সব কিছু
facebook channelkhulna.tv
খুলনা শুক্রবার , ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ২২শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
গদখালীতে ফুল কেটে গরু-ছাগলকে খাওয়াচ্ছেন চাষিরা | চ্যানেল খুলনা

অর্ধশত কোটি টাকার ক্ষতি

গদখালীতে ফুল কেটে গরু-ছাগলকে খাওয়াচ্ছেন চাষিরা

বেনাপোল প্রতিনিধিঃ প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস ও ঘূর্ণিঝড় আম্পানের থাবায় থমকে গেছে দেশে ফুলের রাজধানী খ্যাত গদখালী এলাকা। গত আড়াই মাসে ফুলচাষি ও ব্যবসায়ীদের অর্ধশত কোটির বেশি টাকার ক্ষতি হয়েছে। হতাশায় ভেঙে পড়েছেন ফুল চাষের ওপর নির্ভর এলাকার হাজার হাজার মানুষ। যে পরিমাণ ফুল আছে তাও বিক্রি প্রায় বন্ধ। একারণে বাগান বাঁচাতে ফুল কেটে গরু-ছাগলকে খাওয়াচ্ছেন তারা। সরকার যে প্রণোদনা ঘোষণা করেছে, তার মধ্যে ফুলচাষও অন্তর্ভুক্ত থাকায় সেই অর্থ দ্রুত পাওয়ার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের সুনির্দিষ্ট দিক নির্দেশনা দাবি করছেন ফুলচাষিরা।

যশোর জেলার গদখালীতে দেশে ফুলের সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার। এই কারণে গদখালীকে দেশের ফুলের রাজধানী বলা হয়ে থাকে। এখানে ফুল উৎপাদন ও কেনাবেচায় শত শত কোটি টাকার লেনদেন হয় প্রতি বছর।
যশোর শহর থেকে পশ্চিমের উপজেলা ঝিকরগাছা ও শার্শা থানার ৭৫টি গ্রামের প্রায় সাড়ে ৬ হাজার হেক্টর জমিতে চাষ করা হয় হরেক রকমের ফুল। ঝিকরগাছা ও শার্শা থানার গ্রামগুলোর রাস্তার দুইপাশে দিগন্ত বিস্তৃত জমিতে লাল, নীল, হলুদ, বেগুনি আর সাদা রঙের ফুলের সমাহার দেখে মন ভরে যায়। প্রতিদিন উপজেলার পানিসারার শত শত ফুলচাষির আনাগোনা শুরু হয় গদখালীর বাজারে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছোট-বড় পাইকাররাও সেখান থেকে ফুল কিনে নিয়ে যান। এরপর বিভিন্ন হাতবদল হয়ে পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতার মাধ্যমে ফুল ছড়িয়ে পড়ে সারা দেশে, এমনকি দেশের বাইরেও।
ঝিকরগাছা উপজেলার গদখালী ইউনিয়নের পানিসারা, হাড়িয়া, কৃষ্ণচন্দ্রপুর, পটুয়াপাড়া, সৈয়দপাড়া, মাটিকুমড়া, বাইসা, কাউবা, ফুলিয়া আর শার্শার নাভারন, উলাশি, গদখালী ও শ্যামলাগাছি গ্রামের প্রতিটি মাঠ এখনও ভরা ফুলে। শত শত হেক্টর জমি নিয়ে গাঁদা, গোলাপ, গ্লাডিওলাস, রজনীগন্ধা, জারবেরা, কসমস, ডেইজ জিপসি, ডালিয়া, চন্দ্রমল্লিকাসহ বিভিন্ন প্রজাতির ফুলের চাষ হয়েছে এখানে। সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রতি বছর ৩০০ কোটি টাকার ফুল উৎপাদন হয় এসব মাঠ থেকে।

করোনা পরিস্থিতি আসার আগে সূর্য ওঠার সঙ্গে সঙ্গে জমে উঠতো গদখালীর ফুলের বাজার। কিন্তু গত দুই মাসেরও বেশি সময় ধরে লোকসমাগম নেই সেখানে। সোমবার (৮ জুন) সকালে সরেজমিনে গদখালী বাজার ঘুরে দেখা যায়, পুরো বাজার এলাকা যেন জনমানবশূন্য। নেই আগের মতো ফুলের দাম নিয়ে তর্ক-বিতর্ক। নেই কোনও হাঁকডাক। গুটি কয়েক দোকানদার বসে আছেন দোকান খুলে। কিন্তু কোনও ফুল নেই দোকানে। ফুলচাষিরা ফুল বাগানের ডালপালা কেটে ছাগল, গরু দিয়ে খাওয়াচ্ছেন। চাষিদের চোখে-মুখে বিষণ্নতার ছাপ।
বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার সোসাইটির (বিএফএস) সভাপতি আব্দুর রহিম জানান, ‘এবার ঝিকরগাছা ও শার্শা উপজেলার ছয় হাজার কৃষক সাড়ে ছয় হাজার হেক্টর জমিতে ফুলের আবাদ করেছিলেন। ফুল চাষে আবহাওয়া ভালো থাকায় এবার রেকর্ড পরিমাণ ফুল উৎপাদনের সম্ভাবনা ছিল।’
তিনি জানান, দেশের সবচেয়ে বড় ফুলের বাজার গদখালী বাজারে ৯ রকমের ফুল বেচা-কেনা হয়। প্রতি বছর জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত ফুলচাষিদের ভরা মৌসুম।
তিনি আরও বলেন, ‘করোনাভাইরাস ও সম্প্রতি ঘূর্ণিঝড় আম্পানে ফুল সেক্টরের যে পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে তা অপূরণীয়। এই মুহূর্তে সম্ভাবনাময় এই সেক্টরটিকে টিকিয়ে রাখতে হলে সরকারি সহযোগিতা একান্ত প্রয়োজন। তবে সম্প্রতি কৃষি মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে একান্ত যোগাযোগের মাধ্যমে কৃষিমন্ত্রীর সহযোগিতায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পাঁচটা সেক্টরের ওপর ৪ শতাংশ সুদে পাঁচ হাজার কোটি টাকার যে কৃষি প্রণোদনা ঘোষণা করেন, তার মধ্যে ফুলচাষও অন্তর্ভুক্ত আছে। কিন্তু বর্তমান অবস্থায় কৃষি প্রণোদনার এই ঋণ ফুলচাষি ও ব্যবসায়ীদের প্রাপ্তির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের সুনির্দিষ্ট দিকনির্দেশনা ছাড়া সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। এক্ষেত্রে ৭০ শতাংশ বর্গাচাষিসহ ফুল সেক্টরের সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত ঋণ সরবরাহের ব্যবস্থা করার জন্য সরকারি নীতিনির্ধারকদের প্রতি বিশেষভাবে দাবি জানাচ্ছি। তাতে করে কিছুটা হলেও সম্ভাবনাময় ফুল সেক্টরটির ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ সৃষ্টি হবে।’
আব্দুর রহিম জানান, ঝড়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে জারবেরা ফুলের। প্রতি একর জারবেরা ফুল চাষ করতে ৩৬ লাখ টাকা খরচ হয়। রজনীগন্ধা চাষে একর প্রতি খরচ আড়াই লাখ টাকা, গোলাপ সাড়ে চার লাখ টাকা, গ্লাডিওয়াস চার লাখ টাকা, গাঁদা চাষে দুই লাখ ত্রিশ হাজার টাকার মতো খরচ হয়। গদখালী পানিসারা এলাকার ফুলচাষি মিন্টু গাজী বলেন, ‘আড়াই বিঘা জমিতে গোলাপ ফুলের চাষ করেছিলাম। বাংলা বর্ষবরণ উৎসব সামনে রেখে ফুল উৎপাদনের ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছিল। কয়েক লাখ টাকা গোলাপ বাগানে বিনিয়োগ করা ছিল। ঠিক সেই সময়ে করোনাভাইরাস এলো। ফুল আর বেচতে পারলাম না। ঘরে বসে পহেলা বৈশাখ পালন করলে ফুল কিনবে কে? এরপর আম্পান ঝড়ের তাণ্ডবে বেশিরভাগ ফুলগাছ উপড়ে ও ডালপালা ভেঙে গেছে। অনেক জায়গায় ফুল গাছ দুমড়ে মুচড়ে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। দোকানপাট বন্ধ, বাজার বসছে না। ক্ষেত থেকে ফুলগাছ কেটে ছাগল গরু দিয়ে খাওয়াতে হচ্ছে। ফুল না কাটলে নতুন করে আর চাষ করা সম্ভব হবে না। অত্যন্ত খারাপ অবস্থার মধ্যে আছি আমরা ফুলচাষিরা।’
ঝিকরগাছার পটুয়াপাড়া এলাকার ফুলচাষি কৃষক জাহাঙ্গীর বলেন, ‘করোনাভাইরাসে ফুল বিক্রি না হলেও ক্ষেতে ছিল। কিন্তু আম্পান ঝড়ের তাণ্ডবে সব শেষ হয়ে গেছে। আড়াই বিঘা জমিতে গোলাপ ফুল চাষ করেছিলাম। ক্ষতিগ্রস্ত ফুল ও গাছ বাগান থেকে প্রতিদিন কেটে ছাগল-গরুকে খাওয়াতে হচ্ছে। কারণ গোলাপ না কাটলে বাগান নষ্ট হয়ে যায়। একদিকে ফুলের বেচাকেনা নেই, অন্যদিকে ফুল কাটার জন্য শ্রমিক খরচ গুনতে হচ্ছে।’
যশোর ঝিকরগাছা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মাসুম হোসেন পলাশ জানান, ‘উপজেলার গদখালীতে এবার সাড়ে ছয় হাজার হেক্টর জমি ফুল চাষের আওতায় আনা হয়েছিল। কিন্তু মহামারি করোনা ও ঘূর্ণিঝড় আম্পানের তাণ্ডবে প্রায় সব কৃষকই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। নষ্ট হয়ে গেছে ফুলের সব ক্ষেত। শুধু করোনার কারণে ফুল বেচতে না পারায় প্রায় ৩০ কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে কৃষকদের। আর ঘূর্ণিঝড় আম্পানের কারণে ক্ষেতের ফুল ও শেডের ক্ষতি হয়েছে প্রায় ২০ কোটি টাকা। অর্থাৎ করোনা এবং আম্পানে মোট ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৫০ কোটি টাকা। এরই মধ্যে ফুল চাষের সঙ্গে জড়িত ৩০০ জন চাষির মাঝে বিনামূল্যে আউসের বীজ বিতরণ করা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত ৫০০ কৃষকের মাঝে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে। যারা প্রকৃত ফুলচাষি তাদের চিহ্নিত করে আরও সহযোগিতা করার চিন্তাভাবনা আমাদের আছে।

https://channelkhulna.tv/

সংবাদ প্রতিদিন আরও সংবাদ

সাবেক আইজিপি ও কেএমপি কমিশনারসহ ১৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা

আদালত চত্বরে সাবেক মন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্রের ওপর ডিম নিক্ষেপ

আমির হোসেন আমু গ্রেপ্তার

কাকরাইল মসজিদে সাদপন্থিদের ঢুকতে দেওয়া হবে না তাবলিগ জামাত

কালীগঞ্জে ভারতীয় গরু আনতে গিয়ে যুবক আটক

পাটের ব্যাগ পুনরায় সর্বত্র চালুর উদ্যোগ নিয়েছি : সাখাওয়াত

চ্যানেল খুলনা মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন  
DMCA.com Protection Status
সম্পাদক: মো. হাসানুর রহমান তানজির
It’s An Sister Concern of Channel Khulna Media
© ২০১৮ - ২০২৪ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত | চ্যানেল খুলনা.বাংলা, channelkhulna.com.bd
যোগাযোগঃ কেডিএ এপ্রোচ রোড (টেক্সটাইল মিল মোড়), নিউ মার্কেট, খুলনা।
প্রধান কার্যালয়ঃ ৫২/১, রোড- ২১৭, খালিশপুর, খুলনা।
ফোন- 09696-408030, 01704-408030, ই-মেইল: channelkhulnatv@gmail.com
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য অধিদফতরে অনলাইন নিউজ পোর্টাল নিবন্ধনের জন্য আবেদিত।