সম্প্রতি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস ও সাবেক মেয়র সাঈদ খোকনের মধ্যেকার দ্বন্দ্বকে অরাজনৈতিক হিসেবে দেখছে আওয়ামী লীগ। পাশাপাশি এ পরিস্থিতি আস্তে আস্তে স্বাভাবিক হয়ে যাবে বলে মনে করছেন আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ফুলবাড়িয়া মার্কেট ও দোকান বরাদ্দ নিয়ে অনিয়মের অভিযোগ সম্প্রতি ফজলে নূর তাপস ও সাঈদ খোকনের মধ্যে প্রকাশ্য দ্বন্দ্ব ও বাকবিতণ্ডার ঘটনা ঘটেছে। বিষয়টি আদালতে মামলা পর্যন্ত গড়িয়েছে। এ দোকানগুলো সাঈদ খোকন যখন ডিএসসিসির মেয়র ছিলেন তখন বরাদ্দ দিয়েছেন। এ বরাদ্দ নিয়ে অনিয়মের অভিযোগ ওঠায় বর্তমান ও সাবেক মেয়র বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন। এ মার্কেটে উচ্ছেদ অভিযানও চালানো হয়।
তাপস এবং খোকন দুইজনই আওয়ামী লীগের নেতা। ফজলে নূর তাপস আওয়ামী লীগের মনোনয়নে মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন এবং এর আগে তিনি ঢাকা-১০ আসনে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য ছিলেন। সাঈদ খোকনও আওয়ামী লীগের মনোনয়নে মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন এবং বর্তমানে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য।
দলের এ দুই গুরুত্বপূর্ণ নেতার মধ্যে প্রকাশ্য দ্বন্দ্ব ও বাকবিতণ্ডা আওয়ামী লীগের জন্য বিব্রতকর বলে মনে করেন দলের নেতাকর্মীরা। বিষয়টি নিয়ে দলের নেতাদের মধ্যে উদ্বেগ থাকলেও এটিকে রাজনৈতিকভাবে দেখতে চাচ্ছেন না নেতারা। পাশাপাশি পরিস্থিতি আস্তে আস্তে স্বাভাবিক হয়ে যাবে বলেও মনে করছেন তারা।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা জানান, বিষয়টি বিব্রতকর ও উদ্বেগের। তবে গভীর উদ্বেগের বিষয় নয়। এটাকে রাজনৈতিকভাবে দেখার কিছু নেই। এটা উন্নয়নগত বিষয় নিয়ে হয়েছে। পরিস্থিতি এক সময় স্বাভাবিক হয়ে যাবে। কারণ খোকনের বিরুদ্ধে যে মামলা হয়েছে সেটা প্রত্যাহার করে নেওয়া উচিত বলে তাপস মন্তব্য করেছেন।
মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপসের বিরুদ্ধে মানহানিকর বক্তব্য দেওয়ার অভিযোগে গত ১১ জানুয়ারি সাবেক মেয়র সাঈদ খোকন নামে দু’টি মামলার আবেদন করা হয়েছে। আবেদন দু’টির করেছেন কাজী আনিসুর রহমান ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সারওয়ার আলম।
এর আগে গত ৯ জানুয়ারি হাইকোর্ট এলাকার কদম ফোয়ারার সামনে ফুলবাড়িয়া মার্কেট উচ্ছেদ হওয়া ব্যবসায়ীদের মানববন্ধনে অংশ নিয়ে সাঈদ খোকন বলেছিলেন, তাপস ডিএসসিসি মেয়র হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই দুর্নীতির বিরুদ্ধে গলাবাজি করে চলেছেন। আমি তাকে বলবো, রাঘববোয়ালের মুখে চুনোপুঁটির গল্প মানায় না। কেননা দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসন গড়তে হলে সর্বপ্রথম তার নিজেকে দুর্নীতিমুক্ত করতে হবে। অথচ তিনি উল্টো কাজ করছেন।
এর পর গত ১০ জানুয়ারি তাপস বলেন, কেউ যদি ব্যক্তিগত আক্রোশের বশবর্তী হয়ে কিছু বলে থাকেন, সেটার জবাব আমি দায়িত্বশীল পদে থেকে দেওয়াটা সমীচীন মনে করি না। উনার ব্যক্তিগত অভিমত এটার কোনো গুরুত্ব বহন করে না। তার অভিযোগ নিচ্ছকই ভ্রান্ত এর বাস্তব কোনো ভিত্তি নেই। যদি কেউ উৎকোচ, ঘুষ গ্রহণ করে কমিশন বাণিজ্য করে সরকারি কাজ পাইয়ের দেওয়ার জন্য কমিশন বাণিজ্য করে বা সরকারি প্রভাব কাজে লাগিয়ে অর্থ আত্মসাত করে তাহলে দুনীতি হয়। যে অভিযোগ আনা হয়েছে কোনোভাবেই তা বস্তুনিষ্ঠ না।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) ফারুক খান বাংলানিউজকে বলেন, বর্তমান মেয়র ও সাবেক মেয়রের যে সমস্যা সেটা রাজনৈতিক নয়। এটা উন্নয়নগত বিষয়, এটাকে রাজনীতিতে না জড়ানোই ভালো। তবে যেহেতু দুইজনই আওয়ামী লীগ করেন, তাই তাদের উচিত হবে আওয়ামী লীগের অনেক সিনিয়র নেতা আছেন তাদের সঙ্গে আলোচনা করে বিষয়টি সমাধান করে ফেলা। আর সেটা না হলে আইনিভাবে সমাধান হতে পারে।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দীন নাছিম বলেন, পরিস্থিতি মনে হচ্ছে আস্তে আস্তে স্বাভাবিক হয়ে যাবে। যেহেতু তারা দুইজনই আওয়ামী লীগের। তাই বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ আছে। কিন্তু বিষয়টিতে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই।