সব কিছু
facebook channelkhulna.tv
খুলনা মঙ্গলবার , ১১ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ২৬শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
ডুমুরিয়ায় গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য জাঁতাশিল্প এখন বিলুপ্তির পথে | চ্যানেল খুলনা

ডুমুরিয়ায় গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য জাঁতাশিল্প এখন বিলুপ্তির পথে

শেখ মাহতাব হোসেন :: ঐতিহ্যবাহী জাঁতা। এখন আর কোথাও চোখে পড়ে না। খুলনায় বিলুপ্তির শেষ প্রান্তে জাঁতাশিল্প। খুলনা জেলা ডুমুরিয়া উপজেলায় ১৪ টি ইউনিয়ানে কোথাও এর দেখা মেলে না। একসময়ের গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য জাঁতাশিল্প এখন বিলুপ্তির শেষ প্রান্তে। গ্রামগঞ্জের কয়েকশ গ্রাম ঘুরেও এর দেখা মেলে না। অথচ এক সময় প্রায় বাড়িতেই এই জাঁতা পাওয়া যেতো।
প্রযুক্তির দ্রুত সম্প্রসারণ, জীবনযাত্রার মান উন্নত ও ব্যস্ততার কারণে হারাতে বসেছে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী জাঁতাশিল্প। একসময় উপজেলাগুলোর অধিকাংশ গ্রামের মানুষ জাঁতা দিয়ে ছোলা, মসুরি, খেসারি ও মুগসহ বিভিন্ন শস্যদানা ভেঙে ডাল তৈরি করতো। বর্তমানে এক গ্রাম থেকে অন্য গ্রামান্তরে ঘুরলেও আর জাঁতা দিয়ে ডাল ভাঙার দৃশ্য চোখে পড়ে না। গ্রামের মানুষেরা এখন বিদ্যুৎচালিত মেশিনে ডাল ভাঙানোর কাজ করেন। এতে করে প্রায় বিলুপ্তির শেষ প্রান্তে দাঁড়িয়েছে গ্রামগঞ্জের ডাল ভাঙার বহুল ব্যবহৃত জাঁতাশিল্প। জানা যায়, জাঁতা তৈরির মূল উপাদান চিকটা মাটি, অইলোন, ধানের গুঁড়া, পাথর মসৃণ দুই খণ্ড। পাথর কেটে গোল করে জাতা তৈরি করা হতো। একটি জাতা প্রায় ১৪-১৫ বছর ব্যবহার করা যায়। পাথরের তৈরি জাঁতা দিয়ে যখন কাজ হয় তখন এক ধরনের শব্দ হয়। এখন আর সে শব্দ শোনা যায় না।
জাঁতার পরিবর্তে উন্নত মেশিন তৈরি হওয়ার এখন আর কষ্ট করে কেউ জাঁতা চালান না। খুলনা জেলা ডুমুরিয়া উপজেলা খর্নিয়া ইউনিয়নের টিপনা গ্রামের আব্বাস শেখের বাড়িতে দেখা মেলে একটি জাঁতার। করিম শেখের স্ত্রী চম্পা বেগমকে (৫৬) দেখা যায়

জাঁতা দিয়ে খেঁসারি-কলাইয়ের ডাল ভাঙছেন। তার এই জাঁতার বয়স প্রায় ২০ বছর। যত্ন করে ব্যবহার করেন। বিভিন্ন প্রকারের ডাল ভাঙতে ব্যবহার করেন জাঁতা। চম্পা বেগম জানান, ‘আদিকাল থেকেই পারিবারিকভাবে আমরা এই জাঁতার ব্যবহার করে আসছি। বিয়ের পর থেকেই শাশুড়িকেও দেখেছি জাঁতা দিয়ে ডাল ভাঙতে।’ তিনি জানান, ‘অসময়ে এই জাঁতা বন্ধু হয়ে পাশে
দাঁড়ায়। বাড়িতে যদি আটা বা ছাতু না থাকে তাহলে খুব সহজেই জাঁতা থেকে আটা তৈরি করে রুটি তৈরি করা যায়।’
‘এক কেজি চালের আটা তৈরি করতে প্রায় ১৫-২০ মিনিট সময় লাগে। শুধু আটা, ছাতু, ডাল নয় মরিচ, ধনিয়া, গোলমরিচ, গরম মসলাও পিষে খাওয়া যায় এই জাঁতার মাধ্যমে’, বলে জানান তিনি। জাঁতাশিল্প সম্পর্কে উপজেলার টোংরামরী গ্রামের সুনিল বিশ্বাসের স্ত্রী করুনা বিশ্বাস বলেন, ‘মেশিনের চেয়ে বাড়িতে জাঁতা দিয়ে ডাল ভাঙলে ডালগুলোতে পুষ্টিকর খাদ্য উপাদান বেশি থাকে। এ কারণে এই ডালের স্বাদও ভালো লাগে খেতে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বর্তমানে কেউই আর পরিশ্রম করতে চায় না।
এ কারণে এখন আর জাঁতা দিয়ে ডাল ভাঙে না কেউই। আধুনিক আর উন্নয়নের যুগে আদিকালের জাঁতাশিল্প একেবারে হারিয়ে যাওয়ার শেষের দিকে।’
বামুন্দিয়া গ্রামের সাদিয়া জামান বলেন, ‘আধুনিক এই যুগে আমাদের ছেলে-মেয়েরা জাঁতা কী, তা ই জানে না। আমরা ছোটকাল থেকে মা-দাদি-চাচিদের দেখে আসছি জাঁতা দিয়ে বিভিন্ন ধরনের ডাল ভাঙতেন। তবে এখন আর সেই প্রচলন নেই।’
শোভনা গ্রামের নিয়াই বাবু জানান, ‘আধুনিক যন্ত্রপাতি ও প্রযুক্তির অবাধ প্রবাহের কারণে মানুষের জীবনযাত্রা দিন দিন বদলে যাচ্ছে। সেইসঙ্গে হারিয়ে যাচ্ছে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য। এই হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্যের একটি হচ্ছে জাঁতা। ’ আগে গ্রাম বাংলার প্রায় প্রতিটি বাড়িতে দেখা যেত এই জাঁতা। একসময় জাঁতা নারীদের কাছে খুব প্রয়োজনীয় একটি গৃহস্থালি উপকরণ ছিলো। তবে সময়ের কাছে ও আধুনিক যন্ত্র আসায় হারিয়ে যেতে বসেছে জাঁতা।
রুপ রংপুর গ্রামের গৃহবধূ শিখা মন্ডল (৪৬) বলেন,‘ বিয়ের আগে ছোটকাল থেকে আমাদের পরিবারে জাঁতার ব্যবহার ছিল। মা-দিদি, বৌদি, কাকিদের দেখেছি বিভিন্ন কাজে জাঁতা ব্যবহার করতেন।’
আমার বিয়ে হয়েছে প্রায় ২৫-৩০ বছর। সেই থেকে জাঁতার ব্যবহার শুরু করেছি। তার আগে আমার শাশুড়ি ব্যবহার করতেন। জাঁতাতে চালের আটা, ছাতু ইত্যাদি তৈরি করা যায়।’
‘এই জাঁতা দিয়ে আমাদের গ্রামের হিন্দু ও মুসলিম পরিবারের নারীরা চাল, গম, আটা-ময়দা তৈরি করে ব্যবহার করতো। এছাড়াও জাঁতা দিয়ে ভাঙানো হতো খেসারি, মটর, মসুর, মাসকলাই প্রভৃতি ডাল’, বলে জানান শিখা।
উপজেলার বেতাগ্রামের আব্দুল কাদের জানান, ‘গ্রামঞ্চলের কিছু পরিবার জাঁতাকে ঐতিহ্য হিসেবে ধরে রেখেছে। পরিবেশবান্ধব এই গৃহস্থ উপকরণ কেবল আমাদের ঐতিহ্য নয়, বরং নিজেদের প্রয়োজনেই এর ব্যবহার বাড়াতে হবে।

https://channelkhulna.tv/

খুলনার ইতিহাস ঐতিহ্য আরও সংবাদ

খুলনা বেতারের সূচনালগ্নে স্বর্ণোজ্জ্বল দিনগুলি

আধু‌নিকতার ছোঁয়ায় সংকটের মুখে রূপসার মৃৎ শিল্প পা‌শে দাঁড়া‌নোর আশ্বাস ইউএনও নাস‌রি‌নের

সুন্দরবনের সঙ্কটাপন্ন এলাকায় মধ্যে ৫টি সিমেন্ট কারখানার অনুমোদন

খুলনায় প্রতিনিধি সভায় অধ্যাপক আনু মুহাম্মদঃবিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকা থেকে সুন্দরবন বাদ দেয়ায় আগেই রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র বাতিল করতে হবে

আন্তর্জাতিক র‌্যাংকিংয়ে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়

দুই মাস মাছ ধরায় বন বিভাগের নিষেধাজ্ঞা সুন্দরবনে

চ্যানেল খুলনা মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন  
DMCA.com Protection Status
সম্পাদক: মো. হাসানুর রহমান তানজির
It’s An Sister Concern of Channel Khulna Media
© ২০১৮ - ২০২৪ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত | চ্যানেল খুলনা.বাংলা, channelkhulna.com.bd
যোগাযোগঃ কেডিএ এপ্রোচ রোড (টেক্সটাইল মিল মোড়), নিউ মার্কেট, খুলনা।
প্রধান কার্যালয়ঃ ৫২/১, রোড- ২১৭, খালিশপুর, খুলনা।
ফোন- 09696-408030, 01704-408030, ই-মেইল: channelkhulnatv@gmail.com
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য অধিদফতরে অনলাইন নিউজ পোর্টাল নিবন্ধনের জন্য আবেদিত।