চ্যানেল খুলনা ডেস্কঃ মহানগরীতে সম্প্রতি সময়ে অপহরণ, চাঁদাবাজির মতো ঘটনা বেড়েই চলেছে। পাশাপাশি চুরি, ছিনতাইসহ অপরাধ বাড়ছে। অপরাধ সংগঠনের পর কেএমপির অভিযানে ধরাও পড়ছে অপরাধীরা। নতুন মুখের পাশাপাশি পুরনো অপরাধীরাও রয়েছে সম্প্রতি সংগঠিত কয়েকটি অপরাধের তালিকায়। পূর্বের মামলায় জামিনে আসার পর এ সকল অপরাধীদের গোয়েন্দা নজরদারিতে রাখতে ব্যর্থ হচ্ছে পুলিশ। নগরীতে গত ফেব্র“য়ারি মাসের কয়েকটি ঘটনায় নগরবাসীর মধ্যে এক ধরনের ভয় কাজ করছে। তবে কেএমপির দাবি গোয়েন্দা নজরদারি পূর্বের চেয়ে অনেক শক্তিশালী।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, গত ২৩ ফেব্র“য়ারি সন্ধ্যায় হাবিবুর রহমান (২৮) নামের এক ব্যবসায়ীকে অপহরণের পর আটকে রেখে চাঁদাবাজির ঘটনা ঘটে। অপহরণের পর ওই ব্যবসায়ীকে নগরীর সোনাডাঙ্গা আবাসিক এলাকা ১ম ফেজের একটি বাড়িতে নিয়ে মারপিট করে ৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে অপহরণকারীরা। পরে ওই ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ব্যাংকের তিনটি ডেবিট কার্ড ও পিন নাম্বার ছিনিয়ে নিয়ে ব্যাংকের বুথ থেকে ১ লাখ ৪৪ হাজার টাকা উত্তোলন করে। এছাড়া ওই ব্যবসায়ীর কথা বলে তার প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপকের কাছ থেকে আরও ৫০ হাজার টাকা নেয়। খবর পেয়ে রবিরার রাত সোয়া ৩টার দিকে নগরীর আমতলা মোড় থেকে ওই ব্যবসায়ীকে উদ্ধার করা হয়। একই সাথে এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে ৩ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এ ঘটনায় ব্যবসায়ী হাবিবুর রহমান বাদী হয়ে ৯ জনের নাম উল্লে¬খসহ অজ্ঞাত আরও ৪/৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন। গ্রেফতারকৃতরা হলো শেখপাড়া স্টাফ কোয়ার্টার এলাকার জালাল সর্দারের ছেলে খুলনা জেলা ছাত্রলীগের বহি®কৃত সহ-সভাপতি জুয়েল হাসান আরমান (২৮), সোনাডাঙ্গা আবাসিকের ১নং ফেজের ৪ নম্বর রোডের ৭২/বি বাড়ির বাসিন্দা শেখ আঃ রহমানের ছেলে আহনাফ হোসেন রাজ (৩০) ও সাত্তার বিশ্বাস সড়ক (খোকন সাহেবের গলির) আঃ খালেকের ছেলে মাহমুদ হাসান বাবু (৩২)। এদের মধ্যে জুয়েল হাসান আরমান ২০১৯ সালের ২১ জানুয়ারি ইয়াবাসহ নগরীর জনকণ্ঠ গলিতে গ্রেফতার হয়। সোনাডাঙ্গা থানায় দায়ের হওয়া মামলা আদালতে চলমান রয়েছে। তিনি জামিনে মুক্ত হয়ে ফের অপরাধে জড়িয়ে পড়েন।
গত ২৭ ফেব্র“য়ারি দিবাগত রাত সাড়ে ৯টার দিকে খালিশপুর থানধীন নেভী স্কুল এন্ড কলেজের সামনে বাড়ি যাওয়ার পথে ছিনতাইকারদের কবলে পড়েন জুয়েলার্স ব্যবসায়ী তপন কুমার। এসময় ছিনতাইকারীরা ফাঁকা গুলি করার পাশাপাশি অস্ত্রের মুখে তার কাছ থেকে ৪০ হাজার টাকা ও ৩ ভরি স্বর্নালঙ্কার ছিনিয়ে নেয়। দু’টি মোটরসাইকেলে ৪ জন ছিনতাইকারী ছিলেন বলে জানা ওই ব্যবসায়ী। এ ঘটনায় খালিশপুর থানায় মামলা হয়েছে। তবে এখনো পর্যন্ত অপরাধীরা সণাক্ত বা গ্রেফতার হয়নি বলে জানা গেছে।
গত ২৭ ফেব্র“য়ারি নগরীর সোলাইমান নগর নাজিম সাহেবের বাড়ির ভাড়াটিয়া আসাদুল হক জুয়েল নামের একজন ব্যক্তিকে অপহরণের পর চাঁদাবজির অভিযোগে তিনজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। গোবরচাকা নাহিদের মোড়স্থ শাহবাড়ির মসজিদের পাশে টিকলির বাড়ির নিচ তলার একটি কক্ষে জুয়েলকে আটকে রেখে ওই আসামিরা (মুক্তিপণ) চাঁদা আদায় করে। এ ঘটনায় ভিকটিম বাদি হয়ে মামলা করেছেন। গ্রেফতার তিনজনের কাছ থেকে একটি খেলনা পিস্তল, চাপাতি উদ্ধার করা হয়। গ্রেফতারকৃতরা হলো বানরগাতি মুচিপাড়া ছিদ্দিকীয়া মহল্লার টুটুল সাহেবের বাড়ির ভাড়াটিয়া মোঃ দিপু শেখের ছেলে মোঃ আশিকুর রহমান রিংকু (২৩), বকসিপাড়া ঘোষ বাড়ির মোঃ আকবর আলীর ছেলে মোঃ আলীবিন হোসেন রাজন (২২) ও গোবরচাকা গাবতলা মোজামের বাড়ির ভাড়াটিয়া মোঃ আকতার গাজীর ছেলে মোঃ রিয়াজুল ইসলাম (১৯)।
গত ২৮ ফেব্র“য়ারি র্যাপিড এ্যাকশান ব্যাটালিয়ন র্যাব-৬ সদস্যরা লবণচরা থানাধীন মোহাম্মাদনগর এলাকা থেকে অপহরণের শিকার এক কিশোরীকে নগরীর ফারাজীপাড়া রোড ফুল মার্কেটের নিকট থেকে উদ্ধার করে। এ ঘটনায় জড়িত দু’জন অপহরণকারীকে গ্রেফতার করা হয়। অপহরণকারীরা ভিকটিম কিশোরীকে আটকে রেখে তার পিতা মোঃ রুহুল আমিনের কাছে দশ হাজার টাকা মুক্তিপণ নেওয়ার জন্য সেখানে অবস্থান করছিল। ওই ঘটনায় গ্রেফতারকৃতরা হলো নগরীর গ্রীনল্যান্ড আবাসন এলাকার গফুর মোল্লার ছেলে মোঃ নবী মোল্লা (২৯) ও মোঃ আব্দুল কবির মোল্লা (২১)। তাদের বিরুদ্ধে মামরার দায়ের হয়েছে। ২৮ ফেব্র“য়ারি দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে মেজর মোঃ আনিস-উজ-জামান ও এএসপি মোঃ তোফাজ্জল হোসেনের নেতৃত্বে র্যাব-৬’র একটি দল এ অভিযান পরিচালনা করেন।
খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (মিডিয়া) শেখ মনিরুজ্জামান মিঠু জানান, কেএমপি’র নজরদারি সব সময় শক্তিশালী। অপরাধ সংগঠনের সাথে সাথেই অভিযান পরিচালনা করে অপরাধীদের গ্রেফতার ও আইনে সোপর্দ করা হয় বা হচ্ছে। অপরাধ দমনে নজরদারি আরও বাড়ানো হচ্ছে বলেও জানান তিনি।