চ্যানেল খুলনা ডেস্কঃ সারাবিশ্ব জুড়ে চলছে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের তাণ্ডব। লকডাউন অবস্থা চলছে বিশ্বজুড়ে।প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ আক্রান্ত হচ্ছেন। মারা যাচ্ছেন শত শত মানুষ। সৌদি আরবের পবিত্র দুই নগরী মক্কা-মদিনায় চলছে কারফিউ। এ পরিস্থিতিতে চলতি বছর মুসলমানদের সর্বোচ্চ ধর্মীয় জমায়েত পবিত্র হজ অনুষ্ঠিত হবে কি-না সেটা নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। তবে এর আগে ১৭৯৮ সালে একবার হজ স্থগিত করা হয়েছিল। ২২২ বছর আগের সেই ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি হওয়ার শঙ্কা দেখা যাচ্ছে এবার।
এদিকে, সৌদি কর্মকর্তাদের বরাতে ব্রিটিশ গণমাধ্যম গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, করোনা পরিস্থিতির কারণে এ বছর হজ বাতিল হতে পারে। ইসলামের ইতিহাসে অবশ্য হজ বাতিলের ঘটনা আগেও ঘটেছে। তবে আধুনিক ইতিহাসে এটা বিরল ঘটনা। সর্বশেষ প্রায় ২০০ বছর আগে ১৭৯৮ সালে হজ বাতিল করা হয়েছিল।
এছাড়া, করোনা ভাইরাসের কারণে হজ অনুষ্ঠিত হবে কিনা তা জানতে মুসলিম সম্প্রদায়কে অপেক্ষা করতে বলেছে সৌদি আরব। দেশটির হজ ও ওমরাহ মন্ত্রী মোহাম্মদ বাতেন মঙ্গলবার (৩১ মার্চ) রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে এ কথা বলেছেন।
এদিকে, করোনা পরিস্থিতিতে এখনই হজের পরিকল্পনা না করতে মুসলিম বিশ্বের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে সৌদি আরব। মুঠোফোনে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন হাবের সভাপতি শাহাদাত হোসাইন তসলিম।
তিনি জানান, হজ চলাকালীন সৌদি আরবে হাজীদের আবাসনের আগাম বুকিং, ক্যাটারিং সার্ভিস ও বিমান টিকিট কাটার কার্যক্রম স্থগিত রাখার আহ্বান জানিয়েছেন দেশটির হজ ও ওমরাহমন্ত্রী ড. সালেহ বিন তাহের বিন তাজ।
মার্চের প্রথম দিকে করোনাভাইরাসের কারণে ওমরাহ স্থগিত করেছিল সৌদি। সেই স্থাগিতাদেশ এখনও বহাল আছে।
তবে হজ বাতিলের এই সম্ভাবনা মুসলিম বিশ্বে কেমন প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে সেটা নিয়েই সৌদি কর্তৃপক্ষকে ভাবতে হচ্ছে। এছাড়া বিপুল অর্থনৈতিক ক্ষতির বিষয়টিও সামনে চলে আসছে। করোনার প্রভাবে এরই মধ্যে তেলের দাম কমে যাওয়া ও ওমরাহ পালনে সাময়িক নিষেধাজ্ঞা জারি করায় কয়েক বিলিয়ন ডলার অর্থনৈতিক ক্ষতির সম্মুখিন হয়েছে দেশটি।
করোনাভাইরাস সৌদি আরবকে নতুন চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে বলে মনে করছেন মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক বিশেষজ্ঞ ইয়াসমিন ফারুক।
তিনি বলেন, ‘হজ বাতিল করলে সেটা সৌদির সমালোচক এবং আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের জন্য মোক্ষম হাতিয়ার হয়ে উঠবে। তারা এটাকে পুঁজি করে ইসলামের পবিত্রতম স্থানগুলোর ওপর সৌদি নিয়ন্ত্রণ নিয়ে প্রশ্ন তোলার সুযোগ পাবে।’
নিউজিল্যান্ডের গ্র্যান্ড মুফতি থেকে শুরু করে মালয়েশিয়া এবং এর বাইরেও ইসলামিক সংস্থাগুলোর একাধিক ব্যক্তি উদ্বেগ প্রকাশ করেছে যে, সৌদির এই ধরনের পদক্ষেপ নিয়ে রাজনীতি করা হতে পারে এবং এটাকে সৌদিকে ঘায়েল করার অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হতে পারে। বিশেষ করে ইরান এবং তার মিত্ররা এই পরিস্থিতির সুযোগ নিতে পারে।
সৌদিপন্থী পর্যবেক্ষকরা এই ভাইরাসটিকে কাতার বা ইরানের ষড়যন্ত্র বলে অভিহিত করার পরে সোশ্যাল মিডিয়ায় এটা নিয়ে অনেক হাস্যরস ও উস্কানিমূলক বক্তব্য প্রচার করা হচ্ছে। অনেকে বলছেন, একজন ইরানি ওমরাহ পালনকারীর মাধ্যমে সৌদি আরবে করোনা ছড়িয়ে পড়েছে। ওই ব্যক্তির শরীরে করোনাভাইরাস ছিল। এর মানে দাঁড়াচ্ছে, করোনা ইস্যুতে আবারও আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বী ইরানে মুখোমুখি হতে যাচ্ছে সৌদি আরব। সৌদি সরকার ও আলেমরা যখন ভাইরাসটি যাতে পবিত্র স্থানগুলোতে ছড়িয়ে পড়তে না পারে সেই প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে তখন শিয়া ওমরাহ পালনকারীর মাধ্যমে করোনা ছড়িয়েছে এমন অভিযোগ আগুনে ঘি ঢালতে পারে।
লন্ডনের রয়্যাল ইউনাইটেড সার্ভিসেস ইনস্টিটিউটের একজন পরিদর্শন সহযোগী উমর করিম এএফপিকে বলেছেন, “সৌদি আরব নিজেকে ইরানের চেয়ে বেশি দায়িত্বশীল হিসাবে গড়ে তোলার চেষ্টা করছে। তবে আশঙ্কা করা হচ্ছে যে, এই সিদ্ধান্তটি হজ ও দুই পবিত্র নগরীর একমাত্র কর্তৃত্ব সৌদি আরবের হাতে থাকা উচিত কি-না তা নিয়ে মুসলিম বিশ্বে রাজনৈতিক বিতর্ককে পুনরায় উজ্জীবিত করতে পারে।”
গত সপ্তাহেই বিদেশি নাগরিকদের জন্য মক্কা ও মদিনায় ওমরাহ পালন ও ধর্মীয় সব কর্মকাণ্ড বন্ধের ঘোষণা দেয় সৌদি আরব। ওমরাহ হজ করার জন্য জমা নেওয়া অর্থ এজেন্সির মাধ্যমে ফেরত দেওয়া হবে বলেও জানানো হয়েছে। এছাড়া পর্যটন ভিসা থাকা সত্ত্বেও করোনাভাইরাস ধরা পড়েছে এমন এলাকা থেকে আসা বিভিন্ন দেশের নাগরিকদের সৌদি আরবে প্রবেশ না করতে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশটির কর্তৃপক্ষ। তবে এক্ষেত্রে নির্দিষ্ট করে দেশগুলোর নাম উল্লেখ করা হয়নি।
সৌদি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সাময়িকভাবে এসব নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। তবে কতদিন এসব নিষেধাজ্ঞা ও স্থগিতাদেশ থাকবে, সেটি বলা হয়নি।