শেখ মাহতাব হোসেন :: খুলনার ডুমুরিয়ায় পেপিনো মেলন চাষ করে ব্যাপক ভাবে সুনাম অর্জন করেছেন। বিদেশি ফল পেপিনো মেলন। এই ফল খেতে অনেকটা তরমুজের মতো। ফলটি দেখতে খানিকটা বেগুন কিংবা ডাবের মতো মনে হয়। এই বিদেশি ফল চাষে সফলতা অর্জন করছে ডুমুরিয়ার চাষী রফিকুল ইসলাম।
ভিটামিন-এ, ভিটামিন বি কমপ্লেক্স, এন্টিওক্সিডেন্টসহ অত্যধিক পুষ্টিগুণসম্পন্ন এই ফল হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ এবং ক্যান্সার প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ভূমিকা পালন করে।
অত্যধিক পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ বিদেশি ফল পেপিনো মেলন। ইউটিউব দেখে নতুন এই ফলের চাষ করে সফলতা পেয়েছেন খুলনা জেলার ডুমুরিয়া উপজেলার সাহস ইউনিয়নের রাজাপুর গ্রামের ৪৫ বৎসর বয়সি চাষী রফিকুল ইসলাম।
চাষী নীল ফামারী জৈনক ব্যাক্তী অষ্ট্রেলিয়া থেকে বীজ এনে চারা রোপন করে ভাল ফল হলে সে খান থেকে ডুমুরিয়ার রফিকুল ইসলাম বীজ এনে পরীক্ষামূলকভাবে ২শতক জমিতে পেপিনো মেলন চাষ করেন। রফিকুল ইসলাম শখের বসে কয়েক ২শতক জমিতে পেপিনো চাষ করেন। নীলফামারীতে থেকে চারা ক্রয় করে ইউটিউবে চাষ পদ্ধতি দেখে পরিচর্চা শুরু করেন। চারা রোপনের দুই মাসের মধ্যে তার প্রতিটা গাছে ফল এসেছে। তিনি বর্তমানে তার ক্ষেতে প্রায় ৪/৫ মণ পেপিনো মেলন রয়েছে। যার বাজার মূল্য প্রায় এক লাখ টাকা। প্রথম বারেই সফল হওয়ায় তিনি আরও বেশী করে বাণিজ্যিক চাষ করবেন এবং বাণিজ্যিক ভিত্তিতে চাষ করার জন্য সরকারিভাবে আর্থিক সহযোগিতা কামনা করেন।
পেপিনো মেলন চাষে কোনো রাসায়নিক সার প্রয়োগ করতে হয়নি তার। এই চাষে রাসায়নিক সারের চাহিদা খুবই কম। রফিকুল ইসলাম তার ক্ষেতে জৈব সার ব্যবহার করেছেন। এই চাষে খরচ খুবই কম। তিনি বলেন, খোঁজ নিয়ে জেনেছি প্রতি কেজি পেপিনোর মেলনের মূল্য ৪শ’ থকে ৫শ’ টাকা। কিন্ত এলাকায় প্রচারের জন্য আরো কম দামে বাজারে বিক্রি করবেন। ইতোমধ্যে অনেক ব্যবসায়িরা তার সাথে যোগাযোগ করেছেন। ক্ষেত পেপিনোর ফলন দেখে এই ফল চাষে আগ্রহী হচ্ছেন স্থানীয় অন্য কৃষকরাও। ফলে তিনি চারা বিক্রি করেও লাভবান হবেন বলে আশা প্রকাশ করেন।
প্রথমবারের মতো এখাকার মাটিতে পেপিনো মেলন নামের ফলটির চাষাবাদ শুরু হওয়ার প্রতিদিন তার ক্ষেতে ভীড় করছেন এলাকার এলাকার কৃষকসহ সাধারণ মানুষ। এই ফল দেখতে খানিকটা বেগুন কিংবা ডাবের মতো মনে হলেও এটি একটি বিদেশী ফল। গাছে ফুল ফোটার ৩০-৫০ দিনের মধ্যেই ফল পরিপক্ব হতে শুরু করে। এই ফলের ওজন সাধারণত ৩০০ থেকে ৫০০ গ্রাম পর্যন্ত হয়ে থাকে। এ ফলের বিচিও খাওয়া যায়। চাষ পদ্ধতি সহজ ও খরচ কম হওয়ায় এই ফলে লাভের পরিমাণও তুলনামূলক বেশি।
ডুমুরিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ মোছাদ্দেক হোসেন জানান, এই ফল খেতে অনেকটা তরমুজের মতো। তবে খাদ্যগুণ অত্যধিক। পেপিনো মেলন পুষ্টি ও ঔষুধি গুণাগুন সমৃদ্ধ একটি ফল। যা উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। এছাড়া এতে রয়েছে পটাশিয়াম, সোডিয়াম কম থাকে। পেপিনো মেলন প্রধানত হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ এমনকি স্ট্রোকের মতো পরিস্থিতি প্রতিরোধে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। এছাড়াও এই ফলে ভিটামিন সি, ভিটামিন বি কমপ্লেক্স রয়েছে।
পুষ্টিবিদদের মতে, ক্যান্সার প্রতিরোধী এন্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ ফলটি শরীরের জন্য খুবই কার্যকরী। তাই সুস্বাদু ও মুখরোচক পেপিনো মেলন চাষ আমাদের দেশে এক সম্ভবনাময়ী ফল বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।