খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার শিম শীতকালীন সবজি হিসেবে গ্রামবাংলায় এমনকি শহরের মানুষের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি সবজি। শীত মৌসুম শুরুর দিকে উৎপাদন কম হওয়ায় বাজারে দাম বেশি থাকে। বেশি দামে শিম বিক্রির আশায় খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার চাষিরা গ্রীষ্মের শিম চাষে ঝুঁকে পড়েছেন। ইতোমধ্যে অধিকাংশ জমির প্রতিটি গাছ ফুলে ফুলে ভরে গেছে। কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে চলতি মৌসুমে শিম বিক্রি করে চাষিরা বেশ লাভবান হবেন বলে আশায় বুক বেঁধেছেন।
শীত মৌসুম শুরুর আগে ভাগেই কৃষক ক্ষেত প্রস্তুত করে বপন করেন শিমের বীজ। পুরো শীতে শিম বিক্রি করে বেশ লাভবান হন। শীতের শিম এখন চাষ হচ্ছে গরমে। নতুন চাষ পদ্ধতি অবলম্বন করে অনেকেই হয়েছেন স্বাবলম্বী। শিমে অন্যান্য সবজির মতো ভাইরাস নেই বললেই চলে। সব ধরনের মাটিতেই শিমের চাষ হয়। লিজ ঘেরের ভেড়িতে, বাড়ির চালে, মাচায়, রাস্তা বা পুকুরপাড় এমনকি জমির আইলে শিম চাষ করা যায়। বাজারে শিমের চাহিদা ভালো দামও বেশি পাই, তাই গ্রীষ্মের শিম চাষে ঝুঁকছেন এ জনপদের চাষিরা।
ডুমুরিয় উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মোঃ ওয়ালিদ হোসেন বলেন, বিগত কয়েক বছরে ঘেরের আইলে সবজি চাষে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এসেছে ডুমুরিয়ায় পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় অতীতের তুলনায় ভবিষ্যতে এ অঞ্চলে কৃষি বিপ্লব ঘটবে। তিনি আরো বলেন, সাদা সোনা খ্যাত চিংড়ির রাজধানী হিসেবে পরিচিত থাকলেও সবজি উৎপাদনে খুলনাজেলার ডুমুরিয়া উপজেলার আলাদা একটি সুনাম রয়েছে। এ জেলা থেকে উৎপাদিত সবজির প্রায় ৪০ শতাংশ আসে মাছের ঘেরের আইল থেকে। এই সবজি জেলার চাহিদা মিটিয়ে বিপুল পরিমাণে চলে যায় রাজধানীসহ পদ্মার ওপারের বিভিন্ন জেলায়।
ডুমুরিয়া উপজেলা কৃষি অফিসার ইনসাদ ইবনে আমান জানান, ডুমুরিয়ায় এবারের গ্রীষ্ম মৌসুমে ২২৫ হেক্টর জমিতে শিম চাষ হয়েছে। রূপবান ও ইসপা-২ জাতের শিম বেশি চাষ হচ্ছে।
সরেজমিনে উপজেলার খর্নিয়া, টিপনা, আটলিয়া চুকনগর ইউনিয়নের বেশ কিছু মাঠে যেয়ে দেখা যায়, চাষিরা গ্রীষ্মের শিম অত্যন্ত যতন্য সহকারে মাচায় চাষ করেছেন। অধিকাংশ জমির শিমে ইতোমধ্যে ফুলে ভরে উঠেছে। আর সপ্তাহ দুয়েক পরেই কৃষক তার পরিশ্রমের ফল ঘরে তুলতে পারবেন বলে আশা করছেন।
চুকনগর গ্রামের শিম চাষি মেহেদী হাসান বাবলু জানান, শিম মূলত শীতের সবজি, কিন্তু গ্রীষ্মেও এর চাষ হচ্ছে ফলনও আশানুরূপ। তাই আগাম শিম চাষ করেছি। চলতি মৌসুমে তিনি ১ বিঘা জমিতে লালপুর ও বিস্কুট জাতের শিমের চাষ করেছেন। এ পর্যন্ত প্রায় ১০ হাজার টাকা ব্যয় হয়েছে। কোনো দুর্যোগ দেখা না দিলে লাখ টাকার শিম বিক্রি করতে পারবেন বলে মনে করছেন।
তিনি আরো বলেন, গ্রীষ্মের শিম চাষে পোকামাকড়ের উপদ্রব কিছুটা বেশি থাকে, তবে নিয়মিত জমি পরিচর্যা করলে পোকায় শিম বেশি ক্ষতি করতে পারে না। নিয়মিত সার ও কীটনাশক প্রয়োগ করলে শীতের মতোই শিম গাছের গ্রোথ খুবই ভালো থাকে। একই মাঠে কৃষক শেখ মতলেব ১ বিঘা, শহিদুল ইসলাম দেড় বিঘা, গনি গাজী ১ বিঘা, সাইফুল ইসলাম ২ বিঘা, হাবিবুর রহমান ১ বিঘা, টিপু সুলতান ১ বিঘা জমিতে শিম চাষ করেছেন। জানা গেছে, উপজেলার ১৪টি ইউনিয়নের চাষিরা তুলনামূলক নিচু জমিতে গ্রীষ্মের শিম চাষ করেছেন। কৃষকরা যেসব জমিতে বছরের বেশির ভাগ সময় পানি জমে থাকে সেই জমিতে শিম চাষ করে লাভবান হয়েছেন। গত ৬/৭ বছর ধরে চাষিরা লিজ ঘেরের ভেড়ির জমিতে উঁচু বেড তৈরি করে সেই বেডে রোপণ করেন শিমের বীজ। একাধারে বৃষ্টিপাত হলেও এসব জমির শিম নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম থাকে বলে কৃষকরা জানান।
উপজেলার আদর্শ কৃষক শেখ মঞ্জুর রহমান বলেন, নতুন নতুন ফসল উৎপাদনে ডুমুরিয়ার কৃষকরা বেশ পারদর্শী। অনেক আগে থেকেই এ অঞ্চলে গ্রীষ্মের শিম চাষ হচ্ছে। কৃষক যাতে এসব ফসল উৎপাদনে কোনো সমস্যায় না পড়েন তার জন্য কৃষি অফিস সর্বদা কাজ করে যাচ্ছেন।