অনলাইন ডেস্কঃবাজারের মধ্য দিয়ে বয়ে গেছে সরু খাল। ওই খালের দুই পাড়ের সড়ককে সংযুক্ত করে বাজার প্রসারিত করেছে বড় স্লুইসগেট। ওই স্লুইসগেটটি ঘিরে ও খালের বাজার সংলগ্ন পাশে গড়ে উঠেছে অন্তত অর্ধশত পাকা- সেমি-পাকা বিভিন্ন প্রকারের অবৈধ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বসতবাড়ি। এ সব অবৈধ দখলদারদের দাপটে পাল্টে গেছে খালের প্রকৃত অবস্থান ও গতিপথ। এছাড়া স্লুইসগেটের দুই মুখে রয়েছে ময়লা-আবর্জনা ও উঁচু মাটির স্তূপ। ব্লু-গোল্ড প্রোগ্রামের আওতায় ৮২ লাখ ৭৭ হাজার টাকা ব্যয়ে খুলনা জেলার ডুমুরিয়ার থুকড়া বাজার সংলগ্ন খাল সদ্য খনন শেষে চিত্র এটি।
তবে স্থানীয়দের অভেযোগ, অবৈধ দখলদাররা গুরুত্বপূর্ণ এ খালটি গিলে খেয়েছে। কিন্তু ওই সব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ ছাড়াই খনন কাজ শেষ করা হয়েছে। দুই পাশের মাটি স্কেভেটর দিয়ে কেটে উপরে রাখা হলেও মাঝখানের মাটি ভাসমান মেশিন দিয়ে ঘোলানো হয়েছে। সঙ্গতকারণে খালের তলদেশে উঁচু উঁচু মাটি রয়ে গেছে। ফলে প্রকল্পের আসল যে লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ভেস্তে যাওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে।
জানা গেছে, রুপরামপুর, গজন্দ্রপুর, শাহাপুর, শলুয়া ও আন্দুলিয়া এলাকার পানি নিষ্কাষনের একমাত্র পথ ডুমুরিয়ার থুকড়া বাজার সংলগ্ন খাল। বৃষ্টি মৌসুমে ওইসব অঞ্চলের পানি এ খাল দিয়ে উত্তরে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বিল বিল ডাকাতিয়া ও দক্ষিণে হামকুড়া ও ভদ্রা নদীতে গিয়ে মেশে। কিন্তু দীর্ঘদিন খননের অভাবে সম্প্রতি ওই খালটি ভরাট হয়ে যায়। ফলে বৃষ্টিপাতে ব্যাপক অঞ্চল জুড়ে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়ে বসত ঘর-বাড়ি ও ফসলী জমি পানিতে তলিয়ে যায়। চরম ভোগান্তিতে পড়ে সাধারণ মানুষ। এ পরিস্থিতিতে খালটি পুনঃখননের উদ্যোগ নেয় পানি উন্নয়ন বোর্ড। উদ্যোগটি বাস্তবায়নে ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে ব্লু-গোল্ডের প্রোগ্রামের আওতায় চলতি বছরের ১৩ ফেব্র“য়ারি খালের থুকড়া বাজার সংলগ্ন ২ দশমিক ৬০০ কিলোমিটার খননের কাজ আরম্ভ হয়। খননের প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয় ৯১ লাখ ৯৬ হাজার ৭৬৯ টাকা। চুক্তি মূল্য এসে দাঁড়ায় আওতায় ৮২ লাখ ৭৭ হাজার টাকা। কাজটি বাস্তবায়ন করে ঠিকাদারী ঢাকাস্থ প্রতিষ্ঠান নুনা ট্রেডার্স। গত ২৫ জুন খনন কাজ সমাপ্ত হয়।
আবুল কালাম ও রেজাউল করিমসহ স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন, কিছুদিন আগে খালের খনন কাজ শেষ করা হয়। কিন্তু ডিজাইন ও স্টিমেট অনুসরণ করে সঠিকভাবে এ খাল খনন করা হয়নি। অনেকস্থানে চওড়া ও গভীরতা কম রয়েছে। বিশেষ করে দুই পাশের মাটি স্কেভেটর দিয়ে কেটে উপরে রাখা হলেও মাঝখানের মাটি ভাসমান মেশিন দিয়ে ঘোলানো হয়েছে। ফলে খালের তলদেশে উঁচু উঁচু মাটি রয়ে গেছে। এছাড়া অবৈধ দখলদাররা খালটি গিলে খেয়েছে। কিন্তু ওই সব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ ছাড়াই খনন কাজ শেষ করা হয়েছে। ফলে প্রকল্পের আসল যে লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ভেস্তে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মোঃ সাইদুর রহমান বলেন, ওইসব অভিযোগ অসত্য। কাজে কোন অনিয়ম হয়নি। সব জায়গায় ঠিকঠাক মতো খনন করা হয়েছে। আর অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের দায়িত্ব জেলা প্রশাসনের। তাদের কাছে সম্প্রতি অবৈধ দখলদারদের তালিকা প্রদান করা করা হয়েছে। এখন তারা এগুলো উচ্ছেদ করবে।
ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান নুনা ট্রেডার্স-এর লাইসেন্স নিয়ে কাজ করছেন শিমুল বিশ্বাস। তিনি বলেন, কাজ চুক্তির সময় অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের কথা উল্লেখ ছিল না। আর কোথায় কতটুকু খনন করা হয়েছে সে ব্যাপারে আপনাকে বলতে রাজি না। সে বিষয়ে ডিপার্টমেন্টকে কাজ বুঝিয়ে দিয়েছি।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হেলাল হোসেন বলেন, বিষয়টি তার নলেজে নেই। তবে এলাকাবাসী ডুমুরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বা তাকে অবহিত করলে মামলা রুজু করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।