বাংলাদেশের বন্যা পরিস্থিতি আরো ভালোভাবে বুঝতে চলতি মাসের প্রথম দিন দুটি ছবি প্রকাশ করে মার্কিন মহাকাশ গবেষণা প্রতিষ্ঠান নাসা। স্যাটেলাইটের মাধ্যমে তোলা এই ছবিতে জুন-জুলাই মাসের ভয়াবহ পরিস্থিতি উঠে এসেছে। নাসার ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দক্ষিণ এশিয়ার আরও কয়েকটি দেশে বন্যা হলেও বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে পড়েছে।
দুটি ছবির একটি জুনের দুই তারিখের, আরেকটি ২৫ জুলাইয়ের। ছবিতে বোঝা যাচ্ছে ভূমি এবং পানির দূরত্ব প্রায় মিলিয়ে গেছে।
২৫ জুলাইয়ের ছবিতে ‘ফলস-কালারে’ পানি ফুটে উঠেছে নেভি-ব্লু এবং কালো রংয়ের আবরণে। আরেকটি ছবিতে আবার পানির স্বাভাবিক রং বোঝা গেছে। বাংলাদেশে এ বছর ১৯৮৮ সালের মতো দীর্ঘস্থায়ী বন্যা হচ্ছে। বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের হিসাবে, দেশের বিভিন্ন নদ-নদীর ১০১টি পয়েন্টের মধ্যে ৪৯টি পয়েন্টে পানি বাড়ছে। আর বিপৎসীমার ওপর দিয়ে যাচ্ছে ১৬টি পয়েন্টে। কুড়িগ্রামে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি সর্বোচ্চ বিপৎসীমার ৫১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে গত মাসের শুরুতে।
দেশে সাধারণত বছরে এক থেকে তিনটি বন্যা হয়ে থাকে। জুনের শেষে বা জুলাইয়ের মাঝামাঝি সময়ে যে বন্যা হয়, তা প্রায়ই এক সপ্তাহ থেকে ১০ দিন স্থায়ী হয়। এবার চট্টগ্রাম, পদ্মার দুই পাড়ের চার জেলা, উত্তরাঞ্চলের আত্রাই অববাহিকায় বন্যার পানি চলে এসেছে। যার কারণে সহজে কমার লক্ষণ নেই।
প্রসঙ্গত, দেশে বন্যার পানি কমতে শুরু করলেও নদী ভাঙন এবং ঘরবাড়ি ভেঙে যাওয়া মানুষ চরম কষ্টে আছেন। অনেক মানুষ এখনো আশ্রয় কেন্দ্র এবং বাঁধে অবস্থান করছেন। ত্রাণ সহায়তাও অপ্রতুল।
খাবার পানির সংকট তীব্র হচ্ছে। বন্যা কবলিত এলাকায় স্যানিটেশন ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। দেখা দিয়েছে গো-খাদ্যের সংকট। নদী ভাঙন নতুন সংকট তৈরি করছে। এবার ২৪ হাজার ১৪০ বর্গ কিলোমিটার এলাকা বন্যা প্লাবিত হয়েছে। এপর্যন্ত বন্যায় মারা গেছেন ৪১ জন।
মোট ৩৩ জেলা এবার বন্যা কবলিত হলেও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয় এখনো ১৭টি জেলাকে বন্যা কবলিত বলছে। তাদের হিসেবে এখনো প্রায় ৭০ হাজার মানুষ আশ্রয় কেন্দ্রে অবস্থান করছেন। ৭৪ হাজারেরও বেশি গবাদি পশু আশ্রয় কেন্দ্রে রাখা হয়েছে। ৪০৯টি মেডিকেল টিম কাজ করছে।
এবার বন্যায় মোট ক্ষতিগ্রস্ত জেলার সংখ্যা ৩৩। উপজেলা ১৬১। ইউনিয়ন এক হাজার ৬২। পানিবন্দি পরিবারের সংখ্যা নয় লাখ ৫৩ হাজার ৯৪০। ক্ষতিগ্রস্ত লোকের সংখ্যা ৫৫ লাখ ১৫ হাজার ২৭ জন।