টার্মিনাল না থাকায় বেনাপোল বন্দরে আসা পণ্যবাহী ট্রাকগুলোকে সড়কের ওপর রাখেন চালকরা। এতে প্রায় ১০/১২ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে তৈরি হয়েছে দীর্ঘমেয়াদী যানজট। ফলে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে পণ্য পরিবহন, অনেকটাই অচল হয়ে গেছে বন্দর। ভোগান্তিতে পড়েছে নগরবাসী। এই অবস্থার উত্তরণে দ্রুততম সময়ের মধ্যে ট্রাক টার্মিনাল নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
আমদানি-রপ্তানিকারক সমিতির যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আব্দুল লতিফ বলেন, ‘স্বাভাবিক সময়ে প্রতিদিন বেনাপোল বন্দর দিয়ে ১৫০ থেকে ২০০ ট্রাক তৈরি পোশাকসহ অন্যান্য পণ্য রপ্তানি হয়। গত দুই বছর ধরে বাংলাদেশি পণ্য ভারতে দ্রুত রপ্তানি করা সম্ভব হলেও বর্তমানে যানজটের কারণে তা কঠিন রূপ নিয়েছে। এছাড়া, ভারতীয় কাস্টমস কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশি পণ্য গ্রহণে ধীরগতি নীতি অনুসরণ করায় রপ্তানি বাণিজ্যে সৃষ্টি হচ্ছে প্রতিবন্ধকতা।’
প্রায় দু’সপ্তাহ ধরে বেনাপোল বন্দরে রপ্তানির অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে আছে প্রায় ৩/৪ হাজার পণ্যবাহী ট্রাক। ফলে গত এক সপ্তাহ ধরে ফার্মাসিউটিক্যালস পণ্যসহ বিভিন্ন ধরনের জরুরি শিল্পের মালামাল আমদানি মারাত্মক ভাবে ব্যহত হচ্ছে। রপ্তানির চাপে প্রতিদিন প্রায় ২০০ ট্রাক পণ্য আমদানি কমে গেছে।
ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের পরিচালক মতিয়ার রহমান বলেন, ‘বেনাপোল বন্দর দিয়ে আগে প্রতিদিন গড়ে ৪০০ ট্রাক বিভিন্ন ধরনের মালামাল আমদানি হতো। বর্তমানে এই আমদানির সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে অর্ধেকে। বন্দরের এ অবস্থা চলতে চলতে থাকলে খুব তাড়াতাড়ি দেশে বিভিন্ন শিল্পের কাঁচামালের সংকট তৈরি হবে। বন্ধ হতে পারে শিল্প কলকারখানা।’
তিনি আরও বলেন, ‘ভোমরা, হিলি ও সোনা মসজিদ স্থলবন্দর দিয়ে সয়াবিন পণ্য রপ্তানির অনুমতি দেওয়ার জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের জরুরি হস্থক্ষেপ করা প্রয়োজন। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এখনই যদি দ্রুত ও বাস্তবসম্মত পদপে গ্রহণ না করে তাহলে যেকোনো সময় বন্ধ হতে পারে দু’দেশের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য।’
বেনাপোল বন্দরের সহকারী পরিচালক আব্দুল জলিল বলেন, বেনাপোল বন্দরের যানজট নিরসনে প্রশাসনকে একাধিকবার জানানো হয়েছে। বাংলাদেশি পণ্য দ্রুত রপ্তানির জন্য ইতোমধ্যে ভারতীয় বন্দর কর্তৃপক্ষের সঙ্গেও বৈঠক হয়েছে। এছাড়া প্রতিদিন যাতে ৪০০ ট্রাক পণ্য ভারতে রফতানি করা যায় সে বিষয়ে আমরা রাত-দিন কাজ করে যাচ্ছি।
বেনাপোল কাস্টমস হাউসের কমিশনার মোঃ আজিজুর রহমান বলেন, বেনাপোল বন্দর এলাকায় স্মরণকালের ভয়াবহ যানজট সৃষ্টি হয়েছে। ফলে আমদানি-রফতানি বাণিজ্য মারাত্মক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ব্যহত হচ্ছে রাজস্ব আদায় প্রক্রিয়াও। তিনি আরও বলেন, হঠাৎ করে রপ্তানি বেড়ে যাওয়ায় ট্রাকের চাপে আমদানি বাণিজ্যও কমে গেছে। এতে রাজস্ব আদায়ে বড় ধরনের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হচ্ছে। বেনাপোল বন্দর বাদে অন্যান্য বন্দর দিয়ে সয়াবিন পণ্য রপ্তানির অনুমতি দিলে বেনাপোল বন্দরে চাপ কমে যাবে। বাড়বে আমদানি বাণিজ্য।