চ্যানেল খুলনা ডেস্কঃ শহিদ আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতালটি ২৫০ শয্যা নিয়ে ১৯৯৮ সালে প্রতিষ্ঠা হলেও চালু হয়েছে ২০১০ সালে। তবে চালুর এক দশক পার হলেও এখনও পূর্ণতা পায়নি দেশের অন্যতম বৃহৎ বিশেষায়িত এ হাসপাতালটি। ২৫০ বেডের হাসপাতালে ২শ’ বেডও চালু হয়নি। অত্যাধুনিক সব যন্ত্র মাসের পর মাস বিকল থাকে। চিকিৎসক ও জনবল সংকটে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের একমাত্র বিশেষায়িত হাসপাতালটির স্বাস্থ্য সেবা পেতে সাধারণ মানুষের পদে পদে হয়রানি।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, গরীব ও অসহায় মানুষেরা ব্যয়বহুল চিকিৎসা সেবা কম খরচে বা বিনামূল্যে পেতে শহিদ শেখ আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতালে আসেন। কিন্তু চিকিৎসক ও জনবল সংকটের কারণে সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন তারা। কার্ডিওলজি, নিউরোলজি, নেফ্রোলজি ও ইউরোলজি চিকিৎসা কম খরচে নিতে সাধারণ মানুষকে এ হাসপাতালে ধরনা দিতে হয়। ১০টি জটিল ও কঠির রোগের চিকিৎসার জন্য এ হাসপাতালে সিনিয়র কনসালটেন্ট পদে ১২ জন চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও সেখানে রয়েছেন দুই-তিনজন। বাকি ১০টি পদ শূন্য। অপর গুরুত্বপূর্ণ ৫টি বিভাগে একজন করে কনসালটেন্ট থাকার কথা তবে সেখানে নেই তিনজন চিকিৎসক। এখানে পর্যাপ্ত মেডিক্যাল অফিসার ও জুনিয়র কনসালটেন্টও নেই। চীফ কনসালটেন্ট নেই নিউরোলজি, নেফ্রোলজি ও অর্থোপেডিক্স বিভাগে। এছাড়া নিউরোসার্জারি, পেডিয়াট্রিক কার্ডিয়াক সার্জারি, কার্ডিওথোরাসিক এ্যান্ড কার্ডিওভাসকুলার সার্জারি, আইসিইউ, ব্লাড ট্রান্সফিউশন, এ্যানেসেথসিওলজি, কার্ডিওথোরাসিক এ্যানেসেথসিয়া এবং প্লাস্টিক সার্জারি ও বার্ন ইউনিটে সিনিয়র কনসালটেন্ট নেই। একজন জুনিয়র কনস্যালট্যান্ট এবং একজন মেডিক্যাল অফিসার দিয়ে চলছে এ বিভাগটি। এছাড়া মেডিকেল অফিসারের ৪১টি পদের মধ্যে ২০টি পদ শূন্য। চিকিৎসক ছাড়া নার্স, ওয়ার্ডবয়সহ অন্যান্য অন্তত ৮৩টি পদই শূন্য। অনুরূপভাবে চিকিৎসা সেবার অত্যাধুনিক যন্ত্রগুলো অকেজো হয়ে পড়ে আছে।
তবে যেটুকু জনবল আর সরঞ্জাম চালু রয়েছে তাও জিম্মি হয়ে পরেছে এক শ্রেণী অসাধু সিন্ডিকেটের হাতে। সরেজমিনে দেখা যায়, দূর দূরান্ত থেকে আসা রোগীরা পদে পদে হয়রানি হচ্ছে। গত ১৮ ফেব্র“য়ারি নড়াইল থেকে আসা মোঃ ইলিয়াস ভোরে বাসা থেকে বের হন আর বেলা ১১টায় এসে পৌঁছান হাসপাতালে। টিকিট কাউন্টারে গিয়ে যোগাযোগ করলে তাকে বলা হয় এখন টিকিট হবে না বেলা ১১টার আগে আসতে হবে। যদিও সামনের কাচের গায়ে লেখা ১২টা পর্যন্ত টিকিট দেয়া হবে। সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে সুপারিশ করলে সেখান থেকে দেয়া হয় টিকিট, পরে চিকিৎসককে দেখাতে সে লাইনে দাঁড়ায়। তখন নেফ্রোলোজি মেডিকেল অফিসার নাস্তা খাচ্ছিলেন। নাস্তা খেয়ে কিছু সময় ৭ থেকে ৮ জন রোগী দেখেন। এরপর ডাক্তার জরুরি কাজে চলে গেলেন আর ইলিয়াস দেখাতে পারলেন না ডাক্তার। তবে এ্যাটেন্ডেন্ট দুইটার পর একই ডাক্তারকে তা ব্যক্তিগত চেম্বারে দেখানোর প্রস্তাব বা পরামর্শ দিলেন। শুধু ইলিয়াস একা নয়, এভাবে হয়রানি আর ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে দূর-দূরান্ত থেকে আসা সাধারণ রোগী ও তার পরিবারকে। যা এখন শহিদ আবু নাসের হাসপাতালের নিত্যনৈমিত্তিক চিত্র।
খোঁজ নিয়ে জানযায়, হাসপাতালের স্বাস্থ্য সেবা জিম্মি করে রেখেছে একটি অসাধু সিন্ডিকেট। বহির্বিভাগ থেকে ভর্তি ওয়ার্ড। পরীক্ষা-নীরিক্ষায় দীর্ঘসুত্রিতা সৃষ্টি থেকে শুরু করে সর্বক্ষেত্রে বাণিজ্যিকরণ হয়েছে। কন্ট্রাক্ট সার্ভিসের কর্মীদের টাকা দিলে সব কিছুই সম্ভব এ হাসপাতালে।
খুলনায় চিকিৎসকরেদর অভিভাবক বিএমএ খুলনার সাধারণ সম্পাদক ডাঃ মেহেদী নেওয়াজ বলেন, প্রধানমন্ত্রী একান্ত আগ্রহের একটি প্রতিষ্ঠান শহিদ আবু নাসের হাসপাতাল। এখানে কোন ধরনের সিন্ডিকেটের থাকবে না, প্রয়োজনে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ হাসপাতালটি এ অঞ্চলের মানুষের জন্য একটি আশির্বাদ। হাসপাতালকে দালাল মুক্ত করতে স্বাস্থ্য প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন। এছাড়া হাসপাতালকে পূর্ণাঙ্গ ২৫০ বেড চালু করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি জোর দাবি জানান তিনি। এ ব্যাপারে বিএমএ খুলনাও সর্বাত্মকভাবে পাশে থাকবে বলে তিনি জানান।
হাসপাতালের পরিচালক ডাঃ বিধান চন্দ্র গোস্বামী বলেন, যে কোন মেশিন যে কোন সময় বিকল বা যান্ত্রিক ত্র“টির কারণে অচল হতে পারে। যা সাথে সাথে মেরামত করা সম্ভব হয় না। জনবল সংকট নিয়ে হাসপাতালটিতে এ অঞ্চলের মানুষের সেবা নিশ্চিত করতে প্রশাসন যথেষ্ট আন্তরিক রয়েছে।