সাতক্ষীরায় জেলা প্রশাসনের বেঁধে দেওয়া সময়ের আগেই তালা উপজেলাসহ পার্শ্ববর্তী এলাকার গাছ থেকে পাড়া হচ্ছে অপরিপক্ব কাঁচা আম। অপরিপক্ব এ আমে কেমিক্যাল স্প্রে করে টকটকে রং তৈরি করা হচ্ছে। কৃত্রিমভাবে আম পাকানোর জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে বিষাক্ত কার্বাইড। আর অসাধু ব্যবসায়ীরা বাড়তি লাভের জন্য পাটকেলঘাটা থেকে প্রতিদিন ট্রাক ট্রাক এই অপরিপক্ব বিষাক্ত কেমিক্যাল মিশ্রিত আম ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে তালার এক আম ব্যবসায়ী বলেন, ‘অত্র এলাকার অপরিপক্ব আম ঢাকার বাজারগুলোতে বৈশাখী আমের নামে চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া সাতক্ষীরার আমের সুখ্যাতি থাকায় ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন বাজারে আগেভাগে পাঠানো হচ্ছে।’
তাপস সরকার,শফিকুল ইসলাম,গনেশ,ফয়সালসহ স্থানীয় বাসিন্দারা জানান সব আম ব্যবসায়ীরা এখন গাছ থেকে আম ভাঙছেন। গাছতলায় আমে বিষ স্প্রে করে বাজারজাত করা হচ্ছে। বিষ স্প্রে করলেই পরদিন পেকে যায় আম। আমে বিষ দিয়ে পাকালে সেটি ক্ষতিকর সবাই জানে তবে একাজে কেউ বাঁধা দেয় না। প্রশাসনের কর্মকর্তারা বা কৃষি বিভাগের কর্মকর্তাদেরও কোন পদক্ষেপ নিতে দেখি না।
তালা উপজেলা কৃষি অফিসার হাজিরা খাতুন জানান,চলতি মৌসুমে ৭১৫ হেক্টর জমিতে আমের চাষ হয়েছে। এখানে প্রায় দুইহাজার ছোট-বড় বাগান রয়েছে। এ সব বাগান থেকে প্রায় ১১৩৬০ টন আম উৎপাদন হয়। উৎকৃষ্ট আমের মধ্যে রয়েছে হিমসাগর, ল্যাংড়া ও আর্মপালি। এছাড়া রয়েছে গোবিন্দভোগ, গোপালভোগ, লতাসহ দেশীয় বিভিন্ন প্রজাতির আম।
তবে কেউ যদি অপরিপক্ব আমে কেমিক্যাল মিশিয়ে বাজারজাতকরণের চেষ্টা করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এছাড়া উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা এ ব্যাপারে সতর্ক ও মাঠে রয়েছেন।’ নির্ধারিত দিনক্ষণের আগে গাছ থেকে অপরিপক্ব আম পাড়া ও বাজারজাত করা যাবে না বলে জানান তিনি।
সাতক্ষীরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো: নুরুল ইসলাম জানান, কোনভাবেই আমে রাসায়নিক দ্রব্য কেমিক্যাল বা বিষ প্রয়োগ করা যাবে না। জেলার সকল আম ব্যবসায়ীদের এ ব্যাপারে সতর্ক করা হয়েছে। গত ২৭ এপ্রিল জেলা নিরাপদ আম বাজারজাতকরণ ব্যবস্থাপনা কমিটির মিটিং করা হয়েছে। সেখানে দিনক্ষণ নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। কোন আম কোন তারিখ থেকে ব্যবসায়ীরা ভাঙতে পারবেন। কেউ আমে ক্যামিকেল বা রাসায়নিক দ্রব্য প্রয়োগের খবর পেলেই আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক এসএম মোস্তফা কামাল বলেছেন, ‘সাতক্ষীরায় নিরাপদ আম বাজারজাতকরণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সাতক্ষীরার আমের সুনাম রয়েছে। এই সুনাম ও ঐতিহ্য ধরে রাখতে হবে। নির্ধারিত দিনের আগে গাছ থেকে আম পাড়া যাবে না মর্মে আম ব্যবসায়ী ও চাষিদের সতর্ক করা হয়েছে। এছাড়া অপরিপক্ব আম কেমিক্যাল মিশিয়ে বাজারজাতকরণের চেষ্টা করলেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’