অনলাইন ডেস্কঃব্যাংকের একাধিক হিসাবে অস্বাভাবিক অর্থ জমা,অবৈধ সম্পদ অর্জনসহ নানা অভিযোগে ন্যাশনাল ক্রেডিট অ্যান্ড কমার্স (এনসিসি) ব্যাংকের এমডি মোসলেহ উদ্দীন আহমেদের ব্যাংকে রাখা আট কোটি টাকা জব্দ করা হয়েছে। ঢাকা মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ কে এম ইমরুল কায়েশ গত বৃহস্পতিবার এই আদেশ দেন।আর সেদিনই দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) টাকা উত্তোলন, স্থানান্তর বন্ধে সংশ্নিষ্ট ব্যাংকগুলোকে আদেশের খবর জানিয়ে দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়। একই সঙ্গে রবিবার সংশ্নিষ্ট ব্যাংকগুলোতে আদালতের আদেশের কপি পাঠিয়ে দেওয়া হয়।এনসিসি ব্যাংকের এমডি মোসলেহ উদ্দীনের বিরুদ্ধে লেনদেনের অভিযোগ অনুসন্ধান করা হচ্ছে। প্রাথমিক অনুসন্ধানে তার নামে-বেনাম স্থাবর-অস্থাবর বিপুল পরিমাণ সম্পদের তথ্য পাওয়া গেছে।দুদকের একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা নাম না প্রকাশ শর্তে বলেন, শীর্ষ পদে থেকে একাধিক ব্যাংকে বিপুল পরিমাণ টাকার মালিক হওয়া অস্বাভাবিক। সে টাকার উৎস কী, তা অনুসন্ধান করা হচ্ছে। দুর্নীতির প্রমাণ পাওয়া গেলে তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।জানা গেছে, মোসলেহ উদ্দীন ও তার স্ত্রী লুনা শারমিনের নামে এনসিসিসহ পাঁচটি ব্যাংক ও দুটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ১৩টি অ্যাকাউন্টে বর্তমানে মোট ৮ কোটি ৫৫ লাখ ৯৪ হাজার ৩২৫ টাকা জমা রয়েছে। দুদক মোসলেহ উদ্দীনের বিরুদ্ধে ওইসব হিসাবে অস্বাভাবিক বা সন্দেহজনক লেনদেন, মানি লন্ডারিং ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের একটি অভিযোগ অনুসন্ধান করছে। তদন্তের এক পর্যায়ে দুদক উত্তোলন, স্থানান্তর, হস্তান্তর করে ওই টাকা বেহাত করার চেষ্টা করা হচ্ছিল বলে তথ্য পেয়েছে।ঢাকা মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতে দুদকের অনুসন্ধান কর্মকর্তা মামুনুর রশীদ চৌধুরী এই টাকা যাতে বেহাত না হয়, তা নিশ্চিত করতে ওই ১৩টি অ্যাকাউন্ট জব্দের আবেদন জানান। ওই আবেদনের শুনানি শেষে বৃহস্পতিবার পুরো টাকা জব্দের আদেশ দেওয়া হয়।সূত্রে জানা গেছে, এনসিসি ব্যাংকের এই এমডি এর আগে কয়েকটি ব্যাংকের শীর্ষ পদে থেকে ক্ষমতার অপব্যবহার, দুর্নীতি, কর ফাঁকির মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অর্থের মালিক হয়েছেন, যা তার বৈধ আয়ের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ। তিনি দুদক ও মানি লন্ডারিং আইন লঙ্ঘনের অভিযোগেও অভিযুক্ত।জানা গেছে, মোসলেহ উদ্দীনের নামে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) তদন্তে বিভিন্ন ব্যাংকের হিসাবে ৩৫ কোটি টাকার প্রমাণ পাওয়া যায়, যা অস্বাভাবিক। গত মে মাসে বিএফআইইউ থেকে ওই ৩৫ কোটি টাকার হিসাব খতিয়ে দেখার অনুরোধ জানিয়ে দুদকে একটি তদন্ত প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছিল।পরে কমিশন তদন্ত প্রতিবেদনটি অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয়। দুদকের অনুসন্ধানে পাঁচ ব্যাংক ও দুটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ১৩টি হিসাবে নগদ জমা থাকা ৮ কোটি ৫৫ লাখ ৯৪ হাজার ৩২৫ টাকার তথ্য পাওয়া যায়।যেখানে এই টাকা বিভিন্ন ব্যাংকের শাখা যেমন-এনসিসি ব্যাংকের চারটি হিসাব, সিটি ব্যাংকের তিনটি হিসাব, যমুনা ব্যাংকের দুটি হিসাব, প্রিমিয়ার ব্যাংকের একটি হিসাব, প্রাইম ব্যাংকের একটি হিসাব ও রিলায়েন্স ফাইন্যান্স ও ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেসে রাখা হয়েছে।দুদকে পাঠানো প্রতিবেদনে বলা হয়, ওই ৩৫ কোটি টাকার হিসাব পাঁচটি ব্যাংক, দুটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও স্টক এক্সচেঞ্জভুক্ত চারটি ব্রোকারেজ হাউস থেকে মিলেছে। কিন্তু এমডি হিসেবে মোসলেহ উদ্দীনের প্রতি মাসে এনসিসি ব্যাংক ভবনের মতিঝিল শাখায় বেতন বাবদ জমা হয় ৫ লাখ ৯৯ হাজার ৮৪০ টাকা। একই শাখায় তার নামে আরেকটি হিসাব রয়েছে। এই হিসাবে বিভিন্ন সময়ে পাঁচ হাজার ডলার জমা হয়। আর চলতি বছরের ৩১ জানুয়ারি আট হাজার ডলার জমা হয়।২০১৫ সাল পর্যন্ত যমুনা ব্যাংকে তিনি ডিএমডি হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ২০১৫ সালের ৯ ডিসেম্বর তিনি এনসিসি ব্যাংকে অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে যোগ দেন। পরে ২০১৭ সালের আগস্ট মাসে তিনি এমডির দায়িত্ব পান।