদ অর্জন, সরকারি বেসরকারি কাজে টেন্ডারবাজি, ভূমিদস্যুতা, জুয়া-মদের আসর নিয়ন্ত্রণ ও মাদকের ব্যবসার সাথে সম্পৃক্ততার অভিযোগ রয়েছে। তাদের মধ্যে বেশিরভাগ ব্যক্তিই রাজনৈতিক দলের সাথে সম্পৃক্ত। অনেকে গত কয়েক বছরে শতকোটি টাকার মালিক বনে গেছেন। নিজের পরিবারের সদস্যদের নামে-বেনামে ব্যাংক একাউন্টসহ নানা ধরনের প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন। রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে ভূমিদস্যুতার মাধ্যমে অবৈধ টাকার পাহাড়সহ বিঘায় বিঘায় জমির মালিক হয়েছেন। প্লট ব্যবসার নামে অনেকে দুর্বল অসহায় মানুষের জমি কেড়ে নিয়েছেন বলেও এ সকল গোয়েন্দা সংস্থার কাছে একাধিক অভিযোগ রয়েছে। এই তালিকায় জেলার ৯টি উপজেলায় প্রায় ১৫জনের নাম উঠে এসেছে। তাদের মধ্যে কেউ কেউ শহরেই বসবাস করেন। তবে জেলায় তাদের পরিচিতি বেশি হওয়ায় তারা সেখানেই গোয়েন্দা তালিকাভুক্ত হয়েছেন।
গোয়েন্দা সূত্রে আরও জানা গেছে, অনেক আগে থেকেই এসকল বিষয়ে জড়িতদের বিরুদ্ধে গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহের কাজ শুরু হয়েছে। তবে সম্প্রতি সময়ে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার পরপরই এ সকল ব্যক্তিদের প্রতি গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।
উল্লেখ্য, চলামান অভিযানে গত ১৮ সেপ্টেম্বর রাজধানী ঢাকায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হয় যুবলীগের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া। এ সময় তার নিয়ন্ত্রিত ক্যাসিনো থেকে বিপুল পরিমাণ মাদক, নগদ টাকা, অস্ত্র জব্দ করা হয়। ২০ সেপ্টেম্বর যুবলীগের অপর নেতা জিকে শামীমকে গ্রেফতার করা হয়। এ সময় তার অফিস থেকে নগদ ২ কোটি টাকা, পৌনে দুইশ’ কোটি টাকা এফডিআর, আগ্নেয়াস্ত্র ও মাদক উদ্ধার করা হয়। এরপর ঢাকার আরও কয়েকটি ক্লাবে অভিযান চালিয়ে সরকার দলীয় বেশ কয়েকজন নেতা, বিসিবি’র কর্মকর্তাসহ ব্যবসায়ীদের গ্রেফতার করা হয়। গত ১ অক্টোবর গুলশান অফিস ও বনানীর বাসায় অভিযান চালিয়ে কোটি টাকার বিদেশী মুদ্রা, ২৯ লাখ দেশী টাকা, বিপুল পরিমাণ মদ ও হরিণের চামড়াসহ ব্যবসায়ী সেলিম প্রধান গ্রেফতার হয়। তার বিরুদ্ধে অনলাইন জুয়া পরিচালনার অভিযোগ রয়েছে। সবশেষ ৬ অক্টোবর যুবলীগ ঢাকা দক্ষিণের সভাপতি ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট ও সহ-সভাপতি এনামুল হক আরমান আলীকে গ্রেফতার হয়। তাদের কাছ থেকেও অস্ত্র, মাদক ও নগদ অর্থ জব্দ করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং, মাদক, বন্যপ্রাণি সংরক্ষণ আইন, অস্ত্রসহ বিভিন্ন অভিযোগে মামলা হয়েছে।সুত্র-সময়ের খবর