চ্যানেল খুলনা ডেস্কঃমা-বাবার বুকে চিরনিদ্রায় শায়িত হয়েছেন খোকা। পাঁচ দফা জানাজা শেষে রাজধানীর জুরাইনে মা-বাবার কবরের পাশে দাফন করা হয়েছে তাকে।বৃহস্পতিবার (৭ নভেম্বর) সন্ধ্যায় রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় অবিভক্ত ঢাকার শেষ মেয়রকে দাফন করা হয়।এ দিন রাজধানীর পাঁচটি স্থানে পড়ানো হয় তার নামাজের জানাজা। পরে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সর্বস্তরের জনসাধারণ শ্রদ্ধা নিবেদন করেন এই মুক্তিযোদ্ধাকে। দিনভর জানাজায় লাখো মানুষ অংশগ্র নেন।
এ দিকে শেষবারের মত বেলা তিনটার দিকে সাদেক হোসেন খোকার মরদেহ নেওয়া হয় বর্তমান ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে। ঢাকা সিটি করপোরেশনের অবিভক্ত থাকা কালে যেখানে ২০০২ সাল থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত মেয়রের দায়িত্ব পালন করেন তিনি। সেখানে তার লাশ নেওয়ার পর করপোরেশের অনেক কর্মকর্তা কর্মচারী কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন।
সেখানে দক্ষিণের মেয়র সাইদ খোকন বলেন, দল মত নির্বিশেষে তিনি (খোকা) সকলেরর জন্য কাজ করেছেন। এটা আমাদের অনুপ্রাণিত করে। তার আদর্শে অনুকরণীয়।এ দিন নয়াপল্টনে খোকার প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে কান্না জড়িত কণ্ঠে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, খোকা ভাই আর আমাদের মাঝে নেই। এটা আমাদের জন্য হৃদয়বিদারক।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকা ১৯৫২ সালের ১২ মে পুরান ঢাকার সূত্রাপুরে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছাত্রজীবনেই রাজনীতিতে সক্রিয় হন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র থাকার সময় ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। খোকার রাজনীতিতে প্রবেশ বামপন্থি রাজনীতির হাত ধরে। আশির দশকে সম্পৃক্ত হন বিএনপির রাজনীতিতে। ১৯৯০ সালে ভারতে বাবরি মসজিদ ভাঙার ঘটনায় পুরান ঢাকায় হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলার চেষ্টা করা হয়েছিল। খোকা তখন এর প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। তিনি ওই ঘটনার জন্য হিন্দু সম্প্রদায়সহ পুরান ঢাকাবাসীর আস্থা অর্জন করেন।
সাদেক হোসেন খোকা ২০০১ সালের সংসদ নির্বাচনেও নির্বাচিত হন। তাকে বিএনপি-জামায়াত সরকারের মৎস্য ও পশুসম্পদমন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হয়। ওই সময় পুরান ঢাকায় বিএনপির রাজনীতিতে নিজস্ব বলয় তৈরি করেন। প্রতিটি থানা ও ওয়ার্ডে বিএনপিকে শক্তিশালী করতে তার বড় ভূমিকা ছিল। ২০০২ সালের ২৫ এপ্রিল অবিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে তিনি মেয়র নির্বাচিত হন।
গত ৪ নভেম্বর নিউইয়র্কের একটি হাসপাতালে বাংলাদেশ সময় দুপুর ১টা ৫০ মিনিটে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন সাদেক খোকা। সেদিন রাতে জ্যামাইকা মুসলিম সেন্টারে তার প্রথম দফা জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। মঙ্গলবার (৫ নভেম্বর) দিনগত রাত ১১টা ২০ মিনিটে এমিরেটস এয়ারলাইনসের একটি ফ্লাইটে খোকার মরদেহ নিয়ে দেশের পথে রওয়ানা দেন পরিবারের সদস্যরা। ৭ নভেম্বর সকাল ৮টা ২৬ মিনিটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে মরদেহ বহনকারী বিমানটি।