খুলনায় ভূমি দখল ও দস্যুতায় অপ্রতিরোধ্য বাহা বাহিনীর প্রধান খন্দকার বাহাউদ্দিন। এতদ্বাঞ্চলের আবাসন খাতের ব্যবসায়ীদের কাছে মূর্তিমান এক আতংক। নেপথ্যের প্রধান কারণ হত্যাযজ্ঞ। তিনি পথের কাটা সরিয়ে দেন। এজন্য মামলা, হামলা, হয়রানি এবং তাতেও কাজ না হলে নিজস্ব বাহিনী দিয়ে প্রাণ পর্যন্ত কেড়ে নেন।
মঙ্গলবার (১৭ নভেম্বর) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা হতে রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত সরেজমিনে নগরীর রায়েরহল এলাকায় গেলে, সেখানকার বাসিন্দারা (ব্যবসায়ী, রাজনৈতিক ও সমাজিক সংগঠনের সদস্য) উল্লেখ্য অভিযোগ এই প্রতিবেদকের কাছে বলতে থাকেন। এসময় অনেকেই জালিয়াতির অভিযোগ সংশ্লিষ্ট কাগজপত্রাদি উপস্থাপন করেন। তবে তখনও সবার চোখেমুখে আতংকের ছোঁপ দেখা গেছে।
সঙ্গত কারণে নাম প্রকাশে রাজি নন অভিযোগদাতারা। তথাপি একযোগে তাদের অভিযোগ, বাহাউদ্দিন রায়েরমহল এলাকায় একাধীক হত্যাকান্ড ঘটায়। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় হতে স্বরাষ্ট মন্ত্রনালয়ে পাঠানো খুলনার মাদক ব্যবসায়ীদের পৃষ্ঠপোষকের তালিকাভুক্ত বাহাউদ্দিন খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগের ১৬নং ওয়ার্ড শাখার সাবেক সাধারণ সম্পাদক।
এলাকাবাসীর বলেন, ভূমি জালিয়াতি, দখল ও দস্যুতায় তৎকালীন দলিল লেখক সমিতির শীর্ষ নেতা জাকির মহরী বাধা হয়ে দাড়ালে, বাহাউদ্দিন নিজস্ব বাহিনী দিয়ে কেসিসি মার্কেটের নিজ অফিসে তাকে গুলি করে হত্যা করায়। ২০১২ সালের ২০ মে সংঘটিত এই হত্যাকান্ডে সে কিছুদিন কারাগারে ছিলেন। পরে জামিনে মুক্ত হন।
এক কাউন্সিলরের প্রত্যক্ষ মদদে এরপর থেকেই অপ্রতিরোধ্য হয়ে ওঠেন বাহাউদ্দিন। এলাকায় জনশ্রুতি রয়েছে, জাকির হত্যাকান্ড’র পর দলিল লেখক সমিতির একক নেতায় পরিণত হন বাহাউদ্দিন। অনুরূপ রায়েরহল এলাকায় অঘোষিত সরকার বনে যান।
তার নির্দেশে একে একে নিরীহ মানুষের জমি দখল শুরু হয়। ছলেবলে কৌশলে জমি জালিয়াতি করে দখল করে তার বাহিনীর অন্য সদস্যরা। এবং পরে তারাই এসব জমি বিক্রি করে দেন। অনেকেই প্রাণের ভয়ে ঘরবাড়ি ছেড়ে চলে যায়। কেউ পরিবারের নিরাপত্তায় নিশ্চুপ হয়ে যান।
এসময় জনৈক ব্যক্তি অভিযোগ করেন, মুক্তিযোদ্ধা শাহাদাত মোল্লা হত্যা মামলায় সিআইডি’র হাতে বাহাউদ্দিন ও তার দুই সহযোগী আটক হওয়ার পর থেকেই একদল সশ্রস্ত্র সন্ত্রাসী এলাকায় শোডাউন দিচ্ছে, আতংক ছড়াচ্ছে। কারণ একটাই কেউ যেন বাহাউদ্দিনের বিরুদ্ধে মুখ না খোলে। তিনিসহ কয়েকজন সঙ্গত কারণে আত্মগোপনে রয়েছেন বলে দাবি করেন।
এলাকাবাসীর আরও অভিযোগ, আম্বিয়ান নেছা নামের এক মহিলার আনুমানিক ২৫ কোটি টাকা মূল্যমানের জমি জালিয়াতির মাধ্যমে বাগিয়ে নেন বাহাউদ্দিন বাহিনী। এজন্য আম্বিয়া নেছার কন্যা ও উক্ত সম্পত্তির একমাত্র ওয়ারেশ মাহামুদা সুলতানা হুরিকে রহস্যজনকভাবে মৃত্যু হয়। পরে এঘটনায় হত্যা মামলা রুজু হয়। কিন্তু মামলার প্রধান স্বাক্ষী মেজর বলে খ্যত জনৈক ব্যাক্তিরও রহস্যজনক মৃত্যু হয়। এলাকাবাসীর ভাষ্য, ২৫ কোটি টাকার সম্পত্তি বাগিয়ে নিতে এই হুরিকে হত্যা করার পর টিপ সই দিয়ে জমি দখল নেন বাহা বাহিনী।
উল্লেখ্য, বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহাদত হোসেন মোল্লা হত্যাকান্ড মামলায় জাহিদ মীর নামে আরও একজনকে আটক করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। সোমবার (১৭ নভেম্বর) আনুমানিক রাত সাড়ে ১০টার দিকে সিআইডি মেট্রো ও জেলা অফিসের কর্মকর্তারা অভিযান পরিচালনা করে ফকিরহাট হতে তাকে আটক করে। খুলনা সদর দলিল লেখক সমিতির সাধারণ ও ১৬নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সদ্য সাবেক সাধারণ সম্পাদক খন্দকার বাহাউদ্দিন সহ এনিয়ে মোট ৪ জন গ্রেফতার করা হয়েছে। আটক অন্য আসামীরা হলেন, সোহরাব মোল্লা ও মিরাজ শেখ।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডি ইন্সপেক্টর শেখ শাহাজাহান বলেন, আটকের পর বিজ্ঞ মূখ্য মহানগর হাকিমের আদালত আসামীকে জেল হাজতে প্রেরণের নির্দেশ দেন। তদন্তের স্বার্থে মামলার বিস্তারিত বলতে নারাজ গোয়েন্দা পুলিশের এই কর্মকর্তা।
২০১৭ সালের ১৭ জুন নিহত বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সোনাডাঙ্গা থানা আওয়ামী লীগের মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক সম্পাদক শাহাদাত মোল্লার জৈষ্ঠ সন্তান আল মামুন বাদী হয়ে কেএমপি’র হরিণটানা থানায় মামলা (নং ৭) করেন। এদিকে মামলার বাদী জানান, তার পিতার হত্যা মিশনে অত্যাধুনিক সটগান ব্যবহার করা হয়। তার আশংকা খন্দকার বাহাউদ্দিনের লাইসেন্স করা সটগান হত্যাকান্ডে ব্যবহার করা হয়েছিল। এজন্য বাহাউদ্দিনের বন্দুকের লাইসেন্স বাতিলসহ তা জব্দ করার জন্য সংশ্লিষ্টদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন তিনি। একই সাথে তার নেপথ্যে মদদদাতাদের ব্যাপারে আরও খতিয়ে দেখে দ্রুত আইনের আওতায় আনার দাবি তোলেন। তার দাবি, ইতোমধ্যে বাহাউদ্দিনকে মুক্ত করতে তার মদদদাতারা উঠে পড়ে লেগেছেন। সশ্রস্ত্র শোডাউনের মাধ্যমে তারা রায়েরমহল এলাকায় ভয়ভীতি ছড়াচ্ছেন। তাছাড়া মামলাকে প্রভাবিত করতে তদন্ত কর্মকর্তা বদলী করতে জোরেশোরে তদবীর চলছে।