চ্যানেল খুলনা ডেস্কঃবর্ধিত বেতন-ফি প্রত্যাহারসহ পাঁচ দফা দাবিতে এবার নির্ঘুম আন্দোলন শুরু করেছে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের (খুবি) শিক্ষার্থীরা। বুধবার সারা রাত প্রচণ্ড শীতের মধ্যে জেগেই তারা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ভবনের সামনে অবস্থান নেয়। সকালে ঘন কুয়াশা উপেক্ষা করে ক্যাম্পাসে আন্দোলন অব্যাহত রেখেছে তারা। দাবি বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে শিক্ষার্থীরা।
সূত্র মতে, বুধবার সকাল ১০টা থেকে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের হাদি চত্ত্বরে সমবেত হয়ে এ বিক্ষোভ শুরু করেন। পরে দুপুর ১২টায় তারা শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ প্রশাসনিক ভবনের প্রধান ফটক অবরুদ্ধ করে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন।
দুপুর ১টায় প্রেস ব্রিফিং করে দাবি বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত ওই কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেয়। বিকেলে শিক্ষার্থীরা চোখে কালো কাপড় বেঁধে ‘পরিণতি’ নামে প্রতীকী পথ নাটক করেন। এরপর সন্ধ্যায় বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালে মোমবাতি প্রজ্জ্বলন করেন। রাত ৮টায় তারা ঢোল-তবলা নিয়ে বিদ্রোহের গান গেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন দুর্নীতির তথ্য প্রকাশ করে। রাত ১২টায় তারা কলা-রুটি খেয়ে কন কনে শীত উপেক্ষা করে রাতে জেগে এ কর্মসূচি অব্যহত রাখেন।
শিক্ষার্থীদের পাঁচ দফা দাবিগুলো হলো- আবসন সঙ্কট দুরীকরণ, বেতন ফিসের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি ও বেতন কমানো, দ্বিতীয় পরীক্ষণের ব্যবস্থা ও কোডিং পদ্ধতির ব্যবস্থাকরণ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা পরিপন্থী অধ্যাদেশের সংস্কার তথা সাংস্কৃতিক অবরুদ্ধতা থেকে মুক্তি ও মুক্তচিন্তা বিকাশে অধ্যাদেশের ব্যবস্থাকরণ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামোগত যেসব দুর্নীতির তথ্য পাওয়া গেছে তার প্রতিকার করা।
এদিকে শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন দাবিসহ সামগ্রিক বিষয় খতিয়ে দেখে সুপারিশ প্রদানে ডিনদের সমন্বয়ে নয় সদস্যের এক কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে জরুরি ভিত্তিতে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য নির্দেশনা দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
সন্ধ্যায় তদন্ত কমিটির সদস্যরা আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলতে গেলে শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের লিখিত বক্তব্য না আসা পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন। শিক্ষার্থীরা জানান, গত কয়েক বছরে বেতন ফি অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। তারা নতুন টার্ম রেজিষ্ট্রেশনের পূর্বেই বেতন-ফি সহনীয় মাত্রায় কমানোর দাবি জানান। এ সময় রেজিষ্ট্রেশন ফি কমিয়ে সহনীয় মাত্রায় আনা না হলে তারা রেজিষ্ট্রেশন প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করবে না বলেও জানান।
এছাড়া আবাসন সংকট নিরসনে কত দিনের মধ্যে নতুন হল হবে তা লিখিত আকারে জানানোর পাশাপাশি নতুন হল নির্মাণের আগে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে হোস্টেল ব্যবস্থার দাবি জানান তারা। পাশাপাশি পরীক্ষার খাতা দ্বিতীয় পরীক্ষক দ্বারা মূল্যায়ন এবং প্রয়োজন অনুসারে তৃতীয় পরীক্ষণের ব্যবস্থা করার পাশাপাশি পরীক্ষার খাতায় কোডিং পদ্ধতি চালু করার দাবি জানান। এর পাশাপাশি সাংস্কৃতিক কার্যক্রম ও বিনোদন ব্যবস্থার আয়োজন ও ম্যাগাজিন, বুলেটিন, পোস্টার প্রকাশনায় শিক্ষার্থীদের স্বাধীনতা ও সম্পৃক্ততা নিশ্চিতের দাবি জানায় শিক্ষার্থীরা।
এছাড়া গল্প, উপন্যাস, জার্নাল, একাডেমিক গ্রন্থসহ সব ধরনের বই বৃদ্ধি করার দাবি জানিয়ে সার্বক্ষণিক চিকিৎসা সেবা নিশ্চিতে ২৪ ঘণ্টা চিকিৎসক রাখার পাশাপাশি মেডিক্যালে প্রয়োজনীয় সকল সরঞ্জাম কেনার দাবি জানানো হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ফায়েক উজ্জামান শিক্ষার্থীদের রেজিষ্ট্রেশন প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণের আহ্বান জানিয়ে বলেন, অন্য সকল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের বেতন-ফি তালিকা সংগ্রহের কাজ চলছে। যদি কোন অসামাঞ্জস্যতা পাওয়া যায় তবে অবশ্যই প্রত্যেককে অতিরিক্ত টাকা ফেরত দেওয়া হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কার্যক্রম সুষ্ঠভাবে পরিচালনা করার জন্য কমিটি যেসব সুপারিশ করবে তা দ্রুততম সময়ে বাস্তবায়ন করা হবে।
উল্লেখ্য, গত ১৩ নভেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সমস্যা তুলে ধরে শিক্ষার্থীরা ছাত্র-বিষয়ক পরিচালকের মাধ্যমে উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেন। এরপর ২১ নভেম্বর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শিক্ষার্থীদের সব সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দেয়। পরে প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রত্যাশিত সাড়া না পাওয়ায় শিক্ষার্থীরা আন্দোলন শুরু করেন।