প্রথমে নারীর সঙ্গে পরিচয়। এরপর বিভিন্ন দফতরে চাকরির প্রলোভন। অতঃপর প্রেমের সম্পর্ক গড়ে সুবিধামত কোনো জায়গায় নিয়ে চলতো ধর্ষণ, গণধর্ষণের মতো ঘটনা। এই চক্রের মূলহোতা বিআইডব্লিউটিএ এর ২০তম গ্রেডের কর্মচারী সনজিব কুমার দাস। রয়েছে বেশ কয়েকজন সহযোগীও।
জানা যায়, বেশিরভাগ ভুক্তভোগী নারী সমাজ ও মান-সম্মানের ভয়ে আইনের আশ্রয় না নিলেও কয়েকজন মামলা করেছেন। সেই মামলায় এরইমধ্যে সনজিব কুমার দাসকে গ্রেফতার করেছে সবুজবাগ থানা পুলিশ। চক্রের বাকি সদস্যদেরও গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
সবুজবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুরাদুল ইসলাম বলেন, সনজিব কুমার দাসসহ পাঁচজনকে আসামি করে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের এক নারী গত ২৮ ফেব্রুয়ারি রাতে মামলার আবেদন করেন। গত ১ মার্চ মামলা হিসেবে রুজ্জু হওয়ার পর রাতেই দুইজনকে গ্রেফতার করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় এটি একটি চক্র। এই চক্রের সদস্যরা আগেও গণধর্ষণের ঘটনা ঘটেয়েছে। গত জানুয়ারি মাসে খিলগাঁও থানায়ও একটি গণধর্ষনের মামলা হয়েছে। সেই মামলাতে সবুজবাগের মামলার দুই আসামি সনজিব কুমার দাস ও আজিজুর রহমান রয়েছেন।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, সনজিব কুমার দাস মাত্র ১৫ হাজার টাকা বেতনে বিআইডব্লিউটিএ তে চাকরি করেন। কিন্তু তিনি একটি ৩০ লাখ টাকা দামের এলিয়েন গাড়িতে চড়েন। এই গাড়ি তাকে গোল্ডেন মনির কিনে দিয়েছেন বলে পুলিশের কাছে স্বীকার করেছে সনজিব। বিআইডব্লিউটিএ তে চাকরি করলেও সনজিব কুমার মূলত গোল্ডেন মনিরের পিএস হিসেবে কাজ করত। গোল্ডেন মনিরের যত দালালির কাজ ছিল, তার সবগুলোই দেখাশোনা করত সনজিব।
পুলিশ জানিয়েছে, সনজিব কুমার অসংখ্য নারীর সঙ্গে প্রতারণা করেছে। অনেকে সম্মানের ভয়ে মুখ খোলেন না। সনজিব বেশ কয়েকজন নারীর সঙ্গে প্রতারণার কথা স্বীকার করেছে। তার মোবাইল ফোন থেকে বেশ কিছু ভিডিও, কল রেকর্ড আর ছবি উদ্ধার করা হয়েছে। যেসব মেয়ের সঙ্গে প্রতারণা করেছে তাদের অনেকেই ম্যাসেজ দিয়ে গালিগালাজ করেছে সেই তথ্য সংগ্রহ করেছে পুলিশ।
বেশ কয়েকজন নারীর সঙ্গে সনজিব কুমার দাসের প্রতারণার ভিডিও সারাবাংলার হাতে এসেছে। ওই ভিডিওতে যেসকল নারী অভিযোগ করেননি তাদের তথ্যও রয়েছে। এছাড়াও সবুজবাগ থানাধীন গত ১৫ ফেব্রুয়ারি গণধর্ষণ মামলার বাদী ওই নারীর একাধিক কল রেকর্ড সারাবাংলার হাতে রয়েছে।
জানা যায়, গণপূর্ত বিভাগের একজন প্রকৌশলীর ভায়রা হিসেবে পরিচয় দিতেন এই সনজিব কুমার। ওই প্রকৌশলীর হয়ে গোল্ডেন মনিরের সঙ্গে যোগাযোগ এবং তদবিরের মিডলম্যান হিসেবে কাজ করতেন তিনি। গোল্ডেন মনির র্যাবের হাতে গ্রেফতারের পর ঘটনা বেগতিক দেখে ওই প্রকৌশলী সনজিব কুমারের সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দেন। যোগাযোগ বন্ধ করলেও সনজিব ওই প্রকৌশলীর পরিচয়ে ঢাকা শহরে ক্ষমতা দেখিয়ে বেড়াতেন।
সনজিবের বিষয়ে পুলিশ জানায়, সবুজবাগ থানায় গণধর্ষণ মামলা ছাড়াও তার বিরুদ্ধে খিলগাঁও থানায় আরও একটি গণধর্ষণের মামলা হয়েছে গত জানুয়ারি মাসে।
দুই মামলার এজাহার থেকে জানা যায়, সবুজবাগের মামলায় আসামি মোট পাঁচজন। তারা হলেন- সনজিব কুমার দাস, আজিজুর রহমান, জামাল, রাসেল ও আনিকা। গত ১৬ জানুয়ারি খিলগাঁও থানায় আরও একটি গণধর্ষণ মামলা হয়। সেখানেও এই সনজিব কুমার ও আজিজুর রহমান যথাক্রমে দুই ও তিন নম্বর আসামি।
জানা যায়, এর বাইরেও বিভিন্ন দফতরে প্রতারণা ও ধর্ষণের শিকার একাধিক নারী সনজিবের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন। যার খবর পুলিশের কাছে আসতে শুরু করেছে। এছাড়াও উচ্চ পদে চাকরি দেওয়ার নাম করে এক যুবকের জমি বিক্রি করে ২০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। ওই যুবক হন্যে হয়ে ঘুরেও কোনো চাকরি বা টাকা ফেরত পাননি।
বিআইডব্লিউটিএ এর এক কর্মকর্তা বলেন, সনজিব কুমার এর আগেও বিভিন্ন অভিযোগে তিনবার বরখাস্ত হয়েছিলেন। সবশেষ শাস্তি হিসেবে তাকে খুলনায় বদলি করা হয়। এরপর সেখান থেকে মাদারীপুরে বদলি করা হয়। কিন্তু তিনি মাদারীপুরে না থেকে নানান অযুহাতে ঢাকায় থাকেন।
-সারাবাংলা