চ্যানেল খুলনা ডেস্কঃঘুষের টাকা লেনদেনের পর আইনের কাছে ধরা পরেছে এমন সংখ্যা খুব কম। সরকারি বেসরকারি বিভিন্ন কাজের সুযোগ সুবিধা প্রদান করার জন্য ক্যাশ টাকা লেনদেনের বিষয়টি নতুন নয়। এতদিন এ কাজ অবলীলায় করে আসতেন উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তারা তবে বর্তমানে দুদকের তৎপরতায় কিছুটা অস্বস্তিতে আছেন তারা। দুদক এই অসাধু কর্মকর্তাদের ধরতে তৈরি করেছেন ফাঁদ-মামলা। টার্গেট করে লোভী কর্মকর্তাদের দেওয়া হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের প্রলোভন। এই ফাঁদে পা দিলেই পড়ছেন দুদকের জালে।
দফায় দফায় সরকারি কর্মকর্তাদের বেতন বাড়িয়েও থামানো যাচ্ছিল না ঘুষ লেনদেন। অবৈধভাবে টাকা লেনদেন করে অনেক অযোগ্য লোক বসে পড়ছিলেন উঁচু পর্যায়ের চেয়ারে। এতে যেমন মেধাবীরা হতাশায় ভুগছিলেন তেমনি সরকারি কাজের মান দিন দিন কমে আসছে। এর প্রভাব গিয়ে পড়ছে জাতীয় উন্নয়ন ও অর্থনীতিতে। উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে দুর্নীতি বন্ধে দুদক বদ্ধ পরিকর।
দুদক সূত্রে জানা যায়, দুর্নীতি হওয়ার পর দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কঠোর হওয়ার পাশাপাশি এই কাজ বন্ধে নিজেরাই মাঠে নেমেছে। তাদের একটি বিশেষ টিমে কয়েকজন পরিচালক ও উপ-পরিচালক এই বিষয়টি তত্ত্বাবধায়ন করছে। তারা গোয়েন্দা তথ্য থেকে দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের টার্গেট করে বিভিন্ন কাজের জন্য বিভিন্ন অংকের টাকার লোভ দেখাচ্ছে। লোভে পা বাড়ালেই পড়ছেন দুদকের জালে। তাদেরকে ধরার জন্য আগেই ওঁত পেতে বসে থাকেন দুদকের কর্মকর্তারা। ঘুষের টাকা হাতে যাওয়ার সাথে সাথেই ধরে ফেলছেন দুদক টিম। এর পরেই তাদেরকে আনা হচ্ছে আইনের আওতায়। দুদক কর্মকর্তারা বলছেন, এই কাজে ফলে দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মকর্তারা আতংকে আছেন। এর পরে কোনো ধরনের অবৈধ টাকা লেনদেন করতে বেশ কয়েকবার চিন্তা করতে হবে।
দুদকের চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ বলেছেন, জনগণের মধ্যে দুর্নীতিবিরোধী গণসচেতনতা তৈরিতেও কাজ করা হচ্ছে। এসব কাজ যখন সমন্বিত ও সুসংগঠিতভাবে পরিচালিত হবে, তখন দুর্নীতির মাত্রাও কমে আসবে। তিনি আরো বলেন, দুর্নীতিবিরোধী কর্মসূচিতে সাধারণ মানুষের সম্পৃক্ততা বাড়াতে কমিশনের প্রতিটি বিভাগীয় ও জেলা কার্যালয়, সব দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটি এবং তরুণ প্রজন্মের কণ্ঠস্বর সততা সংঘের সদস্যদের অনুরোধ জানানো হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, সাধারণ মানুষের দুর্নীতিবিরোধী সমন্বিত কণ্ঠস্বর দুর্নীতিকে স্তব্ধ করে দিতে পারে। তাই কমিশন অন্তর্ভুক্তিমূলক কর্মসূচির মাধ্যমে সমাজের সব মানুষকে দুর্নীতিবিরোধী প্ল্যাটফর্মে আনার চেষ্টা করছে। এ জন্য কর্মকর্তাদের নিজ নিজ দায়িত্ব সঠিকভাবে পালনের নির্দেশ দেন তিনি।
দুদকের দপ্তরে বর্তমানে দুই হাজার ব্যক্তির নামে দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। যাদের প্রায় সকলেই সরকারি কর্মকর্তা। এত কম সংখ্যক কর্মকর্তা দিয়ে সব অভিযোগ তদন্ত করা সম্ভব না হলেও পর্যায়ক্রমে সব অভিযোগই আমলে নেওয়া হচ্ছে। তদন্তে দুর্নীতির প্রমাণ মিলেই তাদের নামে চার্জশিট দিচ্ছে দুদক। এর মধ্যেই শতাধিক ব্যক্তি চার্জশিট ও কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করায় দুদক আবারো আলোচনায় চলে আসে। বাঘা বাঘা সব কর্মকর্তারা এখন প্রবেশ করছেন দুদকের জিজ্ঞাসাবাদ কক্ষে।
দুদকের উপ পরিচালক প্রণব কুমার ভট্টাচার্য বলেন, দুদকের ফাঁদ-মামলা অনেক আগে থেকেই হয়ে আসছে তবে এখন বেশি তৎপর। এই পদ্ধতিটিকে আমরা গুরুত্ব দিয়ে অভিযান পরিচালনা করছি। আমরা এর মধ্যেই এই পদ্ধতিটিকে শক্তিশালী করতে জনবল বাড়াচ্ছি। আশা করছি এর ফলে দুর্নীতি হওয়ার আগেই তাদেরকে আইনের আওতায় আনতে পারব।