দেড় দশক পর জেলা ও এক দশক পর আগামী ২২ জানুয়ারি খুলনা মহানগর যুবলীগে ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন হচ্ছে না। করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় কেন্দ্রীয় কমিটি এ সিদ্ধান্ত জানিয়েছে। আগামী মার্চে এ সম্মেলন হতে পারে। মহানগর যুবলীগের আহবায়ক শফিকুর রহমান পলাশ এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
২০০৩ সালের ২৫ মে সর্বশেষ জেলা যুবলীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ২০১৯ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর দ্বিতীয় দফায় আহবায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছে মহানগর কমিটিতে। মহানগর কমিটি সক্রিয় থাকলেও দীর্ঘদিন সম্মেলনের অভাবে নিস্ক্রীয় হয়ে রয়েছে জেলা কমিটি। সর্বশেষ ২২জানুয়ারি সম্মেলনকে সামনে রেখে নেতৃত্ব প্রত্যাশীরা সরব হয়ে উঠেন। অবশ্য মহানগর কমিটিতে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে মাত্র দু’জন প্রার্থী হলেও জেলায় এ সংখ্যা ১৭। ফলে নগরে নতুন নেতৃত্ব অনেকটা নিশ্চিত হলেও জেলায় চমকের সম্ভাবনা দেখছেন তৃনমূলের নেতাকর্মীরা। আগামী সম্মেলনে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক প্রার্থীদের জীবনবৃত্তান্ত কেন্দ্রে জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ছিল ৬জানুয়ারি।
জেলা যুবলীগ নেতাদের সাথে আলাপকালে জানাগেছে, সর্বশেষ ২০০৩ সালের ২৫ মে খুলনা জেলা যুবলীগের সর্বশেষ ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনে কামরুজ্জামান জামাল সভাপতি ও আক্তারুজ্জামান বাবুকে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। এর প্রায় ৫/৬ মাস পর ৭১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি করা হয়। দীর্ঘদিন সম্মেলন বা কাউন্সিল না হওয়ায় জেলা যুবলীগের বর্তমান সাংগঠনিক কর্মকান্ডও ছিল অনেকটা স্থবির। ৯টি উপজেলা ও ৬৮ ইউনিয়নে কমিটির মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়েছে। ২০১৫ সালের ১৫ নভেম্বর যুবলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক যথাক্রমে কামরুজ্জামান জামাল ও আক্তারুজ্জামান বাবু জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক পদ লাভ করেন। এরমধ্যে কামরুজ্জামান জামাল বর্তমানে জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক ও আখতারুজ্জামান বাবু খুলনা-৬ আসনের সংসদ সদস্য।এরপর মূলত কয়েকদিন অভিভাবক শূণ্য সংগঠনটিতে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের অনুসারী হিসেবে দুইজন করে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক দায়িত্ব পালন করে। এরমধ্যে কামরুজ্জামান জামালের অনুসারী জেলা যুবলীগের ২ নম্বর সহ-সভাপতি অধ্যাপক জুলফিকার আলী জুলু বর্তমানে জেলার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এবং ২নম্বর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সরদার জাকির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন।
এদিকে আক্তারুজ্জামান বাবুর অনুসারী ৭নম্বর সহ-সভাপতি আজিজুল হক কাজল ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এবং ১নম্বর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাস্টার সেলিম মাসুদ ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। কিন্তু পরবর্তীতে এই দুই ধারার নেতৃত্বও টেকেনি। ফলে নেতাদের ব্যক্তি কেন্দ্রিক সংগঠনে পরিণত হয় খুলনা জেলা যুবলীগ। এমন অবস্থায় গেল বছরের ২৯ নভেম্বর স্থানীয় অভিজাত হোটেলে সংগঠনটির বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হয়।
অপরদিকে নগর যুবলীগে ২০১০ সালের ১১ জানুয়ারি নগর যুবলীগের ৫১ সদস্য বিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি অনুমোদন দেয় কেন্দ্র। ওই কমিটিতে অ্যাডভোকেট সরদার আনিসুর রহমান পপলুকে আহবায়ক এবং মনিরুজ্জামান সাগর ও হাফেজ মো. শামীম যুগ্ম-আহবায়ক ছিলেন। দ্বিতীয় দফার আহবায়ক কমিটিতে আহবায়ক হয়েছেন সাবেক ছাত্রনেতা শফিকুল ইসলাম পলাশ। আর যুগ্ম সম্পাদক হয়েছেন নগর ছাত্রলীগের সভাপতি শেখ শাহজালাল হোসেন সুজন। সোমবার একই স্থানে নগর কমিটিরও বিশেষ বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হয়। উভয় সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন সংগঠনের প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ সোহেল উদ্দিন। এই সভায় ২২ জানুয়ারি নগর সম্মেলন ছাড়াও নগর যুবলীগের আওতাধীন ৩৬টি ওয়ার্ড ও ৫টি থানার কমিটি পূর্নগঠনের নির্দেশ দেয়া হয়।
এদিকে সম্মেলনে সভাপতি ও সাধারণ পদ প্রত্যাশীদের জীবন-বৃত্তান্ত নিয়েছে সংগঠনটি কেন্দ্রীয় কমিটি। এতে নগর সভাপতি পদে বর্তমান আহবায়ক সফিকুর রহমান পলাশ ও সাধারণ সম্পাদক পদে বর্তমান যুগ্ম আহবায়ক শেখ শাহজালাল হোসেন সুজন জীবন বৃত্তান্ত দিয়েছেন। আর জেলায় সভাপতি পদে ছয় জন ও সাধারণ সম্পাদক পদে ১১ জন জীবনবৃত্তান্ত জমা দিয়েছেন।
যুবলীগের কেন্দ্রীয় উপ-দপ্তর সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন শাহাজাদা সাংবাদিকদের জানান, খুলনা জেলা যুবলীগের সভাপতি পদে ছয়জন জীবনবৃত্তান্ত দিয়েছেন। তাদের মধ্যে রয়েছে যুবনেতা অজিত বিশ্বাস, সরদার জাকির হোসেন, জসিম উদ্দিন বাবু, আরাফাত হোসেন পল্টু, চৌধুরী রায়হান ফরিদ ও হাদীউজ্জামান হাদী। সাধারণ সম্পাদক পদে জীবনবৃত্তান্ত জমা দেওয়া ১১জন হলেন এবিএম কামরুজ্জামান, আব্দুল্লাহ আল মামুন, মো. পারভেজ হাওলাদার, মো. মুশফিকুর রহমান সাগর, তসলিম হুসাইন তাজ, দেব দুলাল বাড়ই বাপ্পী, মাহফুজুর রহমান সোহাগ, জলিল তালুকদার, মো. কামরুজ্জামান মোল্লা, মো. আবু সাঈদ খান ও হারুন উর রশিদ।
সংগঠনটির নেতাকর্মীরা জানান, নগর যুবলীগে নেতৃত্ব অনেটাই নিশ্চিত হলেও জেলা কমিটির নেতৃত্বে চমক আসতে পারে। ইতিমধ্যে জেলায় মহিলা লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগের দীর্ঘদিনের ত্যাগীকর্মীরা নেতৃত্বে আসায় তারা এ সম্ভাবনা দেখছেন।
খুলনা যুবলীগের কমিটি নিয়ে কাজ করছেন এমন এক নেতা কালের কণ্ঠকে বলেন, নগর যুবলীগে বর্তমান আহবায়ক কমিটি ইতিমধ্যে সাংগঠনিক দক্ষতা দেখিয়েছে। ফলে তারা বহাল থাকবে-এটা অনেকটাই নিশ্চিত। তবে জেলায় নেতৃত্ব প্রত্যাশী ১৭জন। এ ক্ষেত্রে সম্ভাব্য নেতার দীর্ঘদিনের সাংগঠনিক দক্ষতা, গ্রহণযোগ্যতা মূল্যায়ন করা হবে। আবার প্রত্যাশীদের বাইরেও কেউ নেতৃত্ব আসতে পারেন। যে সিদ্ধান্তই হোক, সেটি হবে সংগঠনের ভালোর জন্য।
মহানগর যুবলীগের আহ্বায়ক সফিকুর রহমান পলাশ বলেন, ২২ জানুয়ারি সুষ্ঠুভাবে সম্মেলন সফল করার প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। সম্মেলন ঘিরে নগরীতে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা বিরাজ করছে।
জেলায় নেতৃত্ব প্রত্যাশী ছাত্রলীগের খুলনা কমিটির সাবেক সভাপতি আরাফাত হোসেন পল্টু বলেন, দীর্ঘদিন ছাত্রলীগে ছিলাম। এখন যুবলীগে কাজ করতে চাই। দায়িত্ব পেলে তৃনমূল পর্যন্ত সংগঠনকে শক্তিশালী করা সম্ভব হবে।
বর্তমান জেলা যুবনেতা অজিত বিশ্বাস বলেন, দীর্ঘদিন সম্মেলন না হওয়ায় আমাদের কাজ বাধাগ্রস্ত হয়েছে। দায়িত্ব পেলে ত্যাগী নেতাকর্মীদের নিয়ে এগিয়ে যেতে চাই। আশাকরি কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ ত্যাগী নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন করবেন।