শেখ মাহতাব হোসেন :: ডুমুরিয়া (খুলনা)বদলে গেছে সময়, পরিবর্তনের ছোঁয়া লগেছে সব কিছুতে। থেমে নেই খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলা চাষিরা। তারাও পরিবর্তন এনেছেন চাষ পদ্ধতিতে। উপজেলায় বানিজ্যিক ভাবে চাষ হচ্ছে মেটে আলুর। বাজারে চাহিদা বেশি থাকায় দামও ভাল, তাই প্রতি বছরই বৃদ্ধি পাচ্ছে মেটে আলুর চাষ। চলতি মৌসুমে আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় বাম্পার ফলনের আশা করছেন কৃষক। কখনও কৃষি অফিসের সহযোগীতা নিয়ে আবার কখনও নিজেদের উদ্যোগেই চাষে পরিবর্তন এনে কৃষকরা হচ্ছেন স্বাবলম্বী।
উপজেলার ১৪টি ইউনিয়ন ব্যতিত সকল ইউনিয়নের মাঠের জমি সব ধরনের সবজি চাষে অত্যান্ত উপযোগী। এমন এক সময় ছিল এ জনপদের চাষিরা ধান পাট আর বিচ্ছিন্ন ভাবে কিছু সবজি চাষ করে বছর পার করেছেন। কিন্তু বর্তমান সময়ে ধান পাটের পাশাপাশি ব্যাপক ভাবে নানা ধরনের সবজি চাষে কৃষক ঝুঁকে পড়েছেন। বাজারে প্রতিটি সবজির দাম বেশ ভাল থাকায় কৃষক লাভবান হচ্ছেন। এমনই একটি সবজি হচ্ছে মেটে আলু।
বপনের পর মাটির নিচে আপন মনেই বাড়তে থাকে এই আলু, তাই মেটে আলু বলেই এর পরিচিত সর্বত্র। এক সময় ঘরের কোনে বা পতিত জমিতে বিচ্ছন্ন ভাবে বপন করা হত মেটে আলু। সেখান থেকে যে আলু পাওয়া যেত নিজের সংসার ও আত্মীয় স্বজনের বাড়িতে দিয়ে বাকি টুকু বিক্রি করতেন কৃষক বা কৃষানী। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে মাঠের পর মাঠ মেটে আলুর বানিজ্যিক চাষ শুরু করেছেন চাষিরা।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরে ২০হেক্টর জমিতে স্থানীয় জাতের মেটে আলুর চাষ করেছেন।
খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার কালিকাপুর গ্রামের মাঠে যেয়ে দেখা যায়, মাচায় উঠিয়ে দেয়া মেটে আলু লতা যেন অসাপের মত আঁকা বাকা হয়ে এক মাচা থেকে অন্য মাচায় তার প্রভাব বিস্তার করছে। মাঠের পর মাঠ অন্য সব ফসলে সবুজের সমারোহ তার মাঝে মেটে আলুর পানের মত পাতা যেন অন্য এক সৌন্দর্য বহন করে যাচ্ছে।
অধিকাংশ জমিতে কৃষক আলু গাছ পরিচর্যায় বেশ ব্যস্ত। এ সময় কথা চাষিদের সাথে এরা হলেন আবু হানিফ মোড়ল খর্নিয়া, পংক কুন্ডু দেল ভীটা শরাফপুর, নিহার মল্লিক বরাতিয়া, রনজিত মন্ডল রুপরাম পুর, সাংবাদিক শেখ হেদায়েতুল্লাহ গুটুদিয়া, রেনুকা মল্লিক শোভনা, উৎপাল কুমার দাস কালিকাপুর হাসনা হেনা বেগম কালিকাপুর, উজ্জ্বল দাস কালিকাপুর সহ আরো অনেকে
মেটে আলুর চাষিরা জানান, বৈশাখ মাসে আলু বীজ বপন করা হয়। প্রায় ৬ মাস মাটির নিচে আপন মনেই বেড়ে উঠতে থাকে। একটি আলু গাছ হতে ৩ কেজি হতে ১০ কেজি পর্যন্ত আলু সংগ্রহ করা যায়। বাজার দর ভাল হলে ৪৫ হতে ৬০ টাকা কেজিতে বিক্রি করা যায়।
কৃষকরা বলেন, স্থানীয় গাড়ল লতা, লাল চমরি আলুসহ বেশ কিছু জাতের আলু চাষ হয়। এরমধ্যে লাল আলতাবাদ আলু খেতে বেশি সুস্বাধু তাই বাজার দর অন্য আলুর থেকে কিছুটা বেশি পাওয়া যায়।
মেটে আলু চাষে কোন ধরনের সার বা কীটনাশক প্রয়োগ করতে হয়না। বেগুন, উচ্চে বা পটলের চাষ শেষ হওয়ার আগেই ওই জমিতে মেটে আলু বপন করা হয়। জমিতে যে পরিমান সার প্রয়োগ করা থাকে তাতেই আলু চাষ সম্পন্ন হয়ে যায়। যার ফলে ব্যয় একে বারেই কম বলে কৃষকরা জানান।
ডুমুরিয়া উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মোঃ মোছাদ্দেক হোসেন বলেন, ‘এ জনপদের কৃষকরা কৃষিতে আমুল পরিবর্তন এনেছেন। নতুন নতুন ফসল উৎপাদন করে তারা লাভবান হচ্ছেন । উপজেলা কৃষি অফিস কৃষকদের সব বিষয়ে সার্বিক সহযোগীতা প্রদান করে যাচ্ছেন।