চ্যানেল খুলনা ডেস্কঃঅনলাইনে জুয়া খেলে ব্যাংকের ভল্ট থেকে ৩ কোটি ৪৫ লাখ টাকা খোয়ালেন প্রিমিয়ার ব্যাংকের রাজশাহী শাখার এক কর্মকর্তা। টাকাগুলো জুয়াতে হেরেছেন বলেও দাবি করেছেন তিনি। রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশের কাছে এ তথ্য দিয়েছেন ওই ব্যাংক কর্মকর্তা। রিমান্ড শেষে বুধবার দুপুর ১২টার দিকে পুলিশ তাকে আদালতে পাঠায়। ওই কর্মকর্তার নাম শামসুল ইসলাম ওরফে ফয়সাল। তিনি নগরীর সাগরপাড়া এলাকার নজরুল ইসলামের ছেলে। প্রিমিয়ার ব্যাংকের রাজশাহী শাখার ক্যাশ ইনচার্জ পদে দায়িত্বে ছিলেন তিনি।
এই টাকা ব্যাংক থেকে আত্মসাতের কথা স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন ফয়সাল। তিন দিনের রিমান্ড শেষে ফয়সাল স্বীকারোক্তি দিতে রাজি হলে বুধবার দুপুর ১২টার দিকে তাকে মহানগর মুখ্য হাকিম আদালত-২ এ হাজির করে বোয়ালিয়া থানা পুলিশ। বিকেল পৌনে ৪টা থেকে সোয়া ৪টা পর্যন্ত বিচারক মো: সাদেকীন হাবীব বাপ্পী ১৬৪ ধারায় ফায়সালের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি রেকর্ড করেন বলে জানান বোয়ালিয়া থানার ওসি নিবারণ চন্দ্র বর্মণ।
এদিকে, টাকা আত্মসাতের ঘটনা তদন্তে এরইমধ্যে ব্যাংকটির প্রধান কার্যালয় থেকে উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহ্ আলমের নেতৃত্বে উচ্চপর্যায়ের একটি তদন্ত টিম রাজশাহীতে এসে পৌঁছেছে। তদন্ত কাজ শুরু করেছেন।
তদন্ত কমিটির প্রধান উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহ্ আলম জানান, এই টাকা আত্মসাতের ঘটনায় ফয়সাল একাই নাকি ব্যাংকের আরো কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী জড়িত তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তবে ভোল্টে টাকা সংরক্ষণ প্রক্রিয়ায় অন্তত দুই জন কর্মকর্তার স্বাক্ষর থাকে। এক্ষেত্রে কী হয়েছে তাও দেখা হচ্ছে।
রাজশাহী মহানগর পুলিশের মুখপাত্র ও অতিরিক্ত উপ-কমিশনার গোলাম রুহুল কুদ্দুস জানান, ফয়সাল ব্যাংকের টাকা দিয়ে নিজের নামে সুবর্ণভূমি আবাসিক এলাকায় প্লট ও বাকি টাকা দুই বন্ধুকে ধার দিয়েছে বলে প্রথমে জানিয়েছিল। কিন্তু পরে রিমান্ডে নিয়ে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে তিনি স্বীকার করেছেন প্রায় দুই বছর আগে বীট-৩৬৫ অ্যাপেসর মাধ্যমে আন্তর্জাতিক জুয়াড়ী চক্রের সাথে জড়িয়ে পড়েন। ব্যাংকের ভোল্ট থেকে টাকা নিয়ে তিনি জুয়া খেলে হেরেছেন।
ফয়সাল পুলিশকে জানিয়েছেন, জুয়া খেলতে ব্যাংকের ভল্ট থেকে টাকা চুরি করেছিলেন। ব্যাংকের রাজশাহী শাখার ভোল্টে সব সময় প্রায় ১৫ কোটি টাকা থাকতো। টাকা রাখার ভল্টের সামনের লাইন ঠিক রেখে পেছনের লাইন থেকে তিনি টাকাগুলো সরাতেন। এতে করে ব্যাংকের কোন কর্মকর্তার সন্দেহ হতো না। ক্যাশ ইনচার্জ হিসেবে তিনিই দৈনিক টাকার হিসাব রাখতেন। খাতা-কলমে টাকার কোনো গড়মিল ছিল না।
রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে ব্যাংক কর্মকর্তা ফায়সালের দেয়া তথ্যের বরাদ দিয়ে বোয়ালিয়া থানার ওসি নিবারণ চন্দ্র বর্মণ জানান, গত দুই বছর ধরে তিনি টাকাগুলো ব্যাংক থেকে সরাতে থাকেন। এই টাকায় তিনি বিপিএল ও আইপিএলসহ বিভিন্ন খেলায় অনলাইনে বাজি ধরতেন। এতে কখনো কখনো জিতলেও প্রায়ই হারতেন। এভাবেই টাকাগুলো তিনি অনলাইনে জুয়া খেলে হেরেছেন বলে রিমান্ডে ফায়সাল জানিয়েছেন।
ওসি বলেন, গত সোমবার ফায়সালকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিন দিনের রিমান্ডে নিয়ে থানা হেফাজতে নেয়া হয়। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি ব্যাংকের ভোল্ট থেকে টাকা সরানোর কথা শিকার করেন। ফায়সাল জানিয়েছেন, ব্যাংকটির ভোল্টে সব সময় প্রায় ১৫ কোটি টাকা থাকতো। টাকা রাখার ভল্টের সামনের লাইন ঠিক রেখে পেছনের লাইন থেকে তিনি টাকাগুলো সরাতেন। এতে করে ব্যাংকের কোন কর্মকর্তার সন্দেহ হতো না।
ওসি নিবারণ চন্দ্র বর্মণ জানান, গত ২৪ জানুয়ারি ভোল্টের সমস্ত টাকা গণনার পর ৩ কোটি ৪৫ লাখ টাকা কম পাওয়া যায়। এ সময় তিনি টাকা সরানোর কথা স্বীকার করেন। প্রথমে তিনি বলেন, টাকাগুলো তার দুই বন্ধুকে এবং তার ব্যবসার একটি প্রকল্পের কিস্তি দিয়েছি। টাকাগুলো ফেরত দেয়ার জন্য সময় চান তিনি।
তবে তার কথায় সন্দেহ হলে রাত ১২টার দিকে তাকে পুলিশের হাতে তুলে দেয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা। পরে প্রিমিয়ার ব্যাংকের জোনাল ম্যানেজার সেলিম রেজা খান বাদি হয়ে বোয়ালিয়া মডেল থানায় টাকা আত্মসাতের অভিযোগ এনে মামলা করেন। সে মামলায় ফায়সালকে গ্রেফতার দেখানো হয়।