ডুমুরিয়ায় জলাবদ্ধতায় চরম দুর্ভোগ দ্রুত জলাবদ্ধতা নিরসনে বিল ডাকাতিয়া অঞ্চলের জরুরি ব্যবস্থা নিতে পারলে আমাদের শেষ রক্ষা হবে বলছেন ডুমুরিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুহাম্মদ আল-আমিন। তিনি বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে পলি অপসারণ কাজ শুরু হয়েছে। উচ্চক্ষমতার ৪টি পাম্প চালু হলে পরিস্থির উন্নতি ঘটবে। সেই সাথে সাথে এলাকার মানুষ স্বেচ্ছাশ্রমে সুইজ গেটের সামনে থেকে পলি অপসারণের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। টানা বৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে খুলনা জেলার ডুমুরিয়া উপজেলার শহরের বেশিরভাগ এলাকা। শহরের ও গ্রাম প্রধান প্রধান সড়ক তলিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি অনেক এলাকায় হাঁটু পানি জমেছে।
জলাবদ্ধতায় চরম দুর্ভোগে পড়েছেন গ্রাম বাসি, দ্রুত জলাবদ্ধতা নিরসনের দাবি জানিয়েছেন তারা। টানা বৃষ্টিতে ডুমুরিয়াসহ নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। পানিতে অনেকের ঘের ডুবে মাছ বেড়িয়ে গেছে। রবিবার রাত থেকে লাগাতার বৃষ্টিতে এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। ডুমুরিয়ার বড় বাজার, টিপনা দুনিয়ার খাল, বিল শিংগা , বিল তলিয়া, ডুমুরিয়া উপজেলার বিভিন্ন এলাকা পানিতে নিমজ্জিত হতে দেখা যায়। অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বাসাবাড়িতে পানি উঠে গেছে। সড়কে পানি জমে থাকায় ভোগান্তি বেড়েছে কয়েকগুণ।
এদিকে টানা বৃষ্টির ফলে পেটের টানে রাস্তায় বের হওয়া রিকশা, ভ্যান ও ইজিবাইক চালকরা চরম বিপাকে পড়েছেন। যাত্রী না থাকায় যেমন আয় নেই, তেমনি পানিতে নিমজ্জিত রাস্তায় দুর্ঘটনায়ও পড়েছেন অনেকে।
ইজিবাইক চালক আবুল হোসেন, মোস্তফা শেখ বলেন, পেট তো আর ঝড়-বৃষ্টি বোঝে না। ছয়জনের সংসার চলে আমার পায়ের ওপর। তাই সকালে বৃষ্টি মাথায় রিকশা নিয়ে বের হইছি। কিন্তু লোকজন নেই। ১টা পর্যন্ত ৭৫ টাকা হয়েছে। কি আর করা, একেতো বৃষ্টি তার ওপর রাস্তাগুলো পানিতে ডুবে গেছে, মানুষ বের হয়ে কোথায় যাবে?
পথচারী হেমায়েত হোসেন বলেন, রাস্তাঘাট সব জায়গায় পানি। ড্রেনেজ ব্যবস্থা সঠিক না থাকার কারণে এমন জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। হাঁটু সমান পানির মধ্যেই যাতায়াত করতে হচ্ছে। আর কবে স্বাভাবিক হবে এই উপজেলায় বলে আক্ষেপ করেন এই পথচারী।
দেলোয়ার হোসেন বলেন, সামান্য বৃষ্টি হলেই ঘরের মেঝেতে পানি উঠে যায়। ১দিন ধরে রান্নাবান্না বন্ধ, শুকনা খাবার খাচ্ছি। আমাদের এখানকার ছয়টি পরিবারের একই অবস্থা। পানি নিষ্কাশন না হওয়া পর্যন্ত আমরা দুর্ভোগ থেকে মুক্তি পাবো না। বর্তমানে ডুমুরিয়া উপজেলার ১৪টি ইউনিয়নের প্রায় ৩০ টি গ্রামসহ গত ১ দিন ধরে বৃষ্টির পানিতে প্লাবিত হয়েছে। বৃষ্টির পানিতে যুব সংঘ মাঠে পানি থৈ থৈ করছে।
ডুমুরিয়া শহরের মুদি ব্যবসায়ী মোঃ সেলিম শেখ এবং কাপড় ব্যবসায়ী মোঃ রবিউল বলেন, দুপুর ১২টা বাজলেই পানির চাপ বেড়ে যায়। প্রায় ২ থেকে ৩ ঘণ্টা বসে থাকতে হয়। গ্রাম থেকে আসা ক্রেতারা চলে যায় তড়িঘড়ি করে। ফলে আমরা ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি।
শরাফপুর এলাকার বাসিন্দা মোঃ জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, বৃষ্টি এলে জোয়ারের পানিতে তলিয়ে যায় পুরো এলাকা। জোয়ার-ভাটার খেলা চলে এ এলাকায়। এতে নারী- শিশু-বৃদ্ধসহ পথচারীরা চরম দুর্ভোগে পড়েন। বলেন, এমনিতেই আমাদের এলাকার রাস্তাঘাট কাঁচা এবং প্রায়ই পানিতে ডুবে থাকে এমন সময় জোয়ারের পানি উঠলে স্কুলে আসার প্রবেশপথে পানি জমা হয়ে হাঁটু-কোমর পর্যন্ত পানি হয়ে যায়। এতে কোমলমতি শিশুরা স্কুলে আসতে পারে না। আর যারা আসে তারাও সঠিক সময় আসতে পারে না। জোয়ারের পানিতে ভিজে যায় বই-খাতা। প্রতিনিয়তই ঘটে দুর্ঘটনা, কোমলমতি শিশুদের অভিভাবকরা দুশ্চিন্তায় থাকে চারদিকে থৈ থৈ পানি ও রাস্তা খারাপ থাকায়।
উল্লেখ্য চলতি বর্ষা মৌসুমের শেষে অতিবর্ষণে সারাদেশের ন্যায় ডুমুরিয়া উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় সৃষ্ট জলাবদ্ধতা নিরষনের লক্ষ্যে গত শুক্রবার সকালে শৈলেমারি রেগুলেটর পরিদর্শণ করে কয়েকটি পদক্ষোপ নেয়া হয়েছে। অতিরিক্ত ভারি বর্ষণে ডুমুরিয়া উপজেলার বিল ডাকাতিয়া, শাহাপুর, রামকৃষ্ণ পুর, মাধবকাঠি, খলশী, মির্জাপুর, কাটাখালি বিলসহ বিভিন্ন বিলের জলনিষ্কাশন সুব্যবস্থা না থাকায় এবং খাল-জলাশয়গুলো কতিপয় প্রভাব শালী ব্যক্তি বাঁধ- নেট-পাটা দিয়ে ঘিরে রাখায় সৃষ্ট জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তির পথ খুঁজতে গত শুক্রবার সকালে ডুমুরিয়া উপজেলা বিএনপির আহবায়ক মোল্লা মোশাররফ হোসেন মফিজের উদ্যাগে ডুমুরিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুহাম্মদ আল আমিন,ও পানি উনয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা শোলমারী সুইস গেট পরিদর্শনে যান।
এখানে উল্লেখ্য সমগ্র বিল ডাকাতিয়া-সহ ডুমুরিয়ার আশ-পাশের সকল বিলের পানি নিষ্কাশনের একমাত্র পথই হলো শোলমারী সুইজ গেট। গত বছর অক্টবের মাসে বিল ডাকাতিয়া অঞ্চল তলিয়ে যাওয়ায় জনপ্রতিনিধি, উপজেলা প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে স্বেছাশ্রমে পলি অপসারণ-সহ নানামুখি কার্যক্রম সুইজ গেটের সামনে পলি ভরাটের অপসারণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।