ঝিনাইদহ প্রতিনিধিঃঝিনাইদহে বাজারে বোরো ধানের দাম ভালো পাওয়াই ঘূর্ণিঝড় আম্ফান কিংবা বৃষ্টির ক্ষতি প্রভাব পড়েনি চাষিদের উপর। গেল কয়েক বছরের তুলনায় লাভের মুখ দেখছেন তারা। এদিকে সরকার নির্ধারিত দামের তুলনায় বাজার ধানের দাম বেশী হওয়াই কৃষকরা গুদামে ধান দিচ্ছে না। এতে অধিকাংশ খাদ্য গুদাম ফাকা পড়ে আছে। যার ফলে সরকারিভাবে ধান ক্রয় লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে না, বলে মনে করছেন জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক অফিস।
কৃষি বিভাগের তথ্য সূত্রে, জেলাই এবছর বোরো মৌসুমে ৪ লক্ষ ৯৮ হাজার মে.টন ধান উৎপাদিত হয়েছে। আর সরকারিভাবে খাদ্য গুদামে ১৪ হাজার ২ শ’ ৪২ মে.টন ক্রয়ের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে চলতি বছরের ২৩ এপ্রিল থেকে শুরু হয় বোরো ধান সংগ্রহ অভিযান। কিন্তু এখন পর্যন্ত খাদ্য বিভাগ মাত্র ১৩৭ মে.টন ধান ক্রয় করতে পেরেছে।
এ অভিযান শেষ হবে আগামী ৩১ আগস্ট তারিখে। আর কৃষি বিভাগের তথ্যে আম্ফান ঝড় ও বৃষ্টিতে ১০০ হেক্টর জমির ধান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
সরে জমিনে ঝিনাইদহের বিষয়খালী ধানের বাজারের গিয়ে দেখা যায়, ভোরের আলো ফুটতেই বাজারে একে একে ধান নিয়ে হাজির হচ্ছে কৃষকরা। সকাল হতেই ক্রমশই ধান কেনা-বেচায় সরগরম হয়ে উঠছে বাজার।
বাজারে গেল কয়েক বছরের তুলনায় এবার দাম বেড়ে মোটা ধান গড়ে প্রতি মন ১০৩০ থেকে ১০৫০ টাকা আর চিকোন ধান প্রতি মন ১১৫০ টাকা থেকে ১২০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এতে করে লাভ বেশী হচ্ছে কৃষদের।
ধান বিক্রি করতে আসা কৃষক শরিফুল ইসলাম জানানা, এবার যেমন ধানের দাম পাচ্ছি গেল ৫ বছরেও এমন ভালো দাম পায় নি। এতে আমাদের লাভই বেশ হচ্ছে। ১৩ থেকে ১৪ হাজার টাকা বিঘায় খরচ করে ধানের ফলন পাচ্ছি ৩০ থেকে ৩৫ মন হারে।
একই কথা জানান ধান বিক্রি করতে আসা অন্য কৃষকরা। তারা বলেন বাজারে বিক্রি করে ধানের দাম বেশ পাচ্ছি তাই সরকারী গুদামে ধান দিচ্ছি না। ঝড়-বৃষ্টিতে যা অল্প পরিমাণে ধান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দাম বেশী থাকায় তার আর প্রভাব পড়েনি।
ধান ব্যবসায়ী জানান, বর্তমান সময়ে বাইরে থেকে খাদ্য শস্য আমদানি না হওয়া এবং চাউলের দাম বৃদ্ধির কারণে ধানের দামও বাড়তি।
ঝিনাইদহ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃপাংশু শেখর বিশ্বাস জানান, এবছর ধানের উৎপাদন বেড়েছে এবং করোনা পরিস্থিতিতে খাদ্য নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে কৃষকরা ধীরে ধীরে বাজারে বিক্রি করায় দাম ভালো পাচ্ছে। এতে আগামীতে উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি ঝড়, বৃষ্টির ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবে।
ঝিনাইদহ জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক সেখ আনোয়ারুল করিম জানান, সরকার নির্ধারিত ধানের দাম ১০৪০ টাকা মন। এর থেকে বাজার মূল্য বেশী হওয়াই কৃষকরা গুদামে ধান দিচ্ছে না, তাদের সাথে যোগাযোগ করেও কোন সাড়া মিলছে না। বাজার মূল্য এমন থাকলে সরকারিভাবে ধান ক্রয় লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে না। তবে সরকারের উচ্চ মহলের সাথে যোগাযোগ চালাচ্ছি যাতে করে গুদামে ধান ক্রয়ের পরিমাণ বাড়ানো যায়।