অনলাইন ডেস্কঃ নগরীর হরিনটানা থানাধীন মোস্তর মোড় কৈয়া সড়কের সামসুর রহমান মাদ্রাসা সংলগ্ন এলাকায় জালিয়াতির মাধ্যমে অন্যের জমি দখলের অভিযোগ উঠেছে। আর জমি জালিয়াতের মূল হোতা নগরীর দোলখোলা শিতলাবাড়ী মন্দির সংলগ্ন ৯৬ ইসলামপুরের মৃত হাকিম আলী ডিলারের স্ত্রী মিসেস ফরিদা বেগম ও তার পুত্র মনিরুজ্জামান । তার কতিপয় ভুমিদস্যুদের সাথে আতাত করে এই জালিয়াতি করে আসছে । ফরিদা বেগম গত ৯-১১-১৯৭৮ সালে আড়ংঘাটার মৃত ফেরাজতুল্যার শেখের চক হাসানখালী মৌজার আর এস ৪১১ খতিয়ানের ৬৭ এবং ১১৫ নং দাগের ১.৮৪ শতক জমি ৩৯০০০ (উনচল্লিশ হাজার)টাকা পনে খরিদ করেন । যার কবলা দলিল নং ১৮৮১৪/৭৮ ,তারিখ ৯-১১-৭৮ ইং তারিখের ১নং বইর ৩০২ নং ভলিউম, পাতা নং ৩৯-৪৫ লিপিবদ্ধ রয়েছে । পরবর্তীতে ফরিদা বেগম আর এস ৪১১ খতিয়ানের ৬৭ এবং ১১৫ নং দাগের ১.৮৪ শতক জমি ২৭-৫-১৯৯৭ ইং তারিখ ডুমুরিয়া সাব রেজিস্ট্রার অফিসে উপস্থিত থেকে রায়েরমহলের শেখ বজলার রহমানের পুত্র শেখ সামসুর রহমানের নিকট ১.৮৪০০০(এক লক্ষ চুরাশী হাজার) টাকার পনে বিক্রি করেন । যার কবলা দলিল নং ২৭৪৪/৯৭ । ফরিদা বেগম তার খরিদকৃত ১.৮৪ শতক জমি সম্পর্ন বিক্রি করায় তার আর ঐ জমিতে অধিকার থাকেনা । ফরিদা বেগম বয়সের ভারে বৃদ্ধ হওয়ার তার একমাত্র পুত্র মনিরুজ্জামান একটি ভুমি জালিয়াত চক্রের সাথে মিলে এই জালিয়াতির কাজটি করে। ১.৮৪ শতক জমি সামসুর রহমান শেখের কাছে ফরিদা বেগমের বিক্রয়কৃত জমি পুনরায় মনিরুজ্জামান স্থানীয় ভুমিদস্যু চক্রের সাথে আতাত করে গত ৫-৮-২০১৯ তারিখ ডুমুরিয়া সাব-রেজিষ্ট্রি অফিসে পৃথক দুটি কবলা দলিলের মাধ্যমে ৫৯ শতক জমি বিক্রি করেন। যার ক্রেতা হচ্ছেন বিসমিল্লাহ প্রেপার্টিজ এর মালিক সাইফুল ইসলাম ও প্রতিষ্ঠানের অর্থ যোগানদাতা ছিদ্দিকুর রহমান। তারা জমি ক্রয়ের পূর্বে ঐ জমিতে সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দেন । সাইনবোর্ডে লেখা তফসিল ভুক্ত সম্পত্তির ক্রয়সুত্রে মালিক মঞ্জরুল ইসলাম । অথচ গত ৫-৮-২০১৯ তারিখ ডুমুরিয়া সাব-রেজিষ্ট্রি অফিসে পৃথক দুটি কবলা দলিলে দেখা যায় জমির বিক্রেতা ফরিদা বেগম, সাক্ষী তার পুত্র মনিরুজ্জামান এবং জমির ক্রেতা মহানগর আবাসন প্রকল্পের বিসমিল্লাহ প্রোপার্টিজ এর মালিক সাইফুল ইসলাম ও প্রতিষ্ঠানের অর্থ যোগানদাতা ছিদ্দিকুর রহমানের নামে।
এ বিষয়ে মঞ্জরুল ইসলামের সাথে কথা হলে তিনি জানান, আমার নামটি ব্যাবহার করা হয়েছে শুধুমাত্র ব্যাবসায়ীক কারনে। কিন্ত প্রকৃত জমির রেজিস্ট্রি করা হয়েছে বিসমিল্লাহ প্রোপার্টিজ এর নামে। বিসমিল্লাহ প্রোপার্টিজের কতিপয় দালাল এবং ভুমি জালজালিয়াতি চক্রের সক্রিয় সদস্য মনিরুজ্জামান একই জমি দুইবার বিক্রি করে হাতিয়ে নিয়েছেন প্রায় কোটি টাকা । আর জমি ভরাট করে পুনরায় বিক্রির চেষ্টা করতে তৎপর রয়েছে স্থানীয় ভুমিদস্যু চক্রের সদস্যরা । এই চক্রের খপ্পরে পড়ে অনেক সাধারন নিরিহ মানুষ জমি কিনে হয়েছেন নিস্ব।
অপরদিকে, চক হাসানখালী মৌজার আর এস ৪১১ খতিয়ানের ৬৭ এবং ১১৫ নং দাগের ১.৮৪ শতক জমি ফরিদা বেগমের বিক্রিত কবলা দলিল মূলে বর্তমান মালিক রায়েরমহল এলাকার মৃত শেখ সামসুর রহমান । তিনি মৃত্যু বরন করায় ঐ জমির ওয়ারেশ সুত্র মালিক হন তার দুই পুত্র শেখ আবু সাইদ ও গোলাম মোস্তফা, কন্যা মাহমুদা বেগম, মাহফুজা জামান ও মাসুমা খাতুন । ওয়ারেশ সুত্রে প্রাপ্ত জমি হতে শেখ আবু সাইদ ও গোলাম মোস্তফার নামে নিজ নিজ অংশের ৭৯.৪২ শতক জমি গত ১৯-৯-২০১৮ ইং তারিখ আর এস রেকর্ডভুক্ত হয় । অবশিষ্ঠ জমির ওয়ারেশ সুত্রেই মৃত সামসুর রহমানের তিন কন্যার প্রাপ্ত হন এবং সে মোতাবেগ তারা ভোগ দখল করে আসছেন ।
জালিয়াতের মাধ্যম্যে ক্রয়কৃত জমির দখল করে সাইনবোর্ড টাঙ্গিয়ে দেন বিসমিল্লাহ প্রােপার্টিজ এর মালিক সাইফুল ইসলাম ও ছিদ্দিকুর রহমান । তাদের এ অবৈধ জমি দখলের বিরুদ্ধে জমির পৈত্রিকসুত্রের মালিক পক্ষ থেকে ইসতিয়াক আহমেদ হরিনটানা থানায় গত ৭-৮-২০১৯ তারিখ একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন । অভিযোগে ১ও ২ নং বিবাদী করা হয় নগরীর শিতলাবাড়ী মন্দির সংলগ্ন ৯৬ ইসলামপুরের মৃত হাকিম আলী ডিলারের স্ত্রী মিসেস ফরিদা বেগম ও তার একমাত্র পুত্র ভুমি জালিয়াত চক্রের মূল হোতা মনিরুজ্জামান ৩ ও ৪ নং বিবাদী জমি দখলকারী সাইফুল ইসলাম ও শেখ মোঃ সিদ্দিক হেলালকে। অভিযোগে উল্লেখ করা হয় বিবাদীরা পরস্পর যোগসাজসে তার শাশুরীর পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া ৫৯ শতক জমি জাল জালিয়াতির মাধ্যমে জোর পূর্বক দখল করে নেয় এবং জমি দখলে বাধা দিলে মনিরুজ্জামান, সাইফুল ইসলাম, শেখ মোঃ সিদ্দিক হেলালের সহযোগিরা তাকে প্রাননাসের হুমকি প্রদান করে ।
এ অভিযোগের তদন্ত কর্মকর্তা হরিনটানা থানার এস আই দেবব্রত জানান ঘটনা তদন্ত করা হচ্ছে । তদন্তে সত্যতা পেলে আইনগত ব্যাবস্থা নেয়া হবে ।
জেলা রেজিষ্ট্রি অফিসের এক কর্মকর্তা কাগজপত্র দেখে হতবাগ হয়ে জানান, বর্তমান ডিজিটাল যুগে এত রিতিমত দিনদুপুরে প্রকাশ্যে ডাকাতি। একই জমি ৯৭ সালে বিক্রি করে আবার সেই জমি ২০১৯ সালে কিভাবে বিক্রি করতে পারে। তিনি ভুক্তভোগিদের লিখিত অভিযোগ পেলে এই জালিয়াত চক্রের সাথে যারাই জড়িত থাক তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যাবস্থা নেয়া হবে ।
উল্লেখঃ জমি দখলের সাথে ঐ অঞ্চলের একাধিক ব্যাক্তি ভুমি দখল ও ভুমি জালিয়াতি চক্রের সাথে জড়িতরা দির্ঘদিন যাবত সাধারন মানুষের সাথে জমি ক্রয় বিক্রয়ের নামে প্রতারনা করে আসছে। এই জমি জালিয়াত চক্রের হোতাদের মূখোষ উন্মোচনে একটি অনুসন্ধানী ভিডিও প্রতিবেদন জালিয়াত চক্রের অন্তরাল পর্বে। চোখ রাখুন চ্যানেল খুলনায় ।