মোল্লা মফিজুল ইসলাম ঠান্ডু দিঘলিয়া উপজেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। গত ইউপি নির্বাচনে দলীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ায় দল থেকে বহিষ্কৃত হন। স্থানীয় সংসদ সদস্য আব্দুস সালাম মূর্শিদীর আশীর্বাদ থাকায় বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়া সত্ত্বেও গাজীরহাট ইউপি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ওই নির্বাচনে তার শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বী দলীয় প্রার্থী ছিলেন কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী হেলাল। দল থেকে বহিষ্কৃত হলেও স্থানীয় সংসদ সদস্য আব্দুস সালাম মুর্শেদী গাজীরহাটে সরকারি কিংবা দলীয় কোন প্রোগ্রামে আসলে আওয়ামী লীগের মূল ধারার নেতা-কর্মীদের উপেক্ষা করে ঠান্ডু মোল্লাকে তিনি প্রাধান্য দিতেন এবং তার বাড়িতে খাওয়া দাওয়া করতেন। চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার কিছুদিন পর থেকে ঠান্ডু মোল্লা ব্যক্তিগত দেহরক্ষী নিয়ে চলাফেরা শুরু করেন।
শুরু হয় গাজীরহাট ইউনিয়নে তার একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার। দল থেকে বহিষ্কৃত হওয়ার পরও এমপি সালাম মুর্শিদীর প্রভাব খাটিয়ে গাজীরহাট ইউনিয়নের মূল ধারার আওয়ামীলীগের নেতা-কর্মীদের কোণঠাসা করে ফেলেন। এলাকায় তিনি তার ভাই যুবলীগ নেতা হামিম মোল্লা এবং বুলু শেখ মূর্তিমান আতঙ্কে পরিণত হন। একের পর এক এলাকায় নানাবিধ অপকর্ম শুরু করেন। প্রতিপক্ষ আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীদের ঘরবাড়ি ভাঙচুর, লুটপাট, প্রকাশ্যে ঘেরের মাছ লুট, হাট, বাজার দখল, চাঁদাবাজি, বাজারের সরকারি ইট তুলে বিক্রি, সড়কের পাশে সরকারি গাছ কেটে বিক্রি, স্কুলে চাকুরী দেওয়ার নামে, সালিশীর নামে টাকা হাতিয়ে নেওয়া, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জমি দখল, গরুর হাটের আদায়কৃত অর্থ আত্মসাৎ, অবৈধ মাদক ব্যবসার পৃষ্ঠপোষকতা, জুয়ার কোট পরিচালনা, স্থানীয় আওয়ামী লীগের কর্মীকে পিটিয়ে হত্যাসহ এলাকায় তার বিরুদ্ধে নানাবিধ অভিযোগ রয়েছে। ঠান্ডু মোল্লা নির্দেশে উপরোক্ত সকল অপকর্মগুলো পরিচালিত হতো তার সেকেন্ড ইন কমান্ড ভাই যুবলীগ নেতা হামিম মোল্লা ও বুলু শেখ এবং তাদের বাহিনীর নেতৃত্বে।
এছাড়াও ঠান্ডু মোল্লার বিরুদ্ধে টিআর, কাবিটা প্রকল্পের কাজ না করে অর্থ আত্মসাৎ, গভীর নলকূপ প্রদান বাবদ অতিরিক্ত টাকা আদায়, ট্রেড লাইসেন্স, উন্নয়ন তহবিল, উপজেলা পরিষদের বরাদ্দ এবং সরকারের উন্নয়নমূলক বিভিন্ন প্রকল্পে দুর্নীতি করে অর্থ আত্মসাৎসহ নানাবিধ অভিযোগ রয়েছে। ক্ষমতার দাপটে তিনি ইউনিয়ন পরিষদের সদস্যদের সঙ্গে আলোচনা না করে প্রকল্পের অর্থ ইচ্ছামত খরচ করতেন। কোন সদস্য এর প্রতিবাদ করলে তাদেরকে নানাভাবে হুমকি ধামকি এবং ভয় ভীতি দেখানো হতো। তার দেহরক্ষী যুবলীগনেতা রুবেলও সরকারি খাস জমি দখলসহ নানাবিধ অপকর্মের সাথে জড়িত ছিল।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি ও গত ইউপি নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী হেলাল বলেন, আমরা আওয়ামী লীগ করেও ঠান্ডু মোল্লা তার সেকেন্ড ইন কমান্ড তার ভাই৷ হামিম মোল্লা, বুলু শেখসহ তাদের বাহিনীর ভয়ে বিএনপির জামায়াতের মতো কোণঠাসা হয়ে ছিলাম। তাদের ভয়ে আমার বংশের লোকজন কখনও নির্ভয়ে চলাফেরা করতে পারেনি। আমরা অত্যাচারিত হয়েছি। তার বডিগার্ড রুবেলের দখলকৃত গাজীরহাট বাজার সংলগ্ন সরকারি খাস জমি উদ্ধারে গত ১০ জুলাই দিঘলিয়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) দেবাংশু বিশ্বাসের র সাথে তিনি চরম উদ্যোক্তপূর্ণ আচরণ করেন। এবং তাকে দেখে নেওয়ার হুমকি দেয়। চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর ঠান্ডু মোল্লা নিজে উপস্থিত থেকে তার ক্যাডার বাহিনী দিয়ে কোলা বাজারে আমার অফিসের তালা ভেঙ্গে জোরপূর্বক দখল করে নেয়। দল থেকে বহিষ্কৃত বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়া সত্ত্বেও সালাম মূর্শেদীর প্রত্যক্ষ ইঙ্গিতে, তার সাহায্য, সহযোগীতা এবং প্রশাসনকে ব্যবহার করে মাত্র ১৫৪ ভোটে আমাকে জোরপূর্বক পরাজিত করে।
গাজীরহাট ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোল্লা আব্দুস সালাম বলেন, সালাম মূর্শিদীর আস্থাভাজন এবং তার প্রভাব এবং নির্দেশে গাজীরহাট ইউনিয়ন আ’লীগের মূল ধারার নেতা-কর্মীদের কোণঠাসা করে রেখেছিলো। ইউপি চেয়ারম্যান নির্বাচন হওয়ার পর থেকে তার এবং তার ক্যাডারদের অত্যাচার, অবিচার, নির্যাতনে সবাই ভীত সশস্ত্র ছিলাম। চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর তার ক্যাডার বাহিনী তার নির্দেশে বামনডাঙ্গা মোল্লা বংশের একাধিক বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর, গণহারে লুটপাট এমনকি গোয়ালের গরু লুট করে নিয়ে যায়। আমাকে কোলা বাজার কমিটির সভাপতি থেকে জোরপূর্বক সরিয়ে দেওয়া হয়। ঠান্ডু মোল্লা তার সেকেন্ড ইন কমান্ড ভাই হামিম মোল্লা, বুলু শেখ এবং তাদের ক্যাডারদের ভয়, হুমকীর কারণে গত ৭ বছর আমি কোলা বাজারে যেতে পারি না। এমনকি ভয়ে বাড়ি থেকেও বের হতে পারি না। বুলু শেখ বাদী হয়ে এ পর্যন্ত আমার নামে তিনটা মিথ্যা মামলা দায়ের করেছে। ঠান্ডু মোল্লা এবং বুলু শেখের নেতৃত্বে হাজী ছায়েমউদ্দিন স্কুলের সামনে সাবেক চেয়ারম্যান হেলালের মাছের ঘের থেকে দিন দুপুরে প্রায় ৩/৪ লক্ষ টাকার মাছ লুট করে নেয়। কোলা বাজারের পার্শ্ববর্তী সাবেক অলোক মেম্বারের ৪২ শতক পৈত্রিক জমি জোরপূর্বক দখল করে নেয়। পরবর্তীতে সংখ্যালঘু সম্প্রদায় একত্রিত হয়ে জমি উদ্ধার করে। বুলু শেখ কোলা বাজারের সোলিংয়ের প্রায় ৬০/ ৭০ হাজার ইট তুলে ক্ষমতার দাপটে অবৈধভাবে বিক্রি করে দেয়। এবং বাজারে অবৈধভাবে দোকান ঘর তৈরি করে সেগুলো থেকে ভাড়া তুলে।
গাজীরহাট বাজারে ঠান্ডু মোল্লার ক্যাডাররা ৪ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সহ- সভাপতি পদ্মবিলার টিপু শেখকে প্রকাশ্য দিবালোকে পিটিয়ে এবং কুপিয়ে হত্যা করে। পদ্মবিলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নৈশ্য প্রহরী নিয়োগের জন্য খবির শেখ নামে জনৈক ব্যক্তির কাছ থেকে ঠান্ডু মোল্লা এবং তার ভাই হামিম মোল্লা ৬ লক্ষ টাকা নেয়। এছাড়াও মাঝিরগাতী এ কে এম মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী নিয়োগে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেয়। মোল্লাডাঙ্গা শাহা নূরানী মাদ্রাসার নামে কেটলা গরুর হাটের আদায়কৃত অর্থ মাদ্রাসায় জমা না দিয়ে ঠান্ডু মোল্লা এবং বুলু শেখ ভাগবাটোরা করে নেয়। হামিম মোল্লা ভাই চেয়ারম্যানের দাপট দেখিয়ে রাস্তার পাশের সরকারি গাছ নির্বিচার কেটে বিক্র করে। সালিশীর নামে উভয় পক্ষের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেয়।
গাজীরহাট বাজারে যত অবৈধ মাদকের ব্যবসা হামিম মোল্লা নিয়ন্ত্রণ করে এবং জুয়ার কোট পরিচালনা করে। বাচ্চু মোল্লার কাছ থেকে ঠান্ডু মোল্লার নির্দেশে ১ লক্ষ টাকা চাঁদা আদায় করা হয়। ঠান্ডু মোল্লা তার ভাই হামিম মোল্লা এবং বুলু শেখের বিরুদ্ধে এ ধরনের অসংখ্য অপকর্মের অভিযোগ রয়েছে।
মোল্লা মফিজুল ইসলাম ঠান্ডু’র বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগের ব্যাপারে তার মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করেও তার সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি।