চ্যানেল খুলনা ডেস্কঃজলাবদ্ধতা নিরসন ও ড্রেনেজ ব্যবস্থা উন্নয়নে খুলনা সিটি কর্পোরেশন (কেসিসি)-এর ৮৪৩ কোটি টাকার প্রকল্প জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদন মেলে চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে। এরপর অতিবাহিত হয়েছে ৮ মাস। এখনও এ প্রকল্পের কাজের টেন্ডার আহ্বান করা হয়নি। নগরবাসীর অভিমত, বর্ষা মৌসুমে সবচেয়ে বড় ভোগান্তি জলবদ্ধতা। তাই গুরুত্বের সাথে দ্রুত এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা উচিত। তবে কর্পোরেশন বলছে, কনসাল্টেন্ট নিয়োগ প্রক্রিয়া প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। কনসালটেন্ট নিয়োগ শেষ হলে টেন্ডারের আহ্বান করা হবে।
কর্পোরেশন সূত্রে জানা গেছে, নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে আসছে নগরবাসী। এর পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৩ সালে নগর অঞ্চল উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। এই প্রকল্পের আওতায় ময়ূর নদীসহ ১২টি খাল খনন করা হয়। খনন কাজে অনিয়মসহ নানা কারণে দুই বছরের মধ্যে ময়ূর নদী ভরাট হয়ে গেছে। এ অবস্থায় সামান্য বৃষ্টিতেই নগরীতে এখন হাঁটুপানি জমে যায়। সর্বশেষ কেসিসি নির্বাচনে ২২টি খাল পুনঃখনন করে নগরীকে জলাবদ্ধতামুক্ত করার প্রতিশ্র“তি দেন আলহাজ্ব তালুকদার আব্দুল খালেক। বিজয়ী হওয়ার পর দায়িত্ব গ্রহণের পরবর্তীতে সময়ে তার প্রতিশ্র“তি বাস্তবায়নে কেসিসি’র প্রকৌশল বিভাগকে নতুন প্রকল্প তৈরির নির্দেশনা দেন মেয়র। নির্দেশনা অনুযায়ী ৮৪৩ কোটি টাকার প্রকল্প তৈরি করা হয়। এ প্রকল্পের মূল অংশে রয়েছে ৯টি প্রধান সড়কের ৬২ কিলোমিটার এলাকায় প্রাইমারি ড্রেন নির্মাণ। নগরীর বিভিন্ন ওয়ার্ডের ভেতরে সেকেন্ডারি ড্রেন (৩ ফুটের কম) নির্মাণ করা হবে প্রায় ১২৮ কিলোমিটার। প্রধান ড্রেনগুলোর মধ্যে মুজগুন্নী মহাসড়কের উভয় পাশে ফুটপাতসহ দুই পাশে ৮ কিলোমিটার ড্রেন, যশোর রোডের ডাকবাংলো মোড় থেকে নতুন রাস্তা পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার নতুন ড্রেন, খানজাহান আলী রোডের পিটিআই মোড় থেকে রূপসা ঘাট পর্যন্ত ৩ কিলোমিটার নতুন ড্রেন, একই সড়কের ফেরঘাট বাস টার্মিনাল থেকে ক্যাসেল সালাম হোটেল পর্যন্ত ৬ কিলোমিটার ড্রেন, আপার যশোর রোডের পিকচার প্যালেস মোড় থেকে ১ নম্বর কাস্টমঘাট পর্যন্ত আড়াই কিলোমিটার ড্রেন নির্মাণ। এ ছাড়া ময়ূর নদীসহ ৮টি খাল খনন ও পাড় বাঁধাই করা হবে। খালগুলো হচ্ছে ক্ষেত্রখালী খাল, ছড়িছড়া খাল, হরিণটানা খাল, নারকেলবাড়িয়া খাল, তালতলা খাল, নার্সি ইনস্টিটিউট থেকে ময়ূর নদী পর্যন্ত খাল, তালতলা খাল, লবণচরা ২নং স্লুইস গেট খাল। পাশাপাশি রূপসা ভেড়ীবাঁধ, মতিয়াখালী খাল, পোর্ট কলোনি থেকে ভৈরব নদ, লবণচরা স্লুইস গেট-১ ও ২, রায়ের মহল স্লুইস গেট স্থানান্তর ও নির্মাণ, রূপসা পাইকারি মাছ বাজার, প্রান্তিক খালের আউটলেট থেকে ময়ূর নদী ও চরের হাটে নতুন স্লুইস গেট নির্মাণ, আউটলেট খনন ও বাঁধাই।
জানা গেছে, জলাবদ্ধতা নিরসন ও ড্রেনেজ ব্যবস্থা উন্নয়নে খুলনা সিটি কর্পোরেশন (কেসিসি)-এর ৮৪৩ কোটি টাকার প্রকল্প একনেক সভায় অনুমোদন মেলে চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে। এরপর অতিবাহিত হয়েছে ৮ মাস। এখনও এ প্রকল্পের কোন কাজের টেন্ডার আহ্বান করতে পারেনি সংস্থাটি।
নগরবাসী জানান, বর্ষা মৌসুমে সব চেয়ে বড় ভোগান্তি জলাবদ্ধতা। সামান্য বৃষ্টিতে সড়কে হাটু পানি জমে যায়। সর্বশেষ কিছুদিন আগে নগরীতে রেকর্ড পরিমাণ বৃষ্টিপাত হয়। ওই বৃষ্টিপাতে শহরের সড়ক, বাড়ি-ঘার পানিতে নিমজ্জিত হয়। বাস্তুহারা এলাকায় ৩-৪ দিন পর্যন্ত পানিতে নিমজ্জিত ছিলো। তাই জনভোগান্তি কমাতে গুরুত্বের সাথে দ্রুত এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা উচিত।
এ প্রকল্পের দায়িত্বে রয়েছে নির্বাহী প্রকৌশলী মশিউজ্জামান খান। তিনি বলেন প্রকল্পের কনসাল্টেন্ট নিয়োগ প্রক্রিয়া প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। কনসাল্টেন্ট নিয়োগ শেষ হলে টেন্ডারের আহ্বান করা হবে। তবে ২০১৯-২০ অর্থবছরে ২১৭ কোটির টাকার কাজ করা হবে। বাকী কাজ পর্যায়ক্রমে সম্পন্ন হবে।