চ্যানেল খুলনা ডেস্কঃতেরখাদা উপজেলার পহড়ডাঙ্গা গ্রামে নৃশংসভাবে নাঈম শেখকে হত্যার দায় অন্যদের ঘাড়ে চাপিয়ে দিয়ে নিজে নিশ্চিন্ত থাকতে মহাপরিকল্পনা করেন ছাগলাদহ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এস এম দ্বীন ইসলাম। গতকাল সোমবার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ মনিরুজ্জামানের আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে এ তথ্য জানান। এছাড়া চেয়ারম্যান দ্বীন ইসলামের দুই মেয়ে দিলারা বেগম ও খালেদা বেগম এবং বড় বোন নাঈম শেখ হত্যা মামলার বাদি মাফুজা বেগমকে মামলা তুলে নেয়ার জন্য ভয়-ভীতি ও হুমকি দিচ্ছেন। এ ছাড়াও চেয়ারম্যান এস এম দ্বীন ইসলাম হত্যাকা-ের সাথে জড়িত নয় মর্মে সংবাদ সম্মেলন করে মিডিয়াকে জানানোর জন্য চাপ প্রয়োগ করছে দুই মেয়ে ও বড়বোন। হুমকির ঘটনায় নাঈম শেখের ভাই জসিম শেখ রোববার তাদের পরিবারের সদস্যদের জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে তেরখাদা থানায় একটি জিডি (নং-১১৭০) করেন বলে জানান মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা খুলনা জেলা ডিবির এসআই মুক্ত রায় চৌধুরী পিপিএম।
আদালতের স্বীকারোক্তি ও তদন্ত কর্মকর্তা সূত্র জানায়, নাঈম শেখের ভগ্নিপতি আশরাফুল ইসলাম ওরফে আশু, মামা হাবিবুর রহমান, চাচা তাজ শেখ ও নিকট প্রতিবেশী কামরুল হাসান গতকাল সোমবার খুলনার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ মনিরুজ্জামানের আদালতে ১৬৪ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে বলেন, হত্যাকা-ের পরের দিন চেয়ারম্যান এস এম দ্বীন ইসলামের দুই সহযোগী কেরামত ও খায়রুল একটি মটরসাইকেলে নাঈম শেখের চাচা তাজ শেখকে জোরপূর্বক ধরে নিয়ে তেরখাদা থানায় যায়। থানার সামনে সহযোগীদের নিয়ে আগেভাগে অপেক্ষা করছিলের চেয়ারম্যান দ্বীন ইসলাম। দ্বীন ইসলাম আগে থেকে দুই পাতার একটি এজাহার তৈরী করে রাখেন। তাজ শেখ থানার সামনে গেলে তাকে দিয়ে জোর করে এজাহারে স্বাক্ষর করে মামলা রেকর্ডের জন্য থানায় জমা দেন দ্বীন ইসলাম। পরিবারের সদস্যদের সাথে কথা না বলে এজাহারে স্বাক্ষর করবেন না জানালে তাজ শেখকে তার পরিবারের সদস্যদের ক্ষতি হবে বলে হুমকি দেন। ফলে বাধ্য হয়ে তাজ শেখ চেয়ারম্যান দ্বীন ইসলামের মনগড়া ২৬জন আসামীর নাম উল্লেখ এবং ৮/৯জন অজ্ঞাত ব্যক্তিকে আসামী করে তৈরী করা এজাহারে স্বাক্ষর করতে বাধ্য হন। পূর্ব শত্রুতা ও প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে বেছে বেছে ২৬জনকে আসামী করেন চেয়ারম্যান দ্বীন ইসলাম। এ ঘটনাটি জানতে পেরে নিহত নাঈম শেখের মা মাফুজা বেগম, ভাই জসিম শেখ, ভগ্নিপতি আশরাফুল ইসলাম ওরফে আশু, মামা হাবিবুর রহমান ও বোন ঝুমুর তেরখাদা থানায় গিয়ে হাজির হন। সেখানে গিয়ে তারা বলেন, মামলার এজাহার আমরা পরিবারের পক্ষ থেকে দেব। ভয়-ভীতি দেখিয়ে দায়ের করা মামলার এজাহার আমরা মানব না। পরে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে তেরখাদা থানার ওসি আলাপ করে তাজ শেখের স্বাক্ষরিত এজাহার বাদ দিয়ে নাঈমের মা মাফুজা বেগম বাদি হয়ে ১৭জনের নাম উল্লেখ এবং ৮/৯জনকে অজ্ঞাত আসামী করে মামলা দায়ের করেন। মাফুজা বেগমের এজাহার রেকর্ড হওয়ার সংবাদ জানতে পেরে ক্ষুব্ধ হন চেয়ারম্যান দ্বীন ইসলাম। তিনি তখন সাথে সাথে ঢাকার পথে থাকা তেরখাদার বহরডাঙ্গা গ্রামের রুমিকে মোবাইল ফোনে কল দিয়ে বলেন একটি টাকাও খরচ করা লাগবে না, পুরো ২০হাজার টাকা নিয়ে তুমি খুলনায় চলে আস। নাঈমের বাবা পিরু শেখ বাঁচুক মরুক দেখার দরকার নেই। নিজে নিরাপরাধ এবং নাঈমদের পরিবারের কাছে ভাল সাজার জন্য গুরুতর আহত পিরু শেখকে উন্নত চিকিৎসার জন্য রুমিকে সাথে দিয়ে এবং ২০হাজার টাকা দিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান। পিরু শেখ এখনো হাসপাতালে অচেতন অবস্থায় চিকিৎসাধীন রয়েছেন। কিন্তু পরিস্থতি অন্যদিকে মোড় নিলে চেয়ারম্যান দ্বীন ইসলাম রুমিকে টাকাসহ ফিরিয়ে আনেন। চেয়ারম্যান দ্বীন ইসলামের তৈরী করা এবং তাজ শেখের স্বাক্ষরিত দুই পাতার এজাহার গতকাল সোমবার জব্দ করে আদালতের কাছে জমা দেয়া হয়েছে।
এদিকে হত্যাকা-ের ঘটনার ঘটার ১০ মিনিটের মধ্যে নাঈমদের বাড়িতে হাজির হন চেয়ারম্যান দ্বীন ইসলাম। নাঈম শেখদের বাড়ি থেকে চেয়ারম্যান দ্বীন ইসলামের বাড়ি কমপক্ষে ২কিলোমিটার হবে বলে জানান তদন্ত কর্মকর্তা। যাদের বাড়ি দুইশ’ গজের মধ্যে তারা পৌঁছার আগে চেয়ারম্যান দ্বীন ইসলাম একজন গ্রাম্য ডাক্তারকে সাথে নিয়ে নিহত নাঈমদের বাড়িতে হাজির হন। যা’ তদন্তকারী সংস্থাকে ভাবিয়ে তুলেছে বলে মনে করা হচ্ছে।
এদিকে নাঈম শেখ হত্যা মামলার তিন আসামী অহিদুল, জসিম ও হাবিবুর রহমানকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দুই দিনের রিমান্ড গতকাল সোমবার থেকে শুরু হয়েছে। এ তিন আসামী বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছে বলে তদন্ত কর্মকর্তা সূত্রে জানা গেছে। অপরদিকে ছাগলাগহ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এস এম দ্বীন ইসলাম এবং তার গাড়ী চালক কেরামত মল্লিক (৩২), মাহবুর শেখ (৪২) ও খায়রুল শেখের (৩০) ফের ৭দিনের রিমান্ড শুনানী আজ মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত হবে।
মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণে জানা যায়, গত ৬ আগস্ট দিবাগত গভীর রাতে তেরখাদা উপজেলার ছাগলাদাহ পহড়ডাঙ্গা গ্রামে জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে ঘরের সিঁদ কেটে নাঈম শেখকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। এসময় বাধা দিতে গেলে তার পিতা পিরু শেখ গুরুতর জখম হন। তিনি বর্তমানে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এঘটনায় ৮আগস্ট পিরু শেখের স্ত্রী মাফুজা বেগম ১৭জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত ১০/১২ জনের বিরুদ্ধে তেরখাদা থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলাটি বর্তমানে খুলনা জেলা ডিবির পক্ষ থেকে তদন্ত করা হচ্ছে।