দক্ষিণাঞ্চলের জলাবদ্ধতা সমস্যা সমাধানে সঠিকভাবে নদী খনন, নদী তীরের অবৈধ দখল উচ্ছেদ, টিআরএম (জোয়ারাধার) বাস্তবায়ন, প্রকল্পে স্থানীয় মানুষের লোকজ্ঞান কাজে লাগানো, ভবদহ জলাবদ্ধতার সমাধান, নদী সংশ্লিষ্ট কাজের সমন্বয়, জলাভূমি ও নদীর প্লাবনভূমিকে পৃথক করে দেখানো নদী খনন সংশ্লিষ্ট প্রকল্পের জন্য জরুরি বিষয়। আজ (সোমবার) খুলনা জেলা প্রশাসকের সম্মেলনকক্ষে অনুষ্ঠিত ‘খুলনা বিভাগের নদীসমূহের নাব্যতা বৃদ্ধি, জলাবদ্ধতা হ্রাস, জলাভূমি বাস্তু পুনরুদ্ধার, সেচ ও ল্যান্ডিং সুবিধাদি বৃদ্ধি করে নদী ব্যবস্থাপনার সম্ভাব্যতা যাচাই’ শীর্ষক সমীক্ষা বিষয়ক কর্মশালায় অংশগ্রহণকারীরা এই অভিমত তুলে ধরেন।
খুলনা বিভাগীয় প্রশাসনের সহযোগিতায় বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) এ কর্মশালার আয়োজন করে। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন খুলনা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক।
প্রধান অতিথির বক্তৃতায় সিটি মেয়র বলেন, নদীমাতৃক দেশ হওয়া আমাদের জন্য গর্বের। তবে জোয়ার-ভাটা, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে নদী ভয়ংকর হয়ে উঠে। নদীর তলদেশ উঁচু হয়ে যাওয়ায় নদী খননের বিকল্প নেই। তবে নদীর উৎস হতে পানির পর্যাপ্ত প্রবাহ না থাকলে খননে তেমন লাভ হয় না। অনেক আন্তর্জাতিক নৌরুট সিলটেড এবং নদীর শাখা ও খাল বন্ধ হয়ে আছে। নদী খননের বালি ও মাটির সঠিক ব্যবস্থাপনা করা প্রয়োজন। অতীতে সরকারি খাল লিজ দিয়ে নাব্যতা নষ্ট করা হয়েছে। নদীর নাব্যতা রক্ষায় খননের কাজকে সততার সাথে বাস্তবায়ন করা আবশ্যক। জোয়ার-ভাটা ফিরিয়ে আনতে পারলে নদী বেঁচে থাকবে। উন্নয়ন কাজ বাস্তবায়নে জনগণের কথা মাথায় রাখতে হবে।
খুলনার বিভাগীয় কমিশনার ড. মুঃ আনোয়ার হোসেন হাওলাদারের সভাপতিত্বে কর্মশালায় বিশেষ অতিথি ছিলেন বিআইডব্লিউটিএ’র চেয়ারম্যান কমডোর গোলাম সাদেক, খুলনার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হেলাল হোসেন এবং পুলিশ সুপার এসএম শফিউল্লাহ। স্বাগত জানান বিআইডব্লিউটিএ’র প্রধান প্রকৌশলী (ড্রেজিং) মোঃ রকিবুল ইসলাম তালুকদার। কর্মশালায় সমীক্ষা প্রতিবেদন প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান ‘ সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্টাল এন্ড জিওগ্রাফিক ইনফরমেশন সার্ভিসেস (সিইজিআইএস) এর পক্ষ হতে খসড়া চূড়ান্ত প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন জাকিয়া আক্তার। কর্মশালায় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এলএ) মোছা: শাহানাজ পারভীন, খুলনা প্রেসক্লাবের সভাপতি এসএম নজরুল ইসলাম, রূপান্তরের নির্বাহী পরিচালক স্বপন কুমার গুহ, ভৈরব নদীর রক্ষা কমিটির আহবায়ক এনামুল হক বাবুল, নজরুল ইসলাম মল্লিক, ইকবাল কবীর জাহিদ প্রমুখ উন্মুক্ত আলোচনায় অংশ গ্রহণ করেন।
সমীক্ষা প্রতিবেদনে বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন নদীর নাব্যতা, প্রয়োজনীয় খননের পরিমাপ, নৌপথে পুনজ্জীবন, খননকৃত মাটির ব্যবস্থাপনা, নদীর তীরবর্তী লঞ্চ-খেয়াঘাট উন্নয়ন, চারটি পর্যটন কেন্দ্রের ঘাট পর্যটন বান্ধব করে উন্নয়নসহ প্রকল্পের পরিবেশগত প্রভাব তুলে ধরা হয়।
কর্মশালায় জেলা প্রশাসকের সম্মেলনকক্ষে ও অনলাইনে জুম প্রযুক্তিতে খুলনা বিভাগের ১০ জেলার জেলা প্রশাসক, সরকারি-বেসরকারি দপ্তরের কর্মকর্তা, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, সুশীলসমাজের প্রতিনিধিসহ গণমাধ্যমকর্মীরা অংশ নেন।