চ্যানেল খুলনা ডেস্কঃ খানজাহান আলী বিমানবন্দর দ্রুততার সঙ্গে নির্মাণ না হওয়ায় দক্ষিণাঞ্চলের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড গতি পাচ্ছে না। বৃহত্তর খুলনা অঞ্চলের চিংড়ি ও পর্যটন শিল্প এবং সামগ্রিক ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য দ্রুত বিমানবন্দর নির্মাণ এবং গ্যাস সরবরাহের দাবি জানিয়েছেন খুলনার জনপ্রতিনিধি ও ব্যবসায়ীরা।
সোমবার খুলনা শিল্প ও বণিক সমিতির সভাকক্ষে ভিশন ২০২১ ও ২০৪১-এর আলোকে ‘উন্নয়ন রোডম্যাপ’ শীর্ষক বিভাগীয় সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় অর্থ ও পরিকল্পনা উপকমিটি ওই সেমিনারের আয়োজন করে। এতে সার্বিক সহযোগিতা করে খুলনা শিল্প ও বণিক সমিতি।
সেমিনারে অতিথি ছিলেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি ও প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা মসিউর রহমান। খুলনা শিল্প ও বণিক সমিতির সভাপতি কাজী আমিনুল হকের সভাপতিত্বে সেমিনারে বক্তব্য দেন খুলনা-৪ আসনের সাংসদ আব্দুস সালাম মুর্শেদী, খুলনা-৬ আসনের সাংসদ মো. আক্তারুজ্জামান, সাউথ বাংলা অ্যাগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স ব্যাংকের চেয়ারম্যান এস এম আমজাদ হোসেন, ঝিনাইদহ চেম্বারের সাবেক সভাপতি মীর নাসির উদ্দিন, সাতক্ষীরা চেম্বারের সভাপতি নাসিম ফারুক খান, বাগেরহাট চেম্বারের সভাপতি শেখ লিয়াকত হোসেন প্রমুখ।
সেমিনারে জনপ্রতিনিধি ও ব্যবসায়ীরা বলেন, বর্তমান সরকারের প্রথম মেয়াদে নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি ছিল দ্রুত বিমানবন্দরের কাজ শুরু করা। কিন্তু গত ১১ বছরেও বিমানবন্দরের কাজ শুরু হয়নি। কিছু ভুল সিদ্ধান্তের কারণেই খানজাহান আলী বিমানবন্দরটির নির্মাণকাজ থমকে গেছে। তাঁরা মনে করেন, খানজাহান আলী বিমানবন্দর সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে বাস্তবায়ন করা উচিত। বিগত বাজেটগুলোতে বরাদ্দ দিয়ে কাজ শুরু হলে এত দিন বিমানবন্দরটি আলোর মুখ দেখত।
বক্তারা বলেন, জ্বালানি গ্যাস খুলনাবাসীর একটি অন্যতম দাবি। গ্যাসলাইন চালু হলে নতুন নতুন শিল্পকলকারখানা চালু হবে, শিল্পনগরী খুলনা অঞ্চলের ব্যবসা-বাণিজ্য প্রসারিত হবে। এ জন্য দ্রুত গ্যাস সরবরাহ এবং ভবিষ্যতে খুলনা অঞ্চলে তরল প্রাকৃতিক গ্যাস বা এলএনজি সরবরাহ করতে এখন থেকেই পরিকল্পনা করা প্রয়োজন।
সেমিনারে প্রতিদিন খুলনা-ঢাকা সরাসরি বিরতিহীন ট্রেন সার্ভিস চালুর জোর সুপারিশ করা হয়। বক্তারা বলেন, ট্রেন সার্ভিস চালু হলে অল্প সময়ের মধ্যে সাধারণ যাত্রী, পণ্য ও কাঁচামাল রাজধানীতে আনা-নেওয়া সম্ভব হবে। কিন্তু বর্তমানে সড়ক পথে ফেরি থাকার কারণে কখনো কখনো দুই-তিন দিন বা তারও বেশি সময় ফেরিঘাটে পণ্যবাহী ট্রাক আটকে থাকায় কাঁচামাল পচে যায় এবং দাম বৃদ্ধি পায়।
মোংলা বন্দরের স্বার্থে সব মাদার ভ্যাসেল থেকে দ্রুত পণ্য খালাস করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ এবং নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের অধীনে যত ঘাট রয়েছে সেগুলোকে সংস্কার করে আধুনিক ক্রেন স্থাপনের দাবি তোলেন ব্যবসায়ীরা।
ব্যবসায়ীরা আরও বলেন, বিভাগীয় শিল্প নগর খুলনার মুজগুন্নীতে পর্যটন করপোরেশনের বিশাল খালি জায়গা দীর্ঘদিন ধরে পড়ে রয়েছে। ওখানে একটি পাঁচতারা হোটেল নির্মাণ করলে বড় বড় ব্যবসায়ী ও আন্তর্জাতিক ক্রিকেট টিমগুলো সহজে এখানে আসতে পারবে।
স্থানীয় সাংসদ ও ব্যবসায়ী নেতারা খুলনা অঞ্চলে পরিকল্পিত উন্নয়নের ওপর গুরুত্ব দেন। বিশেষ করে অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলো দ্রুত বাস্তবায়ন, আইটি ভিলেজ স্থাপন, লবণাক্ততা রোধ করা ও মিঠাপানির আধার সৃষ্টি, টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ, পর্যটন শিল্প বিকাশে পদক্ষেপ গ্রহণ, যোগাযোগ ব্যবস্থার সহজীকরণ, মোংলা বন্দর থেকে কমপক্ষে ২০ ভাগ কনটেইনারবাহী জাহাজ খালাস করা যেন হয় সেই দাবি তুলে ধরা হয়। একই সঙ্গে অপরিকল্পিত চিংড়ি চাষের পরিবর্তে ‘ভেনামি’ চাষের অনুমোদনের প্রসঙ্গ তুলে ধরেন।
ব্যবসায়ীরা বলেন, তাঁদের ওই দাবিগুলো পূরণ হলেই খুলনার অর্থনৈতিক গতি বৃদ্ধি পাবে। পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর খুলনায় অর্থনৈতিক কর্মযজ্ঞ শুরু হবে। কিন্তু সেই কর্মযজ্ঞ শুরু হওয়ার আগে পরিকল্পিত প্রস্তুতি নিতে হবে। আর এখন থেকে ওই প্রস্তুতি না নিলে উন্নয়নের দিক থেকে অনেক পিছিয়ে পড়বে খুলনা শহর।