চ্যানেল খুলনা ডেস্কঃখুলনায় হঠাৎ করে গাড়ি ছিনতাইকারী সিন্ডিকেট মাথাচারা দিয়েছে। কয়েকদিনের ব্যবধানে নগরীতে দুইজন ইজিবাইক চালককে হত্যা ও গাড়ি ছিনতাইয়ের পর গ্যাসের সিলিন্ডার ভর্তি ট্রাক ছিনতাই চেষ্টার ঘটনা ঘটেছে। মঙ্গলবার রাতে নগরীর গল্লামারী এলাকা থেকে বসুন্ধরা কোম্পানীর ৭৬০ পিস গ্যাস সিলিন্ডার ভর্তি ট্রাক (ঢাকা মেট্রো ট ২২-৭৩৬৪) ছিনতাই করে ময়লাপোতা মোড়ে এনে মালামাল লুট করার সময় পুলিশ দুইজনকে আটক করেছে। এসময় ছিনতাইকাজে ব্যবহৃত একটি পিকআপ ও মটরসাইকেল জব্দ করা হয়েছে। আটককৃতরা হচ্ছে- মেহেদী হাসান বাবুল (৩৫) ও মো. সুমন (৩২)।
তবে ছিনতাইয়ের ঘটনাকে ‘¯্রফে ভুল বোঝাবুঝি’ দাবি করে একটি পক্ষ আসামীদের ছাড়িয়ে নিতে চেষ্টা করে। পুলিশের একটি পক্ষও এ ঘটনায় বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচার করে। তবে শেষ পর্যন্ত আটককৃত দুই অভিযুক্ত ও জব্দকৃত মালামাল হরিণটানা থানায় প্রেরণ করা হয়েছে। তারা তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
জানা যায়, ঝিনাইদহে বসুন্ধরার ডিপো গ্যাস ঘর থেকে এসব খালি সিলিন্ডার নিয়ে ট্রাকটি মোংলা গ্যাস প্লান্টে যাচ্ছিল। ট্রাকের চালক মো. রুবেল জানান, রাত সাড়ে ৯টার দিকে গল্লামারী এলাকায় একটি মটরসাইকেল পিছন থেকে ওভারটেক করতে গেলে ট্রাকটির সাথে সামান্য সংঘর্ষ হয়। এসময় তারা মটরসাইকেল দিয়ে সামনে বেরিকেড দিয়ে ট্রাকটি থামাতে বাধ্য করে। মুহূর্তে সেখানে সাদা রঙের একটি প্রাইভেটকার ও মটরসাইকেল নিয়ে আরো কয়েকজন উপস্থিত হয়। তারা ট্রাকের চালক ও হেলপারকে প্রাইভেটকারে তুলে অজ্ঞাতস্থানে নিয়ে বেধড়ক মারধর করে ট্রাকের কাগজপত্র ও সাথে থাকা ৩০ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেয়। এসময় ধারালো অস্ত্র দিয়ে তাদের খুন করে লাশ ভাসিয়ে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়। এদিকে ছিনতাইকারী চক্রের আরেক অংশ ট্রাকটি ঘুরিয়ে শহরের ময়লাপোতা মোড়ে নিয়ে আসে। সেখানে ট্রাক থেকে গ্যাসের সিলিন্ডার আরেকটি নীল রঙের পিকআপে (রেজিষ্ট্রেশন বিহীন) নামানো হয়।
এদিকে খবর পেয়ে বিভাগীয় ট্রাক শ্রমিক ইউনিয়নের সহকারি সম্পাদক মো. ঈমান আলী ঘটনাস্থলে এসে ছিনতাইয়ের বিষয়টি বুঝতে পেরে পুলিশে খবর দেয়। রাত সাড়ে ১২ টার দিকে ময়লাপোতা এলাকা থেকে পুলিশ ট্রাকটি উদ্ধার ও ছিনতাই কাজে ব্যবহৃত পিকআপ ও একটি মটরসাইকেল জব্দ করে। তিনি বলেন, চালক ও হেলপারকে হত্যা করে ট্রাকসহ মালামাল লুটের উদ্দেশ ছিলো চক্রের। ঘটনাস্থলে আসার সাথে আসামীরা মটরসাইকেল নিয়ে পালিয়ে যায়। এসময় ওই দুইজনকে আটক করা হয়। তবে খুলনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আশরাফুল আলম দুপুরে জানান, বিষয়টি ছিনতাইয়ের ঘটনা না। ট্রাকের চালক সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছে। আর বড় ট্রাক থেকে মালামাল পিকআপে আনলোড করা হচ্ছিল। সন্দেহ হওয়ায় তা’ থানায় আনা হয়। তবে ওই সময় ট্রাক চালককে থানার অভ্যন্তরে ঘোরাঘুরি করতে দেখা যায়। তিনি অভিযোগ করেন, যারা রাতের বেলায় তাদের মারধর করে টাকা, মোবাইল, কাগজপত্র ছিনিয়ে ট্রাক লুটের চেষ্টা করছিল, এখন তারাই আবার থানায় বসে মীমাংসার প্রস্তাব দিচ্ছে। এদিকে বিষয়টি পুলিশের উর্ধতন মহলে জানাজানি হলে নতুন করে ঘটনার তদন্ত শুরু হয়। এসময় ছিনতাইয়ের উদ্দেশে মোংলাগামী ট্রাকটি উল্টোপথে গল্লামারী থেকে ময়লাপোতা আনা হয়েছিল বলে প্রাথমিকভাবে প্রমানিত হয়। পরে জব্দকৃত মালামাল ও আটকৃতদের হরিণটানা থানায় প্রেরণ করা হয়। রাতে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আশরাফুল আলম বলেন, যেহেতু ঘটনাস্থল হরিণটানা থানার মধ্যে এ কারণে তারা তদন্ত করে এ বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
উল্লেখ্য, এর আগে ৬ আগষ্ট নগরীর হরিণটানা বাইবাস থেকে টুটুল মোল্লা নামের এক ইজিবাইক চালককে আহত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। পরে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর তার মৃত্যু হয়। পুলিশ জানায়, তাকে হত্যার পর ইজিবাইক ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। একইভাবে ১০ আগষ্ট লবনচরা সুড়িখাল এলাকা থেকে রাজু আহমেদ নামের ইজিবাইক চালকের লাশ উদ্ধার হয়।