বাংলাদেশ জামায়াতে ইসরামীর কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সেক্রেটারি ও খুলনা অঞ্চল পরিচালক মুহাদ্দিস আব্দুল খালেক বলেন, বাইয়াত বা শপথ ইসলামের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দিক। মানব জীবনে সফলতার জন্য বাইয়াতের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। বাইয়াত বিহীন মৃত্যু জাহিলিয়াতের মৃত্যু। রুকনরাই এই সংগঠনের প্রাণ। একজন রুকন হিসেবে আমাদের পরিপূর্ণভাবে আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের আনুগত্য করতে হবে, বিনয়ের সাথে পথ চলতে হবে, আমিত্ব পরিত্যাগ করতে হবে। ইকামাতে দ্বীনের কাজ একটি ফরজ ইবাদত। ইকামাতে দ্বীনের কাজকে আঞ্জাম দেওয়ার জন্য জামায়াতের সদস্যদের (রুকন) তাদের কৃত শপথের আলোকে জীবন পরিচালনা করতে হবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের রাজনীতিতে জামায়াতে ইসলামী একটি গুরুত্বপূর্ণ শক্তি বা ফ্যাক্টর হলেও জামায়াত যে আদর্শকে ধারণ করে তা বাস্তবায়নের জন্য জামায়াতের জনশক্তিদের টার্গেট ভিত্তিক ও পরিকল্পিতভাবে কাজ করতে হবে। প্রত্যেক জনশক্তিকে মানবসম্পদে পরিণত করে রাষ্ট্রের সকল সেক্টরে যোগ্যতার স্বাক্ষর রাখতে হবে। একটি সফল বিপ্লবের জন্য জনমত তৈরীর পাশাপাশি যোগ্য লিডারশীপ তৈরী করতে হবে। জামায়াত কর্মীদের মানবসেবায় উজ্জীবিত হয়ে সমাজের মানুষের কল্যাণে কাজ করতে হবে। শুক্রবার (১৩ ডিসেম্বর) সকালে নগরীর আল ফারুক সোসাইটি মিলনায়তনে খুলনা মহানগরী জামায়াতে ইসলামীর উদ্যোগে অনুষ্ঠিত রুকন শিক্ষাশিবিরে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ সব কথা বলেন।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও খুলনা মহানগরী আমীর অধ্যাপক মাহফুজুর রহমানের সভাপতিত্বে এবং কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও সেক্রেটারি এডভোকেট শেখ জাহাঙ্গীর হোসাইন হেলালের পরিচালনায় বিশেষ অতিথি ছিলেন কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও মসজিদ মিশনের সেক্রেটারি জেনারেল ড. মাওলানা খলিলুর রহমান মাদানী। কুরআনুল মাজিদ থেকে দারস পেশ করেন কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও খুলনা অঞ্চল টিম সদস্য মুহাদ্দিস রবিউল বাশার। এ সময় মহানগরী নায়েবে আমীর অধ্যাপক নজিবুর রহমান, সহকারী সেক্রেটারি এডভোকেট মুহাম্মদ শাহ আলম, প্রিন্সিপাল শেখ জাহাঙ্গীর আলম ও আজিজুল ইসলাম ফারাজী, মহানগরী কমপরিষদ সদস্য মাওলানা আ ন ম আব্দুল কুদ্দুস, মাওলানা শেখ মুহাম্মদ অলিউল্লাহ, মুকাররম আনসারী, মাওলানা শাহারুল ইসলাম, অধ্যাপক ইকবাল হোসেন, এ্ডভোকেট শফিকুল ইসলাম লিটন, অধ্যাপক জুলফিকার আলী উপস্থিত ছিলেন।
প্রধান অতিথি আরও বলেন, মানব জীবনের প্রথম ভিত্তি হচ্ছে পরিবার। ব্যক্তি পরিবারের একটা অংশ। আর পরিবার সমাজের অংশ ও ভিত্তিপ্রস্তর। সমাজকে বাদ দিয়ে যেমন রাষ্ট্রের কল্পনা করা যায় না, তেমনি পরিবার ছাড়া সমাজও অকল্পনীয়। এজন্য ইসলাম পারিবারিক জীবনকে অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করেছে। ফলে জামায়াতের রুকনদের নিজেদের পরিবার নিয়ে চিন্তা করতে হবে। জাহান্নামের কঠিন আযাব থেকে মুক্তির জন্য পরিবারের সদস্যদের ইসলামের সু-মহান আদর্শের ভিত্তিতে গড়ে তুলতে হবে। স্ত্রী-সন্তানদের ইসলামী আন্দোলনের সাথে সম্পৃক্ত করতে হবে।
ড. খলিলুর রহমান মাদানী বলেন, ইসলাম মানুষের মুক্তির সনদ। ইসলাম ব্যতীত মানুষের সঠিক কোন পথ নাই। ইসলাম থেকে সমাজ বিচ্ছিন্ন হলেই সমাজে নানা রকম বৈষম্যের সৃষ্টি হয়। অশান্তি তৈরি হয়। মানুষ অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়। যা বিগত ১৫ বছরে আওয়ামী লীগ দ্বারা সমাজে বিদ্যমান ছিল। আওয়ামী লীগের বিদায়ের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে ইসলাম প্রতিষ্ঠার প্রাথমিক বিজয় হয়েছে। চূড়ান্ত বিজয়ের জন্য জনগণের মাঝে ইসলামের সৌন্দর্য, ইসলামী শিক্ষা ও ইসলামী রাষ্ট্রের সুফল তুলে ধরে ধর্ম-বর্ণ, জাতি-গোষ্ঠী নির্বিশেষে নাগরিক হিসেবে প্রত্যেককে ইসলামের পতাকা তলে নিয়ে আসতে হবে। ইসলামের পতাকা তলে ভিন্ন ধর্মের মানুষ পূর্ণ নিরাপদ। এটি আল্লাহর বিধান।
নৈতিকতা বিহীন মানুষ দিয়ে কখনো সুন্দর সমাজ গঠন করা সম্ভব নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, জামায়াত-শিবির নৈতিকতাপূর্ণ মানুষ সৃষ্টির কাজ করে। জামায়াতে ইসলামীতে রয়েছে নৈতিক ও আদর্শবান নেতৃত্ব। যা জামায়াতে ইসলামীর দু’জন নেতা তিনটি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করে। এবং বহু নেতা সংসদ সদস্যের দায়িত্ব পালন করে ইতোপূর্বে সততার প্রমাণ দিয়েছেন। তাদের বিরুদ্ধে আজ পর্যন্ত কেউ দুর্নীতির প্রমাণ করা তো দূরের কথা অভিযোগও উত্থাপিত করতে পারেনি। তাই জনগণকে পূর্বের ন্যায় জামায়াত-শিবিরের প্রতি ভালোবাসা ও সমথর্ন অব্যাহত রাখার আহবান জানান।
সভাপতির বক্তৃতায় অধ্যাপক মাহফুজুর রহমান বলেন, ফ্যাসিবাদের আর কোন জায়গা বাংলাদেশে হবে না। এদেশের সকল গণতান্ত্রিক শক্তি রাজনীতি করার অধিকার রাখে। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, ফ্যাসিবাদ কী গণতান্ত্রিক শক্তি? স্বৈরাচার ও খুনির সরকার কী গণতান্ত্রিক শক্তি? সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আপনারা মানুষের দীর্ঘ সংগ্রামের ফসল। আপনাদের নৈতিক দায়িত্ব হলো যারা মানুষ হত্যা করেছে দ্রুততার সাথে তাদেরকে বিচারের আওতায় আনা।